• সোমবার , ৬ মে ২০২৪

নকল ডিম-রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে


প্রকাশিত: ২:০৬ পিএম, ২৮ জুলাই ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৮ বার

egg--1নীপা খন্দকার.ঢাকা:  নকল ডিম-রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে। দামে কম হওয়ায় বেশি লাভের আশায় পাইকারি হারে নিয়মিতই এই ডিম দোকানে তুলছেন দোকানিরা।অভিযোগ আছে, রাজধানীর মোহাম্মাদপুর ও আদাবর থানার নবদয় হাউজিং, ঢাকাউদ্যান, বসিলা, শনিরবিল, টাউনহল, কাটাসুর, রায়ের বাজার, বিজলীমহল্লাসহ নানা মহল্লাতে নকল ডিমে সয়লাব হয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মাদপুর এলাকার বেশ কিছু দোকানে নিয়মিত বিক্রি করা হচ্ছে নকল ডিম। বিজলী মহল্লাহ এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় মসজিদ মার্কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এই নকল ডিম। সোহাগ নামের স্থানীয় একজন বলেন, এই মার্কেটের প্রায় সব দোকানেই বিক্রি করা হচ্ছে নকল ডিম। এই ডিম হালকা চাপ লাগলেই ভেঙ্গে যায়।

egg--22এলাকাবাসীদের একজন ইমন, একটি মুদি দোকান দেখিয়ে বলেন, কয়েকদিন আগে এই দোকানীর সঙ্গে রিপন নামের একজনের ডিম নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। রিপনের অভিযোগ ছিল দোকানী তার কাছে নকল ডিম বিক্রি করেছে। প্রমাণ হিসেবে সে একটি ডিম ভাঙলে দেখা যায় ঐ ডিমের কুসুম অস্বাভাবিক লাল এবং ডিম ভাঙতেই কুসুম চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ঐ দোকানী ডিম ফেরত রাখতে বাধ্য হয়।

সরেজমিনে ঐ মার্কেটের ডিম সাপ্লাইকারির সঙ্গে যোগাযোগের জন্যে দোকানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ডিমসাপ্লাইকারির ফোন নাম্বারও দিতে নারাজ। পরে মোহাম্মাদপুর এলাকার একজন ডিমসাপ্লাইকারির সঙ্গে যোগাযোগ করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমরা বাজার দরের একটু কমে এই ডিম সাপ্লাই দিয়ে থাকি। তবে আমাদের সব ডিমই নকল নয়। দোকানগুলোতে আমারা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ নকল ডিম সাপ্লাই দিয়ে থাকি। আর বাকি ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ডিমই আসল।

যয়ফবভধঁষঃবাশবাড়ি এলাকার একজন ডিম বিক্রেতা হোসেন। নকল ডিম বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অভিযোগের কথা আমরাও শুনেছি। তবে আমার দোকানের ডিম একটিও নকল নয়। কারণ ফেসবুকে নিয়মিতই নকল ডিমের ব্যাপারটা আমার চোখে পড়ে। তাই ডিম নেবার সময় আমি ভালো করে বেছে বেছে ও দেখে ডিম রাখি।

egg-3333ঐ এলাকার আরো একজন দোকানী হৃদয় বলেন, সাধারণত বর্ষাকালে ডিমে একটু সমস্যা হয়। কুসুমগুলো ছড়িয়ে পড়ে। তার মানে এই নয় যে ডিম নকল।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট মর্নিং নিউজ এজেন্সিসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি গণমাধ্যম সম্প্রতি জানিয়েছে যে, মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুনসহ ওই দেশের বিভিন্ন এলাকায় সীমান্তের চোরাপথে চীন থেকে কৃত্রিম ডিম পাচার হচ্ছে। চোরাপথে সেই ডিম ভারতসহ আশপাশের অন্যান্য দেশেও সয়লাব হয়েছে। যা দেখতে একদম হাঁস-মুরগির ডিমের মতো।

২০০৪ সাল থেকেই তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম ডিম। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘দ্য ইন্টারনেট জার্নাল অফ ট·োকোলজি’তে কৃত্রিম ডিম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। সেখানে বলা হয়েছে কৃত্রিম ডিমে কোনও খাদ্যগুন নেই। এই ডিম উল্টো মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। কৃত্রিম ডিম তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বনেট, স্টার্চ, রেসিন, জিলেটিন মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন এই ধরনের ডিম খেলে স্নায়ুতন্ত্র ও কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ফুসফুসের ক্যান্সারসহ জটিল রোগের কারণ।

কীভাবে চিনবেন নকল ডিম?

কৃত্রিম ডিম অনেক বেশি ভঙ্গুর। এর খোসা অল্প চাপেই ভেঙে যায়। এই ডিম সিদ্ধ করলে কুসুম বর্ণহীন হয়ে যায়। ভাঙার পর আসল ডিমের মতো কুসুম এক জায়গায় না থেকে খানিকটা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় পুরো কুসুমটাই নষ্ট ডিমের মত ছড়ানো থাকে। কৃত্রিম ডিম আকারে আসল ডিমের তুলনায় সামান্য বড় এবং এর খোলস খুব মসৃণ হয়। খোসায় প্রায়ই বিন্দু বিন্দু ফুটকি দাগ দেখা যায়। রান্না করার পর এই ডিমে অনেক সময় বাজে গন্ধ হয় কিংবা গন্ধ ছাড়া থাকে। আসল কুসুমের গন্ধ পাওয়া যায় না।

নকল ডিমকে সাবান বা অন্য কোন তীব্র গন্ধ যুক্ত বস্তুর সাথে রাখা হয়, ডিমের মাঝে সেই গন্ধ ঢুকে যায়। রান্নার পরেও ডিম থেকে সাবানের গন্ধই পাওয়া যায়।

নকল ডিমের আরেকটি উল্লেখ্য যোগ্য লক্ষণ হলো ডিম দিয়ে তৈরি খাবারে এটা ডিমের কাজ করে না। যেমন পুডিং বা কাবাবে ডিম দিলেন বাইনডার হিসাবে। কিন্তু রান্নার পর দেখবেন কাবাব ফেটে যাবে, পুডিং জমবে না।

নকল ডিমের আকৃতি অন্য ডিমের তুলনায় তুলনামূলক লম্বাটে ধরণের হয়ে থাকে। নকল ডিমের কুসুমের চারপাশে রাসায়নিকের পর্দা থাকে বিধায় অক্ষত কুসুম পাওয়া গেলে সেই কুসুম কাঁচা কিংবা রান্না অবস্থাতে সহজে ভাঙতে চায় না।