• রোববার , ১২ মে ২০২৪

‘জামায়াতের বিচার প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ঠিক হয়নি’


প্রকাশিত: ৫:২০ এএম, ২ জুন ১৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৫ বার

স্টাফ রিপোর্টার: ২জুন ২০১৪: এবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে বক্তব্যে দিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।শফিক আহমেদ বলেন, ‘জামায়াতের বিচার প্রসঙ্গে এ ধরনের কথা বলা (আইনমন্ত্রীর বক্তব্য) ঠিক হয়নি৷ বিদ্যমান আইনে জামায়াতের বিচার করা যায় কি যায় না, এ বিষয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না৷’ সাবেক আইনমন্ত্রী আরও বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে দোষী প্রমাণিত হওয়া নাৎসি বাহিনীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ যদি ট্রাইব্যুনালের রায়ে সংগঠন অপরাধী প্রমাণিত হয়, তখন সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব৷

মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার বিদ্যমান আইনে সম্ভব কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই৷সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ  রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যমান আইনে জামায়াতের বিচার ও শাস্তি দেওয়া যায় কি না, এটা বলার সম্পূর্ণ এখতিয়ার আদালত বা ট্রাইব্যুনালের৷ ট্রাইব্যুনালের সামনে যদি মামলা যায়, রাষ্ট্রপক্ষ তথ্য-উপাত্ত বা প্রমাণপত্র দাখিল করলে ট্রাইব্যুনাল আইনানুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন বিচার করা যায় কি না বা করা গেলে কীভাবে করা যায়।

এরপর অপরাধী প্রমাণিত হলে সংগঠনকে শাস্তি দেওয়া যায় কি না বা কী শাস্তি দেওয়া যায়, তা ট্রাইব্যুনাল ঠিক করবেন। বাইরে থেকে মতামত দিয়ে এ বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করার প্রয়োজন নেই, উচিতও নয়। বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে৷

শফিক আহমেদ বলেন, গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনেরও বিচারের বিধান যুক্ত হয়৷ ওই সময় আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব সংগঠন মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে যেমন: আলবদর, আলশামস, রাজাকার প্রভৃতি তাদের এ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা যাবে৷ যদি তদন্তে এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, জামায়াতে ইসলামীও মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তবে এই সংগঠনও শাস্তি পাবে৷

বর্তমান আইনমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুসারে, অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা করা আপাতত সম্ভব নয়৷ এ বক্তব্যের পেছনে তিনি তিনটি যুক্তি দেন৷

প্রথমত, সংশ্লিষ্ট আইনে অপরাধী সংগঠনের শাস্তির বিধান নেই৷ দ্বিতীয়ত, ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন জামায়াতের নিবন্ধনের মামলায় তার প্রভাব পড়তে পারে৷ তৃতীয়ত, অন্যান্য আইনে অপরাধী সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শাস্তির বিধান রয়েছে৷ ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের অপরাধী সংগঠন চালানোর দায়ে আবার সাজা দেওয়া হলে তা আগের সাজার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না, সেটাও বিবেচনা করতে হবে৷
আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অনেকেই৷ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কিবর বলেন, দেশে-বিদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর কোনো ধারণাই নেই৷ শুক্রবার আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে নিন্দা জানিয়ে যুক্ত বিবৃতি দেয় নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী ও উপদেষ্টা পরিষদ৷ আর গণজাগরণ মঞ্চের ইমরানপন্থী অংশ বলে, আইনমন্ত্রী বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে ২ জুন তাঁরা আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন৷ কিন্তু শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জামায়াতের বিচার নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক৷

প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের জন্য আইনমন্ত্রীই দায়ী, কারণ প্রধানমন্ত্রী আইনজ্ঞ নন৷ সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেক ভালো জানেন, কারণ তিনি ২২ বছর ধরে এর সঙ্গে আছেন৷
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম  সুপ্রিম কোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি (আইনমন্ত্রী) আইনগত বিষয়ে বলেছেন। দেখা গেল, অনেক উদ্যোগ নিয়ে যাওয়া হলো কিন্তু দলটিকে বন্ধ বা জরিমানার আদেশ দেওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত এ রকম হলে সেটা ভীষণ বেকায়দার হবে। তাই দেখে-শুনে তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা তিনি বলেছেন।
শফিক আহমেদের গতকালের মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমীরুল ইসলাম৷  তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই আইনের ব্যাখ্যা একেক রকমভাবে করি৷ আইনমন্ত্রী তাঁর মতো করেছেন, আমি আমার মতো করব৷ কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাইব্যুনাল৷’
আমীরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান আইনেই জামায়াতের বিচার সম্ভব৷ জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট অনুসারে “পারসন” (ব্যক্তি) বলতে সংগঠন বা কোম্পানিকেও বোঝায়৷ ফলে ট্রাইব্যুনালের আইনের ২০(২) ধারায় উল্লেখিত “পারসন”-এর সংজ্ঞার মধ্যে সংগঠনও পড়ে৷ আর আইন অনুসারে সংগঠনকে যেকোনো ধরনের সাজা ট্রাইব্যুনাল দিতে পারবেন৷’ জামায়াতের নিবন্ধন মামলার সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের মামলার কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়৷ একটি হলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত নির্বাচন করতে পারবে কি না, আরেকটি হলো জামায়াত আদৌ রাজনীতি করতে পারবে কি না৷ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নাগরিকত্বের মামলা আর খুনের মামলা এক জিনিস হতে পারে না৷