• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

জঙ্গি নায়ক আবুল কাশেমের গোপন আন্ডারওয়ার্ল্ড অর্থ কানেকশন ফাঁস


প্রকাশিত: ১২:৩৯ এএম, ৫ মার্চ ১৭ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২১৭ বার

ssss

বিশেষ প্রতিনিধি  :  নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা কথিত বড় হুজুর আবুল কাশেমের আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন অবশেষে ফাঁস হতে শুরু করেছে গোয়েন্দাদের জেরার মুখে। ইতিমধ্যে আবুল কাশেমের গোপন আন্ডারওয়ার্ল্ড অর্থ কানেকশনের তথ্য মিলেছে। ইতিমধ্যে আবুল কাশেম জানিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের লোকজন তাঁকে অর্থ সাহায্য করতো।  তিনি দিনাজপুর, রাজশাহী ও ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মাদ্রাসায় ওইসব বিদেশির সঙ্গে দেখা করতেন। এ জন্য তিনি ইংরেজি শেখার ওপর জোরও দিয়েছিলেন। তবে গুলশান হামলার পর তিনি গা-ঢাকা দিতে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতেন। মধ্যপ্রাচ্যের এসব লোক মূলত জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমর্থক। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

222গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাতে রাজধানীর সেনপাড়া থেকে গ্রেফতারকৃত আবুল কাশেম বর্তমানে সিটিটিসির রিমান্ডে রয়েছেন। নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক এই নেতা একাধিক জিহাদের বই লিখে জঙ্গিদের কাছে সমাদৃত। তদন্ত সংশ্লিষ্ট  সিটিটিসি ইউনিটের কর্মকর্তারা বলেন, ‘আবুল কাশেম রিমান্ডে তথ্য দেওয়া শুরু করেছেন। তিনি তার নিজের বিষয়ে বলেছেন, তার সব লেখাপড়া আরবিতে। তিনি ইংরেজিতে দক্ষ নন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন লোকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতো। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে ইংরেজি শেখার জন্য চেষ্টা করছিলেন। তার কাছ থেকে ‘আরবি টু ইংরেজি’ একটি অভিধান উদ্ধার করা হয়েছে।’

সিটিটিসি’র প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরীর সঙ্গে ২০১৩ সালের দিকে বড় হুজুর আবুল কাশেমের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। ২০১৪ সালের দিকে আন্তর্জাতিক কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের তামিম চৌধুরীর বিষয়ে জানায়। ওই সময় আমরা বড় হুজুর সম্পর্কেও তথ্য পাই। ২০১৫ সালের দিকে বড় হুজুরের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হই।’

সূত্র জানায়, তামিম চৌধুরীকে বড় হুজুরের কাছে নিয়ে যায় পুরনো জেএমবির শীর্ষ নেতা আব্দুস সামাদ ওরফে মামু ওরফে আরিফ। সামাদের সঙ্গে তামিম চৌধুরীর পরিচয় করিয়ে দেয় সিরিয়ায় চলে যাওয়া এটিএম তাজউদ্দিন। পরবর্তী সময়ে সামাদ ও তামিম চৌধুরী একাধিকবার বড় হুজুরের সঙ্গে বৈঠক করে। তামিমকে মান্য করে চলতে বড় হুজুর আবুল কাশেমই নব্য জেএমবির সবাইকে বলেন।

সিটিটিসি’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বড় হুজুর আবুল কাশেমকে শায়খ বলে ডাকতো তামীম চৌধুরী। তবে অন্য সদস্যরা তাকে বড় হুজুর ডাকতো। গুলশান হামলার বিষয়ে বড় হুজুর অনুমোদন দেয়। সে ছদ্মনামে বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদের বই লিখতো। তামিম চৌধুরী, মারজান, হাতকাটা মাহফুজ, উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার রাজীব গান্ধীসহ অনেকেই তার অনুরক্ত ছিল। তামীম চৌধুরী ছাড়াও তার সঙ্গে আর কারা কারা যোগাযোগ করতো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

সিটিটিসি সূত্র জানায়, গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত জেএমবির পুরনো সদস্যদের সঙ্গে নতুন কিছু সদস্য ছিল। মূলত পুরনো জেএমবির নেতৃত্ব ও জেহাদের মতপার্থক্য নিয়েই বিভক্ত হয়। জসীম উদ্দিন রাহমানীর গ্রুপটি মনে করতো আরও পরে জিহাদ করতে হবে। তবে একটি গ্রুপ মনে করতো এখনও জিহাদ করতে হবে। তাই তারা বিভিন্ন গ্রুপ থেকে বের হয়ে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা নাশকতা শুরু করে। এই গ্রুপের সবাইকে এখনই ‘জিহাদের শ্রেষ্ঠ সময়’ বলে উদ্বুদ্ধ করতেন আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর।

গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা চালায় নব্য জেএমবি। তাদের হামলায় দেশি-বিদেশিসহ মোট ২২ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ১৭ জন বিদেশি, তিনজন বাংলাদেশি ও দুজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে। এছাড়া ২ জুলাই কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। এই ঘটনায় পুলিশ গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলাটি বর্তমানে সিটিটিসি তদন্ত করছে।