• মঙ্গলবার , ৭ মে ২০২৪

ছয় মানবতাবিরোধীকে খুঁজছে মৃত্যুদূত


প্রকাশিত: ১:৩৪ পিএম, ১০ জুন ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫০ বার

71বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম ধাপে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৭টি মামলায় ১৮ জনের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ফাঁসির রায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দ্বিতীয় দফায় যেসব তৃণমূল রাজাকার সংগঠকের বিচার ট্রাইব্যুনালে চলছে বা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে, তাদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। এনিয়ে ট্রাইব্যুনালও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

যুদ্ধাপরাধ মামলায় প্রথম রায় হয় ফরিদপুরের আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের। মৃত্যুদন্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের প্রাক্তন এই রুকন। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় জামায়াতের প্রাক্তন এই রুকনকে। আর রায় ঘোষণার কয়েক মাস আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বাচ্চু রাজাকার। ওই সময় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিনের অনুপস্থিতিতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পন্ন হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর তাদের মৃত্যুদ- দেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মাঈনুদ্দিন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তারা দুজনই মাইনরিটি কমিউনিটির নেতা। দু’জনের বিরুদ্ধেই ইন্টারপোলের  নোটিশ জারি রয়েছে। এই দুজনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাজ চলছে।

তবে জনস্বার্থে এর চেয়ে বিস্তারিত কিছুই বলা যাবে না। স্বঘোষিত রাজাকার, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সহসভাপতি জাহিদ হোসেন খোকনও বিচার শুরুর আগেই দেশ থেকে পালিয়ে যান। পলাতক অবস্থায়ই তার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর জাহিদ হোসেন খোকনকে মৃত্যুদ- দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বর্তমানে তিনি সুইডেনের স্টকহোমে বড় ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে রয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রাক্তন এমপি পিরোজপুরের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার আমৃত্যু কারাদ- নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে বয়স বিবেচনায় নিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেন। এ ছাড়া একটি অভিযোগে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারকে  ২০ বছরের কারাদ- ও ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। জানা গেছে, এই আসামি রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়।

তবে তদন্তকারী সংস্থার সদস্য হেলাল উদ্দিন দাবি করেন, আব্দুল জব্বার বাংলাদেশেই আছেন। ২০০৯ সালে তিনি আমেরিকায় গিয়েছিলেন। পরে চলে এসেছেন। এরপর থেকে তিনি কোথায় আছেন তা কেউ বলতে পারছেন না। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মো. হাসান আলী পলাতক থাকা অবস্থায় বিচার সম্পন্ন হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল হাসান আলীর মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

পলাতক সৈয়দ হাসান আলীর রায় গত মঙ্গলবার ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠার পর থেকে কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম এবং করিমগঞ্জের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ- এই চার আসামি পলাতক। তাদের  আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১ জুন । এই চার রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুণ্ঠন, নির্যাতনের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকার বিদেশে পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে অনেক আগে থেকেই জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতেও নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পলাতক এসব আসামিদের গ্রেপ্তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

গত ২৪ মে  ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্ট্রার বরাবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, গত ২১ মে ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিআইজি ছাড়াও একজন অ্যাডিশনাল ডিআইজি, র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও তদন্ত সংস্থার একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন ওই কমিটিতে। প্রতি ৪০ দিন পর পর তারা পলাতক আসামিদের বিষয়ে প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন। এর আগে গত ১৩ মে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে একটি তদারকি সেল বা কমিটি গঠনের নির্দেশ  দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১।