• সোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪

চোরের খনি শাহজালালে গায়েব ৫৫ কোজি সোনা


প্রকাশিত: ১:৪৫ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৬ বার

লাবণ্য চৌধুরী  :  আবারও হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদাম থেকে প্রায় ৫৫ কেজি সোনা চুরি হয়েছে। এর আগে চুরি হয়েছিল হীরা। এবার চুরি যাওয়া সোনার দাম বর্তমান বাজারদরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা।পুলিশ ও অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সোনা চুরির ঘটনা তদন্তে কাজ করছে। চুরি যাওয়া জিনিসের মধ্যে সোনার বার ছাড়াও ছিল সোনার অলংকার।কীভাবে এত সোনা উধাও হলো সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না কাস্টম হাউসের কোনও কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে কাস্টমস কর্মকর্তারা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা গায়েব হয়েছে। এর মধ্যে অলংকার ও সোনার বার রয়েছে।রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) অফিস খোলার পর বিষয়টি কর্মকর্তাদের নজরে আসে। পরে বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ করে কাস্টমস কতৃপক্ষ। অভিযোগপত্রে গায়েব হওয়া স্বর্ণের পরিমাণ ৫৫ কেজির বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কাস্টমসের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কারা এসব সোনা গায়েব করেছে তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়া পণ্য রাখার স্থানের পাশেই রয়েছে কাস্টমসের গুদাম। বিমানবন্দরে কাস্টমসহ বিভিন্ন এজেন্সির জব্দ করা মূল্যবান সামগ্রী জমা থাকে ওই গুদামে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে  বলেন, কাস্টমসের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।তিনি আরও বলেন, অভিযোগ অনুযায়ী স্বর্ণ হারানোর কোনো সুযোগ নেই। হয় কেউ আত্মসাৎ করেছে, না হয় চুরি করেছে।
রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার নুরুল হুদা আজাদদৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, গুদাম থেকে সোনার হদিস না মেলায় আমরাও বিব্রত। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়েছি।তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে একটি সিন্ডিকেট এ ধরনের কাজে জড়িত বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি।
কাস্টমস হাউসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই জব্দকৃত মালামাল গুদাম থেকে চুরি হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা কাস্টমস হাউস কাজ করছিল। শুক্রবার ও শনিবার কাস্টমস হাউজের আলাদা দুটি টিম গুদামের মালামালের তালিকা প্রস্তুত করা এবং গুদাম পরিষ্কারের কাজ শুরু করে।
শনিবার একটি টিম দেখতে পায় যে, বাইরে থেকে তালা অক্ষত থাকলেও ভেতরের লকার ভাঙা অবস্থা রয়েছে। এরপরই সন্দেহ সত্যি বলে প্রমাণিত হয়। গুদামের মালামালের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। দ্রুতই চুরি হওয়া প্রকৃত মালামাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য বের করা সম্ভব হবে। চোর নিজেদের ভেতরেই রয়েছে বলেও ধারণা তাদের। তাদের শনাক্তে কাজ করছে একটি যৌথ টিম।এ বিষয়ে বিমানবন্দরে কর্মরত সংস্থাগুলোর কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে হীরা চুরি হয়েছিল। বিমানবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে সংরক্ষিত এলাকার একটি এই কার্গো গুদামটি ছিল। আমদানি পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামি সামগ্রী এখানে রাখা হতো। আর এ কার্গো গুদামটির দায়িত্ব ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।বিমান সূত্রে জানা গেছে, চুরি হওয়া একটি হীরার দাম ছিল ৭ লাখ টাকা। অন্যটির দাম নির্ধারণ করা যায়নি। ওই দিন মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময়ে কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য রাখার গুদামে চুরির ঘটনা ঘটে। কার্গো ভিলেজের এ স্থানটি অত্যন্ত সংরক্ষিত এলাকা। কয়েকটি নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে এ গুদামে যেতে হয়। এখানে সাধারণত মূল্যবান সামগ্রী সোনা, হীরা, মূল্যবান ধাতু ও রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষিত থাকে।
সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব এর অভিভাবক বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে। তবে কার্গো ভিলেজ এলাকার পুরো দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। আমর্ড পুলিশ, আনসার কিংবা বিমানবন্দরের অন্য নিরাপত্তা কর্মীরা কার্গো ভিলেজের বাইরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। এর ভেতরসহ পুরো কার্গো ভিলেজের দায়িত্ব পালন করেন বিমানেরই নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীরা।
জানা গেছে, চুরি হলেও গুদামের বাইরের তালা অক্ষত ছিল।  তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশ ধারণা জানায়, ভেতর থেকেই কেউ চুরি করে হীরা। বিষয়টি নিয়ে বিমানে ব্যাপক আলোচনা চলে। বিমানের কর্মীদের সহায়তা কিংবা তারা নিজেরা ছাড়া কারো পক্ষে এখান থেকে বাইরের তালা না ভেঙে চুরি করা সম্ভব ছিল না।বিষয়টি নিয়ে ওই সময় কার্গো বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আলী আহসান, ম্যানেজার (আমদানি) মনজুরুল হকসহ তৎকালীন বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (নিরাপত্তা) মোমিনুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তির গতিবিধি নজরদারি করা হলেও শেষমেষ তারা নিজেদের রক্ষা করেন।