• বৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪

‘গুলি কর, গুলি কর, ভ্যাট দেব না, ভ্যাট দেব না’-


প্রকাশিত: ১:৫৪ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ১৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৪ বার

11157 mri j h h hবিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা:  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতনের সঙ্গে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীর ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা রামপুরার আফতাবনগর ঢোকার মুখ অবরোধ করে রেখেছেন। ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের ছোড়া গুলি ও লাঠিপেটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন। তবে পুলিশ গুলি ছোড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। শিক্ষার্থীরা পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করেছে ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছে।

আন্দোলনরত অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ বেলা দেড়টার দিকে তাঁরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে মিছিল শুরু করেন। এরপর বেলা সোয়া দুইটার দিকে তাঁরা রামপুরা ব্রিজ অবরোধ করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অন্যান্য শিক্ষকেরা এসে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলেন। শিক্ষার্থীরা সরে যাওয়ার সময় আচমকা পুলিশ তাঁদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে। তখন শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়েন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করেন। এরপর দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমানেই আফতাবনগর প্রজেক্টের মূল ফটকে অবস্থান নেন। তাঁরা ‘গুলি কেন ছুড়ল বিচার চাই বিচার চাই’, ‘গুলি কর, গুলি কর, ভ্যাট দেব না, ভ্যাট দেব না’-এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরি করে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ঠেলে আবারও রামপুরা ব্রিজে অবস্থান নিয়ে দুই পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেন। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ও পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ তাঁদের সরে যেতে অনুরোধ করেন। এ সময় পুলিশের একটি রায়ট কার ও দুটি জলকামান ঘটনাস্থলে আসে। প্রায় ৬০ জন পুলিশ সদস্য বাড্ডার দিকে প্রগতি সরণিতে অবস্থান নিয়ে আছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আহমেদ শাফী বলেন, ‘এটি ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনের একটি অংশ। সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট যোগ করাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হতে পারে। কিন্তু জনগণের ভোগান্তি হোক সে রকম প্রতিবাদ আমি চাচ্ছিলাম না। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসছিলাম। তখন বিনা উসকানিতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। আমি মেডিকেল রুমে গিয়ে দেখতে পাই অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মুশফিকুর রহমান গুলিবিদ্ধ। তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। চারপাশে তাকিয়ে দেখতে পাই আরও অনেক ছাত্র গুলিবিদ্ধ। এতগুলো ছাত্রকে গুলিবিদ্ধ করাটা বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। তাঁদের বনশ্রীতে ফরাজি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ তাদের সরে যেতে অনুরোধ করে। শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়ে ও বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর চালায়। তখন পুলিশ তাদের জোর করে সরিয়ে দেয়। তিনি গুলি ছোড়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বলেন, অন্যায় কিছু ঘটে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আহত এক শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান জানান, ‘আমরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। পুলিশ বিনা উসকানিতে ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা করে।’
শিক্ষার্থীদের দাবি পুলিশের রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে ও লাঠিপেটায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবির পাশাপাশি দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানান। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের কথা জানিয়েছে।