• মঙ্গলবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৪

‘কোটা’ কেলেংকারি-৩৫০০ চাকরী খালি


প্রকাশিত: ৬:৫৫ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯০ বার

এস রহমান :  সরকারি চাকরীতে প্রবেশের নানা  ‘কোটা’ কেলেংকারি’র কারণে ৩৫০০ চাকরীর পদ খালি রয়েছে বলে জানা গেছে। ‘কোটা’ রেখে এসব quata-www.jatirkhantha.com.bdপদে প্রতিযোগীতা’র মাধ্যমে চাকরীতে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন কোটা বিরোধী ছাত্র পরিষদসহ একাধিক সংগঠন। তারা বলেছেন, কোটার কারণে
বিগত কয়েকটি বিসিএসে মেধাবী যথাযথ প্রার্থী পাওয়া না যাওযায় সাড়ে তিন হাজার পদ খালি রয়েছে। এসব পদ প্রতিযোগীতার ভিত্তিতে নতুন করে ‘মেধাবী বিসিএস’ নামেও পরীক্ষা নিয়ে পূরণ করা যেতে  পারে।

জানা গেছে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে  রাস্তায় নেমেছেন চাকরিপ্রার্থী তরুণেরা। আজ শনিবার’ও শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেছে কয়েকশ’ তরুণ। দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচিরও হুমকিও দেয় তারা।

quata-www.jatirkhantha.com.bd.1‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ব্যানারে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে তারা শাহবাগে জড়ো হন। এরপর পুলিশ ‘বাধা’ দিলে তারা টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করে। তবে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয়নি। বইমেলার রাস্তা ফাঁকা রাখতে আমরা শুধু তাদের অন্য জায়গায় গিয়ে কর্মসূচি পালন করতে বলেছি।

একই সময়ে একই স্থানে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত ৩০ শতাংশ কোটা বিরোধিতার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে’ মানববন্ধন করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামে একটি সংগঠনও। কোটা সংস্কার দাবিদারদের তারা রাজাকার ও আলবদরপন্থী এবং খালেদা জিয়ার অনুসারী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোটা রেখে মেধাবীদের প্রতিযোগীতা’র চাকরী বাড়ানো যেতে পারে। মেধাবীরা যাতে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক জায়গায় যেতে পারেন, এজন্য কোটা সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা কোটার বিপক্ষে না। কোটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি। ৫৬ শতাংশ কোটা রাখার কারণে প্রকৃত মেধাবীরা যোগ্যতা থাকার পরও চাকরি পাচ্ছেন না।’
quata-www.jatirkhantha.com.bd-2
‘কোটা মানে বৈষম্য’, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই’, ‘নাতি-পুতি কোটা বাতিল চাই’, ‘কোটা ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী’ ‘কোটা বৈষম্য থেকে মুক্তি চাই’,‘মেধাবীদের ওপর দয়া করো, শূন্যপদ পুরণ করো’, ‘প্রিলিতে অভিন্ন কাটমার্কস নিশ্চিত করো’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন শোভা পায় তরুণদের হাতে।

আন্দোলনকারী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিরকন্ঠ অনলাইন দৈনিককে বলেন, আমরা কোটা ব্যবস্থার বিপক্ষে নই। তবে বর্তমানা যে কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত তাতে কোটাহীনদের চাকরিতে প্রবেশ করা খুবই কষ্টসাধ্য। বেশিরভাগই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ পাচ্ছেন না। অথচ তুলনামূলক কম যোগ্যতা সম্পন্নরা কোটা থাকার কারণে নিয়োগ পেয়ে যাচ্ছেন। এটি একটি বড় বৈষম্য।

‘‘আমরা চাই কোটা ব্যবস্থা সংস্কার হোক। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতমদের নিয়োগ দিতে ৯০ শতাংশ মেধা এবং বাকী ১০ শতাংশ কোটা থেকে নিয়োগ দেয়া হোক। আর কোটাধারী যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে, তা সংরক্ষণ না করে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেয়া হোক।’’

সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি বিদ্যমান কোটা অনুযায়ী ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতী-নাতনী, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা এবং ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য কোটা বিদ্যমান।

মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ পায় ৪৫ শতাংশ। তবে কোটাধারী কেউ মেধা তালিকায় ঢুকে পড়লে মেধা কোটায়ই নিয়োগ পান তিনি। তখন তার জন্য নির্ধারিত কোটায় নিয়োগ দেওয়া অন্য কোটা কোটাধারীকে। যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া না গেলে, তখন সে পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে  সংরক্ষণ করা হয়।

বিগত কয়েকটি বিসিএসের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যাওয়ায় ২৮ থেকে ৩৫ তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে সাড়ে তিন হাজার পদ খালি থেকে গেছে। এর মধ্যে ২৮ তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯ তম বিসিএসে ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১ তম বিসিএসে ৭৭৩টি এবং ৩৫ তম বিসিএসে ৩৩৮টি পদ শূন্য থেকে যায়।বিক্ষোভকারীরা বলছেন, কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করা হলে দেশের বেকার সমস্যা অনেকটাই কেটে যাওয়ার পাশাপাশি তরুণদের হতাশা কেটে যাবে। প্রজাতন্ত্র পাবে যোগ্য কর্মচারী।

সম্প্রতি কোটা সংস্কারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. আকবর আলী খানসহ একাধিক সাবেক আমলা এবং বুদ্ধিজীবী।