• রোববার , ১৯ মে ২০২৪

‘কতদিন দেখিনি তোমায়’-আবার’ও শাবনূর অভিনয়ে


প্রকাশিত: ১:১৫ পিএম, ৭ মে ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৯৪ বার

মরিয়ম সুলতানা  :   আবার’ও শাবনূর অভিনয়ে প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছেন ‘কতদিন দেখিনি তোমায়’ 3ছবির মাধ্যমে-। তাঁর এই ফেরা’য় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে–। ১৯৯৩ সালে প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা এহতেশামের হাত ধরে ছবিঘরে আসা এই নায়িকা ২০১১ সাল পর্যন্ত নিয়মিত ছিলেন বড় পর্দায়। নিজ অভিনয়গুণে দর্শক হৃদয় কেড়েছিলেন। নির্মাতাদের কথায়-অভিনয় দক্ষতা। নৃত্যে পারমঙ্গতা এবং নায়িকা সুলভ গ্ল্যামার এগিয়ে নিয়েছে শাবনুরকে।

শাবনূরের পথচলার শুরুটা খুব একটা যে মসৃণ ছিল, তা কিন্তু নয়। প্রথম ছবি ‘চাঁদনী রাতে’ সুপার ফ্লপ। এরপর মেহেদী, অমিত হাসানের সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে কাজ করেও চিত্রজগতে দাঁড়ানোর মতো জোর পাচ্ছিলেন না পায়ে। এলেন সালমান শাহ। তার সঙ্গে জুটি বাঁধলেন শাবনূর। চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা। জোর কদমে সফলতার পথ ধরে হাঁটা শুরু তার। সালমান শাহ অভিনীত ২৬ ছবির মধ্যে ১৪টির নায়িকা শাবনূর।
BD-Actress-Shabnur-www.jatirkhantha.com.bd
তোমাকে চাই, বিক্ষোভ, স্বপ্নের ঠিকানা, আনন্দ অশ্রু, বিচার হবে, স্বপ্নের পৃথিবী, সুজনসখীসহ সবই দর্শকহৃদয়ে কড়া নাড়ল। কাঁপা পায়ে জোর এলো। তবে এই চাঙাভাব বেশি দিন রইল না। ১৯৯৬ সালে হঠাৎ সালমান শাহ নামক নক্ষত্রটি অকালে ঝরে গেলেন। শাবনূরের ঝড়ো হাঁটায় ছন্দপতন ঘটল। কারণ সবার কাছে সালমান নির্ভর নায়িকা হয়ে উঠেছিলেন শাবনূর। সালমানের মৃত্যুর পর এই নায়িকা নিজেও ভেঙে পড়েছিলেন। ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত শাবনূর বলেছিলেন, ‘সালমানের অকাল মৃত্যু চলচ্চিত্র শিল্পকে যেমনি আঘাত করেছে তেমনি আমার ক্যারিয়ারকেও তছনছ করে দিয়েছে। আবার অসীম শূন্যতায় পড়লাম’।

5এরপর ওমর সানি, আমিন খানসহ অনেকের সঙ্গে জুটি বেঁধে ব্যর্থ হন তিনি। শাবনূরের চারদিকে তখন শুধুই অন্ধকার। যেদিকে তাকান আঁধারে ডুবে যান। হয়তো ভাগ্যদেবতা তার সঙ্গে ‘পরীক্ষা’ ‘পরীক্ষা’ খেলা খেলছিলেন। এলেন রিয়াজ। এবার তার সঙ্গে জুটি বাঁধা হলো। অবাক করার মতো ব্যাপার ঘটল। এই জুটি দর্শক হৃদয়ে এতটাই বাস্তবতার ছোঁয়া জাগাল যে, পর্দার বাইরেও তাদের ভালোবাসার রসায়ন খুঁজতে শুরু করল দর্শক-ভক্তরা। তাদের নিয়ে প্রেম আর গোপন বিয়ের গুঞ্জন বাতাসে ভেসে বেড়ানো শুরু করল। মানে শাবনূর-রিয়াজ হিট জুটি।

রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধে ৪২টি ছবি করলেন শাবনূর। এর মাঝে মান্না, শাকিব খান, ফেরদৌসের মতো শীর্ষ নায়কের সঙ্গেও কাজ করলেন এবং সফলতা ধরে রাখলেন। ১৯৯৪ থেকে ২০১১। অভিনয়ে নিয়মিত শাবনূর। বড় পর্দাই তার ধ্যান-জ্ঞান। চলচ্চিত্রই তার একমাত্র ঠিকানা। ২০১১ সালের শেষ ভাগে এসে মনটা তার উড়াল পাখির সঙ্গে বন্ধুত্ব করল। অভিনয়ে মন নেই। চলচ্চিত্রের চেয়ে অন্য খবরের শিরোনাম বেশি হতে শুরু করলেন তিনি। কখনো এক চীনা নাগরিকের সঙ্গে গোপন প্রণয়। কখনো অস্ট্রেলিয়ায় ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে পাড়ি দেওয়া।

কখনো এক তরুণ চিত্র নির্মাতার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া ইত্যাদি খবর তখন নিশ্চিত করে দিল শাবনূর আর অভিনয়ে নেই। বিশেষ করে বছরের বেশির ভাগ সময় অস্ট্রেলিয়া থাকায় এ খবরের সত্যতা মজবুত ভিত পায়। অবশেষে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় বসে এক ঘোষণার মাধ্যমে তাকে ঘিরে সব সন্দেহকে সত্যি করলেন নিজেই। ঘোষণা দিলেন ২০১২ সালে গোপনে বিয়ে করেছেন ব্যবসায়ী ও তার এক ছবির নায়ক অনিককে। এখন তিনি মা হতে চলেছেন। দর্শক-নির্মাতার মাথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো।

1মানে স্থায়ীভাবে হারিয়ে গেল ঢালিউডের অন্যতম এক অভিনেত্রী। শাবনূরও বলতে শুরু করলেন, ‘এক যুগেরও বেশি সময় অভিনয় করলাম। আর কত। এখন আমি বিশ্রাম চাই। স্বামী-সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই।’ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ‘মা’ হলেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র থেকে তার নির্বাসন হান্ড্রেড পার্সেন্ট পাকা হলো। কথায় আছে যার যা কাজ তা থেকে সে বেশি দিন দূরে থাকতে পারে না। শাবনূরের ক্ষেত্রেও তাই হলো। ২০১৫ সালের শেষ দিকে ফিরলেন দেশে। বললেন অভিনয় আমার আসল ঠিকানা।

রক্তে-মাংসে মিশে আছে। আবার ক্যামেরার সামনে নিয়মিত দাঁড়াব। চলতি বছরের শুরুতে শেষ করলেন তার আগের বাকি থাকা ‘পাগল মানুষ’ ছবির কাজ। একটি বিজ্ঞাপনেও মডেল হলেন। গত সপ্তাহে অভিনয়ে নিয়মিত হওয়াটা পাকা করে দিলেন। চুক্তিবদ্ধ হলেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘কতদিন দেখিনা তোমায়’ ছবিতে। মে মাস থেকে শুরু হবে এ ছবির শুটিং।

শাবনূরের কথায় আমার আদরের ধন আইজান এখন অনেকটা বড় হয়েছে। এখন আমি আবার বড় পর্দায় নিয়মিত হতে চাই। দর্শক-নির্মাতারাও তাদের প্রিয় অভিনেত্রীর ফিরে আসাকে স্বাগত জানালেন। অপেক্ষায় রইলেন বড় পর্দায় নিয়মিত এক শাবনূরকে দেখতে।

দর্শক তাদের প্রিয় অভিনেত্রীকে শেষবারের মতো বড় পর্দায় দেখেছিলেন ২০১৩ সালে ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ ছবিতে। এরপর বড় পর্দা থেকে যায় শাবনূর বিহীন। ২০১৪, ১৫ এবং ১৬ এর এ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শাবনূরকে না পেয়ে দর্শকরা হতাশ। তারা ধরে নিয়েছিলেন তাদের প্রিয় অভিনেত্রীকে হয়তো আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন না।

বড় জোর আগে কাজ শেষ করা এখনো মুক্তি না পাওয়া কয়েকটি ছবিই হবে সান্ত্বনা।এ নিয়ে হাপিত্যেশ বাড়তে থাকে ভক্তকুলের। বিষয়টি অনুমান করতে পারেন শাবনূর। বড় পর্দায় শাবনূরের পথচলা না থাকলেও তাকে নিয়ে মিডিয়ার কলম চলা ঠিকই ছিল। তা এই অভিনেত্রীর নজর এড়ায়নি কখনো। হয়তো ভক্তদের মন রক্ষা করাও ছিল তার ফিরে আসার অন্যতম কারণ। শাবনূর আবার বড় পর্দায় হাঁটবেন, গাইবেন, প্রেম করবেন আর দর্শক-ভক্তের হৃদয়ে ভালোবাসার ঝড় তুলবেন এটিই চাইছিলেন সবাই।

‘কতদিন দেখিনি তোমায়’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে সবার মনের আশা পূরণ করলেন শাবনূর। প্রমাণ করে দিলেন সত্যিই দর্শকদের ভালোবাসেন তিনি। ভালোবাসেন চলচ্চিত্রজগেকও।