এবার শ্রীপুরে উঁচু দেয়াল তুলে অবরুদ্ধ কৃষক পরিবার
এস রহমান: খুলনার পাইকগাছায় কয়েক ফুট উঁচু দেয়াল তুলে এক নিরীহ পরিবারকে বাড়ি থেকে উৎখাত চেষ্টার মত ঘটনা এবার ঘটেছে গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে। তবে খুলনার মত শ্রীপুরে উঁচু দেয়াল তুললেও এখানে একটি নিরীহ কৃষক পরিবারকে চলাচলের জন্য দেয়া হয়েছে মাত্র এক ফুট জায়গা।
যে জায়গা দিয়ে ১ কেজি চাউল কিনে স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, নিরীহ কৃষক পরিবারটি তাঁর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে গাজীপুর জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করলেও ডিসি সাহেব গত ৩ মাসেও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ব্যস্ত আছেন মর্মে কথা বলতে রাজি হননি। ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা খুলনার সংসদ সদস্য শেখ মোহাম্মদ নুরুল হক (খুলনা-৬ ) পরিবারের বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছার স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মোহাম্মদ আজিজ এর বাড়ির চারপাশে কয়েক ফুট উঁচু দেয়াল তুলে তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে ঘটনাটি মিডিয়ায় প্রকাশ পেলে প্রশাসনের টনক নড়ে এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়।
খুলনার পাইকগাছার মত জেলা প্রশাসন তরিৎ পদক্ষেপ নিলেও গাজীপুরের শ্রীপুরের ঘটনায় জেলা প্রশাসক একেবারে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। কাকতালীয় হলেও পাইকগাছার মত শ্রীপুরের ভুক্তভোগীরও একই নাম এবং ঘটনাটিও ঘটেছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে।
শ্রীপুরের ভুক্তভোগীর নাম আব্দুল আজিজ। পেশায় তিনি কৃষক। তিনি গত ৭ ফ্রেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলা প্রশাসককে লিখিত দরখাস্তের অভিযোগ দাখিল করেছিলেন ২০ টাকার কোর্ট ফিসহ।
সরেজমিনে শ্রীপুরের ভুক্তভোগী মৃত সিরাজুল হকের পুত্র আব্দুল আজিজ এর বাসা তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ দাইপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির চারদিকে দেয়াল তুলে একপাশে এক ফুট ফাঁকা রেখে এক নিরীহ কৃষকের জমি দখলের পাঁয়তারা করছে এক প্রভাবশালী। যে ফাঁক দিয়ে ১ কেজি চাউল কিনে স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।
ভুক্তভোগী আব্দুল আজিজ জানান, বাড়ির চারদিকে উঁচু দেয়াল তুলে এক পাশে ১ ফুট ফাঁকা রেখে আমার গোটা পরিবারকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। চলাচলের জন্যে আমার গোটা পরিবার আজ অবরুদ্ধ। অসহায় এই দরিদ্র পরিবারটিকে উদ্ধার করতে জেলা প্রশাসকের দয়া ভিক্ষা চেয়েছিলেন আব্দুল আজিজ।
জেলা প্রশাসককে ভিখিত অভিযোগে বলা হয়, শ্রীপুরের মেসার্স মিতালী ফুড্স প্রোডাক্টস্ (হাজী চিড়া মিল) মালিক কর্তৃক ইটের দেয়ালে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আব্দুল আজিজ চিড়ার মিল মালিকসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করেছেন। এর হচ্ছে,
তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ দাইপাড়া গ্রামের, বিবাদী (১) হাজী নুরুল হুদা, পিতা- মৃত হাজী জাফর আহমেদ ফকির, (২) খোরশেদ, ও (৩) শাহীন, উভয় পিতা- হাজী নুরুল হুদা সাং- মুলাইদ, ইউনিয়ন-তেলিহাটি, থানা-শ্রীপুর, জেলা- গাজীপুর। অভিযোগে বলা হয়, বিবাদীগণ দাঙ্গাবাজ, হারমাইদ, পরধনলোভী ও কলহপ্রিয় লোক।
আব্দুল আজিজ জানান, আমি বিগত ১৯৯৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইং তারিখে শ্রীপুরের ৮নং মুলাইদ মৌজাস্থিত ৪৮ নং খতিয়ানের ২০৮/১৬০৭ ও ২০৯/১৬০৬ নং দাগে, ৯৩৫৩ নং সাব কবলা দলিল মূলে ৫.২৫ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে নামজারী ও জমাভাগের মাধ্যমে ভিটে বাড়ি নির্মাণ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রায় ২২ বছর যাবৎ শান্তি—পূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আছি।
উক্ত বিবাদীরা আজ থেকে আনুমানিক ৮ বছর পূর্বে একই দাগ খতিয়ানে কিছু জমি ক্রয় করে এবং দেড় বছর আগে একটি চিড়ার মিল স্থাপন করেন। বিবাদীরা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নানা প্রকার জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নামমাত্র মূলে উল্টাপাল্টা দাগ খতিয়ানসহ ভেজাল কাগজপত্রের মালিকানা ও খোলা দলিলে সরকারি খাসসহ ভেজাল জমি কিনে আমার ভিটে বাড়ি জবর দখলের নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। চিড়ার মিল দিয়ে শুরু করে নানা নির্যাতন ও অত্যাচার।
চিড়ার মিলের বিকট শব্দ ও ধানের কুঁড়ার মেশিন স্থাপন করে আমার বসত ঘরের পাশে। এভাবে নানা অত্যাচারে আমাকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালায়। দীর্ঘ দিন ধরে চিড়ার মিলের বিকট শব্দ ও ধানের কুঁড়ায় পরিবেশ দূষণ ও দূর্ভোগ চরম আকার ধারন করে। নিজের হাতে লাগানো আমা, জাম, নারিকেল ও সুপারি সহ নানা ফলজ গাছের ফল বিক্রি করেই চলত আমার সংসার।
কিন্তু চিড়ার মিলের ধানের কুঁড়ার প্রভাবে মরে যায় সকল ফলজ গাছপালা। শিশু থেকে শুরু করে পরিবারের সবাই শ্বাসকষ্ট ও নানা অসুখে ভোগতে থাকি। তখন স্বেচ্ছায় ভিটে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চিড়া মিল মালিকের কাছে জমির ন্যায্য মূল্য দেয়ার প্রস্তাব দিলে মালিক জানায়, আজিজ কে কি দেবো, সে’তো কুঁড়া খেতে-খেতে এনমিতেই চলে যাবে। এদিকে জন
দূর্ভোগ বাড়তে থাকলে সংবাদ পেয়ে সাংবাদিকরা চিড়ার মিলের কুঁড়ায় এলাকাবাসীর দূর্ভোগের সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করে। এতে মিল মালিক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রায় ১ মাস পূর্বে আমার বাড়ির চারপাশে তার জমি কেনা আছে বলে এক পাশে ১ ফুট ফাঁকা রেখে ইটের দেয়াল তুলে আমার গোটা পরিবারকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। চলাচলে আমার গোটা পরিবার আজ অবরুদ্ধ। তাই অসহায় এই দরিদ্র পরিবারটিকে উদ্ধার করতে আপনার দয়া ভিক্ষা চাই।
এ প্রসঙ্গে মেসার্স মিতালী ফুড্স প্রোডাক্টস্ (হাজী চিড়া মিল) মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তারা দম্ভোক্তি দেখিয়ে জানায়, ডিসি সাহেব আমাদের পকেটে আপনারা লিখে আমাদের কোন কিছুই করতে পারবেন না।