• শনিবার , ১৮ মে ২০২৪

ইউরোপা’র সেলিম অগ্রণী,রুপালি ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে লুটপাট করলো ৩০০ কোটি


প্রকাশিত: ৩:৩৫ এএম, ২৫ মে ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৫ বার

এস রহমান   :   এবার ইউরোপা 1গ্রুপ নামধারী এক ব্যাংক জালিয়াত সেলিম চৌধুরী ৩ ব্যাংক থেকে হাতিয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। এসব ঘটনায় তিন ব্যাংকের উর্ধ্বতণ কর্মকর্তার জড়িত। ব্যাংকগুলো হচ্ছে অগ্রণী, রুপালি ও ট্রাস্ট ব্যাংক।

চক্রটি ভুয়া কোম্পানি ও ব্যাংক হিসাব খুলে জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ইউরোপা গ্রুপের নয়টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল অংকের এ টাকা ঋণের নামে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
rupali-
অগ্রণী ব্যাংকের পুরানা পল্টন এবং তেজগাঁও কর্পোরেট শাখায় সংঘটিত এ ঋণ কেলেংকারিতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অগ্রণী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা রিপোর্টে আর্থিক এ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এতদিন বিষয়টি গোপন রাখা হয় কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

শুধু তাই নয়, এত বড় দুর্নীতির পর একই গ্রুপ নতুন করে আরও ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার অপচেষ্টা চালায়। শাখা পর্যায়ে এমন তৎপরতার খবর পেয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করে। শেষ পর্যন্ত বিপুল অংকের এ অর্থ লোপাটের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

33সূত্রমতে, ইউরোপা গ্রুপ ভুয়া কোম্পানি, পণ্য আমদানির এলসি ও ব্যাংক হিসাব খুলে এ টাকা বের করে নিয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের বিপুল অংকের এ অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও ধরা পড়েছে। এ ঘটনা দুর্নীতি দমন কমিশনকেও জানানো হয়েছে।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, অগ্রণী ব্যাংকের তেজগাঁও শিল্প এলাকা শাখায় ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য নিয়মবহির্ভূত কাজগপত্র দিয়ে খোলা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৭৩ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে ইউরোপা গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী।

শেষ পর্যন্ত এসব ঋণ কু-ঋণে পরিণত হয়। ঋণ আদায়ের জন্য মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে  অনুকূলে ৬৯ কোটি ৬২ লাখ, ইউরোপো কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ১৭ কোটি ৫৪ লাখ, মাহিন নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজের ২৭ কোটি ১ লাখ, সাথী অ্যাপারেলস ৬ কোটি ৮৬ লাখ, তিষাম অ্যাপারেলস ৩২ কোটি ২৩ লাখ ও শিহাব গার্মেন্টের ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে প্রায় ১০২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সেলিম চৌধুরী। এর মধ্যে রয়েছে এমআর গ্লোবাল লিমিটেডের অনুকূলে টার্ম লোন ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ও টাইম লোন ৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

ইউরোপা বেভারেজ অ্যান্ড ফুডস লিমিটেডের অনুকূলে ওভারড্রাফট ৩৭ কোটি ৬০ লাখ, টার্ম লোন ৩১ কোটি ৩৯ লাখ ও টাইম লোন ২ কোটি ৯ লাখ টাকা। এদিকে অগ্রণী ব্যাংক পুরানা পল্টন শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে বের করা অর্থের প্রায় ৮ কোটি টাকা সরানো হয়েছে রূপালী ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখায়।

শিহাব কর্পোরেট হাউজিংয়ের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা প্রবেশ করায় রূপালী ব্যাংকেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেলিম চৌধুরীর মালিকানাধীন জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, পটেটো ফ্ল্যাক্সসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে অগ্রণী ব্যাংকের পুরানা পল্টন শাখায় হিসাব খোলা হয়। যা ছিল পুরোপুরি ভুয়া।

এ ঘটনায় ব্যাংকের ওই শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক এসএম বাবুল ইসলামকে দায়ী করা হয়। এ ক্ষেত্রে যাকে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কর্ণধার দেখানো হয় তার ছবির সঙ্গে বাস্তবে যিনি কর্ণধার তার কোনো মিল নেই।

এ ছাড়া সেলিম চৌধুরী ব্যাংকের তেজগাঁও শাখায় আগে থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। তবুও তাকে নতুন করে ঋণ দেয়া হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একই ব্যক্তিকে চিনি আমদানির জন্য ১৫৭ কোটি ও ভোজ্যতেল আমদানির জন্য ১৪৪ কোটি টাকা প্রদানে সব প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত তা আটকে দেয় অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এসব হিসাব খোলা হয় ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড চট্টগ্রামের একটি খ্যাতনামা জাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এর এমডি সাখাওয়াত হোসেন, চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রয়েছেন ১৪ জন। কিন্তু শাখায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের নামে ২০১৪ সালের ১৯ মে খোলা ০২০০০০২৭৪৪৩৫৮নং চলতি হিসাবের শেয়ারহোল্ডার তিনজন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন ও পরিচালক জুয়েল চৌধুরী। এভাবে ব্যক্তি ও তার ছবি কোনোটিরই মিল পাননি পরিদর্শকরা।

বিভিন্ন প্রতিবেদনের মূল্যায়নে দেখা যায়, অধস্তন কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে শাখায় ভুয়া হিসাব খোলা হয়। সঠিকভাবে এলসি অ্যাডভাইস করা হয়নি। এলসির অ্যাডভাইস প্রকৃত গ্রাহকের ঠিকানায় পাঠানো হয়নি। রফতানি ডকুমেন্ট যাচাই না করে ইস্যুকারী ব্যাংককে টাকা কালেকশনে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষ করে পুরানা পল্টন শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এসএম বাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তাকে মুঠোফোন সংযোগে পাওয়া যায়নি। যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের সঙ্গেও তাদেরও পাওয়া যায়নি।