বিয়ে বাড়ির বুকিং নেই। তাই লাভের মুখ দেখতে মালিক নীল ছবির শ্যুটিং জন্য বিয়ে বাড়িটি ভাড়া দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সল্টলেকের একটি অতি পরিচিত বিয়েবাড়িতে হানা দিয়ে সেই নীল ছবির নির্মাতাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করল বিধাননগর (উত্তর) থানা ও বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা।

ঘটনাস্থল থেকে বিয়ে বাড়ির মালিক, ওই নীল ছবির নির্মাতা সহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে ৭ জন মহিলা রয়েছেন।

কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন ওই বিয়েবাড়ির মালিক তপব্রত ঘোষ। যিনি আবার প্রাক্তন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আপ্ত সহায়ক জয়কৃষ্ণ ঘোষের দাদা হরেকৃষ্ণ ঘোষের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সল্টলেকের ডিডি ব্লকের ওই বাড়িটি বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হয়। সেখানে  বিভিন্ন সভা-সমাবেশও হয়ে থাকে। এমনই একটি পরিচিত ও প্রকাশ্যে জায়গায় নীল ছবির শ্যুটিং চলার খবরে অনেকেই তাজ্জব বনে গিয়েছেন।

গোয়েন্দা প্রধান জানান, সল্টলেকের এজি ব্লকের বাসিন্দা সৌম্যশঙ্খ চক্রবর্তী বলে এক ব্যক্তি ৮৭ হাজার টাকার চুক্তির ভিত্তিতে বারুইপুরের জনৈক চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ ধর রায়কে বরাত দিয়েছিল।

দু’জনকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। দিশারিকে এদিন ওই ছবির শ্যুটিং চলার কথা মালিক তপব্রতবাবু জানতেন বলেই দাবি পুলিশের। গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করবাবু বলেন,‘‘ বিয়েবাড়িটির মালির নিজেই স্বীকার করেছেন যে বিয়ের বরাত না পেয়ে তিনি প্রাপ্ত বয়স্কদের ছবির শ্যুটিং করার জন্য বাড়িটি ভাড়া দেন।’’ অভিযোগ, কোনও রকম বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই তিনি ছবির শ্যুটিং করার অনুমতি দেন।

পুলিশ জানাচ্ছে, অনলাইনে আপলোড করার জন্য ওই শ্যুটিং করা হচ্ছিল। ধৃতদের মধ্যে কলকাতা ও শহরতলী ছাড়াও শিলিগুড়ি থেকেও ছেলেমেয়েরা শ্যুটিং এ এসেছিল বলেই দাবি পুলিশের।

কেমন ভাবে তৈরি হয় নীল ছবি?

4আর পাঁচটা ছবির মতো করেই তৈরি হয় পর্ণ চিত্র। শুরুটা হয় লোকেশন বাছার কাজ দিয়ে। কোনও বাড়িতে বা রিসর্টে এর মূল কাজটা হয়। কাজ শুরুর আগে পরিচালক গোটা এলাকাটা রেকি করে আসেন। যেখানে শুটিং হবে, তার আশপাশের বাড়ি-ঘরদোর এমনকী মানুষ জনের কাজের ধরণও জরিপের মধ্যেই পড়ে। খুব শব্দপ্রবণ এলাকা বাছা হয় না। কারণ, রেকর্ডিং-এর সময় ‘অবাঞ্ছিত’ আওয়াজ শিল্পীদের মূলত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। পাশাপাশি প্রতিবেশীরা যদি শুটিং-এর ব্যাপারে খুব উত্সাহী হয়ে পড়েন তবে মূল কাজটিই তো হবে না। সুতরাং অতি ব্যস্ত অথবা এক্কেবারে নির্জন এলাকার বাড়ি-রিসর্ট বাছা হয়। সল্টলেক সব দিক থেকেই নিরাপদ। শুধু সল্টলেক নয়, রাজারহাট, নিউটাউনের পাশাপাশি কলকাতারও কিছু এলাকা নীল ছবির ইউনিটের কাছে প্রিয় তার স্বভাবের কারণেই।

ইদানীং পর্ণ সাইটগুলির রমরমা বেশ। অনলাইন চ্যানেলেও ভিডিও আপলোড করে দেওয়া যায়। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিকের একটা অংশ প্রাথমিক ভাবে দিয়ে দেওয়া হয়। পরে, দর্শক মহলে তার গ্রহণযোগ্যতা বিচার করে মানে ইউটিউবে ওই ভিডিওতে কতগুলি হিট বা লাইক পড়ল তার উপর নির্ভর করে একটা পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কটা মন্দ নয় বলে জানালেন এক পুলিশ কর্তা। তাঁর দাবি, মূল ব্যবসার ১৫ শতাংশ টাকা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পেয়ে থাকেন।

শুধু কলকাতা নয়, শিলিগুড়ি, দিঘা, মেদিনীপুর, বহরমপুর, জলপাইগুড়ি, বারুইপুর, সোনারপুর, ডায়মন্ডহারবার— জায়গার নাম অসংখ্য। প্রতিটা জায়গায় এখন রমরম করে চলছে নীল ছবির শুটিং। অনেক সময়ে পুলিশ জানতেই পারে না। চোরাগোপ্তা ভাবে শুটিং সেরে ফিরে যায় গোটা ইউনিট। সম্প্রতি ডুয়ার্সের চালসার কাছে টিয়াবনে এ রকম শুটিং-এর খবর পেয়ে পুলিশ ওই রিসর্টে অভিযান চালিয়েছিল। সেখান থেকে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একটা বড় অংশ সে ক্ষেত্রে নেপালি ছিলেন। তবে, সল্টলেকে গ্রেফতার হওয়া অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রত্যেকেই বাঙালি। বয়স তাঁদের ২২ থেকে ৩৫। পুলিশের দাবি, অনলাইনে আপলোড করার জন্য ওই শুটিং করা হচ্ছিল। ধৃতদের মধ্যে কলকাতা ও শহরতলী ছাড়াও শিলিগুড়ি থেকেও ছেলেমেয়েরা এসেছিল। নীল ছবিতে অভিনয় করে টাকা রোজগার করার মধ্যে এঁদের অনেকেই অন্যায়ের কিছু দেখেন না। পুলিশের একটা সূত্র বলছে, এক বার ধরা পড়ার পর ফের তারা ওই চক্রের মধ্যে ফের ঢুকে পড়ে। আবার শুটিং, আবার টাকা। তবে কেউ কেউ যে শুধুমাত্র বিনোদনের টানেই যে অভিনয় করতে আসেন না, তেমনটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্তা।

ডায়েরির পাশাপাশি ক্যামেরা এবং কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক উদ্ধার হয়েছে সল্টলেকে গ্রেফতার হওয়া ওই শুটিংস্থল থেকে। সেই হার্ড ডিস্কে প্রায় ৫০টি ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গিয়েছে। আন এডিটেড সেই ভিডিওগুলি এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। ডায়েরির পাতায় লিখে রাখা স্ক্রিপ্টের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়, ৫৬। কাজেই একটা টিম যদি এমন শতাধিক ছবির প্ল্যান করে, যার পঞ্চাশটির শুটিংও শেষ, তা হলে এই কলকাতাতেই তো আরও অনেক নীল টিম রয়েছে। পুরো সংখ্যাটা ভেবে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয়েছে পুলিশ কর্তাদের।