• রোববার , ১৯ মে ২০২৪

আজ জাতীয় বাজেট-এবার পরিবহন খাত সর্ব্বোচ্চ অগ্রাধিকার পরে জ্বালানি ও শিক্ষা


প্রকাশিত: ৪:৩৫ এএম, ২ জুন ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৮ বার

এস রহমান/সাইফুল বারী মাসুম   :  আজ জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেটে 88পরিবহন এক নম্বর, জ্বালানি দুই নম্বর এবং তারপরে থাকবে শিক্ষা।এবারের সম্ভাব্য বাজেট-৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২,৪২,৭৫০, অনুন্নয়ন ব্যয় ২,১৫,৭৪৪,বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ১,১০,৭০০, ঘাটতি ৯৭,০০০,
বাজেট বৃদ্ধি ১৭.৪%, মূল্যস্ফীতি ৫.৮%  ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ % (হিসাব কোটি টাকায়) ।

উন্নয়নের সুফল তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছাতে চান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কাজটি সহজ নয়—তিনি নিজেও তা জানেন। তা সত্ত্বেও প্রতিবারের মতো এবারও বাজেটের আকার বাড়াচ্ছেন ১৫ শতাংশের বেশি।

কিন্তু রাজস্ব সংগ্রহ হচ্ছে না বলে এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। টাকা না থাকায় অনেক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যায়নি। এর মধ্যে আগামী বাজেটটি আরও বড়। বরাবরের মতো টাকার সংকট আগামী দিনেও থাকছে।

আজ বৃহস্পতিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। এবার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে তা ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেট ২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র অবশ্য এ কথাও জানায়, বাজেটের আকার আরও ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের তৃতীয় এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দশম বাজেট এটি। আজ বেলা তিনটায় জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করবেন তিনি। মুহিত এর আগে ১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরেও দুবার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।

আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ১৯ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার রাখা হচ্ছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতির হার ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বাজেটে রাজস্ব বা অনুন্নয়ন এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বা উন্নয়ন অংশ আলাদা করে দেখানো হয়। এবারও তাই হচ্ছে। আগামীবারের অনুন্নয়ন বাজেটের আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা (ঘাটতিসহ)। আর এডিপি থাকছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, আগামী বাজেট হবে প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার বাজেট। অর্থমন্ত্রী সেই দর্শন মাথায় রেখে বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বাস্তবতা এড়িয়ে বাজেটে অনেক অঙ্কই বড় করে দেখানো হচ্ছে। আবার নতুন মূসক আইন কার্যকর হলেও আগামী বাজেটের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না তিনি।

মূসকই আয়ের প্রধান উৎস: আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একার দায়িত্বই ২ লাখ ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের।

নতুন মূসক আইন কার্যকরে ব্যবসায়ীরা হুমকি দিচ্ছেন। সরকারও পিছপা। জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত মূসক আইন আগামী মাস থেকে কার্যকর হচ্ছে না। তারপরও রাজস্ব সংগ্রহে আগামী অর্থবছরে মূসককেই ধরা হচ্ছে প্রথম উৎস। দ্বিতীয় আয়কর।

আয়কর, মূসক ও শুল্ক—এ তিন খাত থেকে এনবিআরের রাজস্ব আদায় করতে হবে। মূসক থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭৪ হাজার ২৫০ কোটি, আয়কর থেকে ৭৩ হাজার ৩০০ কোটি এবং শুল্ক থেকে ৫৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে এনবিআরের সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। পরে কমিয়ে ধরা হয় দেড় লাখ কোটি টাকা। দেড় লাখ কোটি টাকাকে ভিত্তি ধরলে আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে সংগ্রহ করতে হবে ৩৫ শতাংশ বেশি।

অনুন্নয়ন ব্যয়ের অর্ধেক তিন খাতে: আগামী অর্থবছরে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। তবে মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি ব্যয় হবে তিন খাতে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় ৫১ হাজার কোটি, ঋণের সুদ পরিশোধে ৪০ হাজার কোটি এবং ভর্তুকিতে ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হচ্ছে।

এদিকে মূল এডিপি ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনগুলোরও উন্নয়ন ব্যয় রয়েছে প্রায় পৌনে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া এডিপিবহির্ভূত প্রকল্প ব্যয়, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি এবং রাজস্ব বাজেট থেকে অর্থায়নকৃত উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয়ের বরাদ্দ ধরে হিসাব করলে এডিপি দাঁড়াবে ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অনুদান কমছে, ঘাটতি ৫ শতাংশই: আগামী অর্থবছরে প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরেও ঘাটতি ৫ শতাংশই ছিল। দেশি-বিদেশি ঋণের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে এ ঘাটতি পূরণ করা হবে। তবে ঘাটতির বড় অংশই দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহের পরিকল্পনা সরকারের।

জিডিপির তুলনায় ঘাটতির অঙ্ক অবশ্য বৈদেশিক অনুদানের সঙ্গে সম্পর্কিত। চলতি অর্থবছরে অনুদান পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে অনুদান পাওয়ার আশা ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩৯ হাজার কোটি ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নেওয়া হবে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়া হবে ৩০ হাজার ও অন্যান্য উৎস থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার মতো।

গুরুত্বে শিক্ষা-স্বাস্থ্য, বরাদ্দে পরিবহন-জ্বালানি!: চলতি অর্থবছরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে বরাদ্দ কমায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এবার দুই খাতেই বরাদ্দ বাড়ছে বলে সম্প্রতি এক প্রাক্-বাজেট আলোচনায় আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

কিন্তু গত মঙ্গলবার ঢাকায় একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী বাজেটে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। ওই দিন তিনি বলেন, ‘এবার সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতকে। তবে অর্থ বরাদ্দের দিক দিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত পেছনে থাকবে। এবার পরিবহন এক নম্বর আর জ্বালানি দুই নম্বর হয়ে যাবে সম্ভবত, তারপরে থাকবে শিক্ষা।’

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, দ্বিতীয় কাঁচপুর ও দ্বিতীয় মেঘনা সেতু—এসব প্রকল্পের কারণে পরিবহন খাত আগামী অর্থবছরে ২৮ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে বলে জানা গেছে। আর শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকছে ২৬ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পরিবহন খাত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা হচ্ছে জনকল্যানমূলক খাত। এগুলোতে বরাদ্দ কমানো ঠিক নয়।

বড় প্রকল্পের আলাদা বাজেট: দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছয়টি বড় প্রকল্প চিহ্নিত করেছিল সরকার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে করা হয় আটটি। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল ছাড়া এগুলোর বাস্তবায়নে অগ্রগতি না হলেও সরকার বড় প্রকল্পে গুরুত্ব দিচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যেই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এগুলো হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে গতি সঞ্চালক প্রকল্প। অর্থমন্ত্রী বড় প্রকল্পের সংখ্যা বাড়িয়ে এবার করছেন ১০টি। আগামী বাজেটে এগুলোর জন্য ‘কাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প: প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা’ নামে আলাদা বই-ই করছেন তিনি। এগুলোর জন্য বরাদ্দ থাকছে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো।

বেসরকারি খাতেও পেনশন!: বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরাই পেনশন পান। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী বেসরকারি খাতের জন্য একটি পেনশন পদ্ধতি চালুর চিন্তা করছেন। বয়স্ক মানুষের কথা ভেবে চিন্তাটি এসেছে তাঁর। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী তাই একটি নতুন ধারণার কথা জানাবেন।

অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুস সাকিবের নেতৃত্বাধীন একটি দল বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। দলটি এরই মধ্যে ভারত ঘুরে এসেছে। ভারতে বেসরকারি খাতের লোকদের জন্য একটি পেনশন পদ্ধতি চালু রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এখন যেমন ব্যাংকে ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস) রয়েছে, এটা অনেকটা তেমনই হবে। মানুষ মাসে মাসে টাকা জমা দেবেন, সরকারও কিছু দেবে। টাকা জমা দিতে পারবেন যে কেউই। ৬০ বছর বয়স হয়ে গেলে হিসাবধারী অর্ধেক টাকা তুলে নিয়ে যেতে পারবেন এবং বাকি টাকা মাসে মাসে নিজে তুলবেন তিনি।