• রোববার , ১২ মে ২০২৪

অমিত শাহের ফোনে হৈচৈ-হাসিনা খালেদার সত্যমিথ্যা-টক অব দ্যা বাংলাদেশ


প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ১১ জানুয়ারী ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৭৬ বার

cartoon_1শুভ্র লতিফ.ঢাকা:  
অমিত শাহের একটি ফোনের সত্যমিথ্যা নিয়ে এখন হৈচৈ সারা দেশ।দেশ অবরুদ্ধ অবস্থায় অমিত শাহ এখন টক অব দ্য কান্ট্রি । অথচ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে মানুষ।  রাজধানী থেকে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উৎপাদিত পণ্য বিক্রী করতে না পারায় কৃষকের মেরুদন্ড ভেঙে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিচ্ছৃঙ্খলায় বিশ্ব ইজতেমার মুসুল্লিরা বিপদগ্রস্ত। চরম বিপর্যকর অবস্থা সর্বত্র। অথচ ভারতের বিজেপির amit-1অমিত শাহ হঠাৎ করে হয়ে গেলেন টক অব দ্য কান্ট্রি! ইলেক্টিক মিডিয়াগুলো দুদিন থেকে হঠাৎ হঠাৎ ব্রেকিং নিউজ হিসেবে ‘অমিত শাহ ফোন করেননি’ খবর যেভাবে প্রচার করছে তাতে মনে হয় অমিত শাহের একটি ফোনই যেন দেশের মানুষের ভাগ্য উল্টে দেবে।

সর্বত্র এখন আলোচনা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী আরএসএসের ভাবশীর্ষ বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের নাম। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, টিভির টক শো, বাংলাদেশ ও ভারতের পত্রপত্রিকা, অনলাইন মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ সবকিছু দখল করেছেন অমিত শাহ। বাংলাদেশের যারা এতদিন অমিত শাহের নাম শোনেননি তারাও এখন অমিত শাহ নিয়ে বিতর্ক করছেন। অমিত শাহ যেন হঠাৎ করে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের দন্ডমুন্ডর কর্তা হয়ে গেলেন।

অমিত শাহের একটি ফোনই যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে; রাজনীতির পালাবদল ঘটাবে। আসলে কি অমিত শাহ গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বেগম খালেদা জিয়ার ওপর পেপার স্প্রে নিক্ষেপের পর ফোন করে তার খোঁজখবর নিয়েছেন?
নাকি ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সহানুভূতি বিএনপির পক্ষ্যে রয়েছে  দেশবাসীকে সেটা বোঝানোর চেষ্টায় এ খবর প্রচার করা হলো? আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি ও সিনিয়র নেতারা যেভাবে অমিত শাহ বেগম জিয়াকে ফোন করেছেন ‘এ খবর মিথ্যা’ প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন তাতে মনে হয় ওই অমিত শাহের ওপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ওই অমিত শাহই তাদের ক্ষমতায় রাখতে পারেন আবার ছুড়ে ফেলতে পারেন। শুধু আওয়ামী লীগ নয় তাদের আজ্ঞাবহ মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, সুশীলরাও কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছে অমিত শাহ ফোন করেননি বেগম জিয়াকে তা প্রমাণের জন্য। মিডিয়ার অস্থিরতা বেশ দেখার মতোই। দুই দলের এ অবস্থা দেখে বিশিষ্টজনরা এ ঘটনাকে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার নামান্তর হিসেবে অভিহিত করছেন। তারা বলছেন, একজন অসুস্থ নেত্রীকে ফোন করতেই পারেন; নাও করতে পারেন। এ নিয়ে তোলপাড় সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

ঘটনার সূত্রপাত  ৮ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বেগম জিয়ার প্রেস সচিব জানান, ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ৭ জানুয়ারি ফোন করে বেগম জিয়ার খোঁজখবর নিয়েছেন। খবরটি ঢাকা ও কলকাতার সব দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ হয়। এ খবর প্রচার হওয়ার পর ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন করে জানান, তিনি ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস ও দিল্লিতে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন অমিত শাহ কোনো ফোন করেননি বেগম জিয়াকে। বরং বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে অমিত শাহকে ফোন করা হয় কিন্তু তিনি দিল্লিতে না থাকায় কথা বলেননি। মাহবুবুল আলমের এ সংবাদ সম্মেলনের পর পাল্টে যায় দেশের দৃশ্যপট। সরকারসমর্থক হিসেবে পরিচিত সব ইলেক্ট্রিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ায় অমিত শাহ ফোন করেননি বেগম জিয়াকে সেটা প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা প্রথম দিন নিউজটি প্রকাশ করলেও পরের দিন মন্তব্যধর্মী প্রতিবেদন ছাপে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা বেগম জিয়াকে অমিত শাহ ফোন করেননি এটা দেশবাসীকে জানাতে মাঠে নেমে পড়েন। টকশোগুলোতেও সরকারের স্তবক আলোচকরা এই অমিত শাহ নিজে ফোন করতে পারেন না তা প্রমাণের চেষ্টা করেন। বিএনপি থেকেও সংবাদ সম্মেলন করে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস বিবৃতি দিয়ে এবং মিডিয়ায় কথা বলে জানান, অমিত শাহ ফোন করেছিলেন এবং তিনি বেগম খালেদা জিয়ার শরীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। মিডিয়াগুলোও অমিত শাহ ফোন করেননি তা প্রমাণের জন্য ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিজেপি নেতা, মন্ত্রী ইত্যাদির সঙ্গে কথা বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন অমিত শাহ ফোন করেননি বেগম জিয়াকে। মূলত রাজনৈতিক সুবিধা নিতে বিএনপি এ মিথ্যা খবর প্রচার করছে। প্রশ্ন হলো অমিত শাহকে নিয়ে বড় দুই দল এবং তাদের স্তবকরা যেভাবে মিডিয়া গরম করছেন তা কী দেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কোনো উপকারে আসবে? মানুষ চায় ভোটের অধিকার এবং স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার গ্যারান্টি। আর রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করছে তাদের রাজনীতি দেশের জনগণকে নিয়েই। সংবিধানে রয়েছে ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। কিন্তু দুই দলের নেতা ও স্তবকদের অমিত শাহের একটি ফোনের সত্যমিথ্যা নিয়ে এত হৈচৈ দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ দেশের ৯৯% ভাগ মানুষের কাছে অপরিচিত ওই অমিত শাহের হাতে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতানেত্রীদের নীতিনৈতিকতার এই দৈন্যতা আর কতদিন চলবে?