• সোমবার , ৬ মে ২০২৪

অপারেশনে কিডনি চুরি-হসপিটালের বিরুদ্ধে মামলা


প্রকাশিত: ৯:৫১ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২৩ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭ বার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : এবার টিউমার অপারেশনে গিয়ে ধুরন্ধর ডাক্তার কিডনি কেটে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জের দি জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালে। এ ঘটনায় অকালে প্রাণ হারিয়েছেন রহিমা খাতুন। ভুক্তভোগী স্বজনরা হাসপাতালের পরিচালক এ কে আরিফুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

সিলেটের হবিগঞ্জে রহিমা খাতুন নামের এক নারীর টিউমার অপারেশনের বদলে কিডনি কেটে নিয়েছেন ডাক্তার এস কে ঘোষ। স্বজনরা জানান, ওই নারীর পেটের মধ্যে থাকা দুইটি টিউমারের বদলে একটি টিউমার অপারেশন করেন তিনি। এরই সঙ্গে খাদ্যনালী, জরায়ু ও বাম পাশের কিডনি কেটে নেন ডাক্তার।পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে রহিমা খাতুন মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলা গ্রামের মৃত নুর আলীর স্ত্রী। এ ঘটনায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাকির হোসাইনের আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারীর চাচাতো ভাই রহমত আলী।

আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল হাই জানান, সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাকির হোসাইনের আদালতে শহরের পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত দি জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালের পরিচালক ও সাবেক ইউপি মেম্বার কাঞ্চন মিয়ার পুত্র এ কে আরিফুল ইসলাম এবং গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. এস কে ঘোষসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ২৪ ঘন্টার মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি রুজু করতে সদর মডেল থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছে আদালত।মামলায় অন্য আসামিরা হলেন হসপিটালের পরিচালকের ভাই তাবির হোসেন ও ম্যানেজার সিদ্দিকুর রহমান জনি আহমেদ।জানা যায়, এর আগেও অবৈধভাবে চিকিৎসা পরিচালনার জন্য দি জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালের পরিচালক এ কে আরিফুল ইসলামকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মামলা সূত্রে জানা যায়, পেটের টিউমার নিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে গিয়েছিলেন রহিমা খাতুন। হাসপাতালের আনাচে-কানাচে ওত পেতে থাকা দালালরা ভালো চিকিৎসা ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলে ভুলিয়ে ভালিয়ে দি জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে।

ওই দিন রাতেই ডা. এস কে ঘোষ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই নারীর পেট থেকে টিউমার অপসারণ করেন। সেখানে তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাড়িতে যাওয়ার পর রহিমা খাতুন আরও অসুস্থ হয়ে পরে এবং অপারেশনের স্থান দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে তার।

এ অবস্থায় তাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। সেখানের ডাক্তাররা জানান, রহিমা খাতুনের জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও তার পেটের মধ্যে থাকা দুইটি টিউমারের বদলে মাত্র একটি টিউমার অপসারণ করা হলেও আরেকটি রয়ে গেছে। এমনকি তার বাম পাশের কিডনিও নেই। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের পর রহিমা খাতুন ১৫ অক্টোবর বিকেলে মৃত্যুবরন করেন। এ সম্পর্কে দি জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব বলেন, ইতোমধ্যে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।হবিগঞ্জে বার বার ঘটছে এমন জঘন্য ও লোমহর্ষক ঘটনা। ডায়াগনস্টিকের মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় এগুলো রফাদফা করা হচ্ছে কোনো সমাধান ছারাই। অপচিকিৎসার জন্য সচেতন সমাজ দায়ী করছেন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ঘিরে রাখা দালালদের এবং শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা মানবিহীন ডায়াগনস্টিক গুলোকে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে জোরালো কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলেই স্থানীয়দের দাবি।