• বুধবার , ১৩ নভেম্বর ২০২৪

দুই বেগমের অনুশোচনাহীন আধিপত্যের লড়াই-মানুষ তাদের ডাকা অবরোধ হরতাল মানতে চায়না


প্রকাশিত: ৯:২৭ এএম, ২০ জানুয়ারী ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৬১ বার

rajniti-www.jatirkhantha.com.bd

 

কুলদীপ নায়ার : ঢাকা পরিণত হয়েছে সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দুতে।এখন, শান্তিপূর্ণ শাসনব্যবস্থার জন্য সমাধান কী?বাংলাদেশের ট্র্যাজেডি হচ্ছে, উভয় বেগমের কারণে তৈরি তাদের ব্যক্তিগত শত্রুতাকে, তাদের প্রতি সমর্থনকে বহিঃশক্তি সহযোগিতা দিয়ে আসছে।

KhaledaZia-SheikhHasina-www.jatirkhantha.com.bdদীর্ঘ সময় ধরে তারা শাসন করে আসছেন রাজনৈতিক চিত্র, ফলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খুব অল্পই। কিন্তু কীভাবে এর পরিবর্তন আনা যায়? দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাদের কোনো বিকল্প নেই। এবং এর আগে বহু পদক্ষেপই আলোর মুখ দেখেনি।
সেনাবাহিনী তাদের আঙুল আর জ্বালাতে চায় না। দুই বেগম, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া লড়াই করে চলেছেন এবং তাদের কোনোই অনুশোচনা নেই দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে।
যা-ই হোক, তাদের শেষ না হওয়া লড়াই এখন এমন যে, মানুষ আর তাদের ডাকা ‘হরতাল’ বা নিজেদের রুটিরুজিতে অসুবিধা মানতে চায় না। বাংলাদেশ গত দুই দশকে প্রবৃদ্ধি -what happen-www.jatirkhantha.com.bdছয় শতাংশে ধরে রেখেছে।
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অবরোধের ডাক দেওয়ার পর কিছুদিন হলো ঢাকা পরিণত হয়েছে সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দুতে। তার প্রতিবাদ ছিল গত বছর ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন ঘিরে, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন।

যা-ই হোক, বেগম জিয়া তার নিজের প্রতিই অভিযোগ আনতে পারেন কারণ সেই নির্বাচন তিনি বয়কট করেছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন, এটি হবে প্রহসনের নির্বাচন এবং এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে বৃথা। কিন্তু সেই যুক্তি হালে পানি পায়নি। কারণ তিনি অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন হয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু। এরশাদের জাতীয় পার্টি কয়েকটি আসনে জয়লাভ করায় রাখছে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা।

শেখ হাসিনা যে রাজনীতিতে পটু তা নতুন নয়। কিন্তু শেখ হাসিনার শক্তিশালী রূপকল্পকে বেগম জিয়া বৈধতা দিয়ে দিলেন নির্বাচন বয়কট করে।

বেগম জিয়ার অভিযোগ, তাকে তার দলীয় কার্যালয়ে সারা রাত অবস্থান করতে বাধ্য করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য স্বীকার করেছে, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার এবং তাকে নিজ বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা সেখানে অবস্থান নেন। স্পষ্টতই, তার নির্বাচন বয়কটের প্রথম বার্ষিকীতে তিনি চেয়েছিলেন এমন কোনো জায়গায় যেতে, যেখান থেকে বিক্ষোভের ডাক দিতে পারেন।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে, যারা যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে। এরপর উচিত ছিল দেশটির শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ফেরা। কিন্তু স্বাধীনতা লাভ করা অন্যান্য দেশে আধিপত্য বিস্তারে মুক্তিযোদ্ধারা একে অপরের বিরুদ্ধে হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছেন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

এটি একটি বেদনাদায়ক বিষয় যে, যখন বাংলাদেশের জন্ম হয়, সেই সময় থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা ও গণতন্ত্রের রক্ষক হয়েছেন। কিন্তু একটা লম্বা সময়ের পর তারা অনেক মনোযোগী হয়ে চলেছেন ক্ষমতা দখল ও নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য। কিন্তু এর মাধ্যমে এটি বের হয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশিরা ভালোবাসেন কর্কশ ও যুক্তিহীনভাবে নিজেদের শাসন করতে।

সুতরাং, সেনাবাহিনী তাদের আঙুল আর জ্বালাতে চায় না। দুই বেগম, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া লড়াই করে চলেছেন এবং তাদের কোনোই অনুশোচনা নেই দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে। যা-ই হোক, তাদের শেষ না হওয়া লড়াই এখন এমন যে, মানুষ আর তাদের ডাকা ‘হরতাল’ বা নিজেদের রুটিরুজিতে অসুবিধা মানতে চায় না। বাংলাদেশ গত দুই দশকে প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশে ধরে রেখেছে।

এখন, শান্তিপূর্ণ শাসনব্যবস্থার জন্য সমাধান কী? নয়াদিল্লি, যে কিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছিল, একটা ভূমিকা রাখতে পারে। খালেদা জিয়া পণ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ভবিষ্যতেও জোট বাঁধবেন, যে দলটি মৌলবাদী এবং যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধী ভূমিকা নিয়েছিল পাকিস্তানি আর্মির সঙ্গে। ইসলামাবাদ এখনো ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

ইসলামের নামে আবেদন সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও ভারতীয় মুসলিম লীগ, যারা পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত, যাদের জন্ম পূর্ব বাংলায়, পরে যা পূর্ব পাকিস্তান হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তারাও চুপ থাকেনি। মানুষ আজ যথেষ্ট ধর্মানুরাগী ও উদার মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। প্রায় এক মিলিয়ন হিন্দু সেখানে বসবাস এবং ধর্মকর্ম পালন করে কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়া।

পাকিস্তান যদিও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তবে এতে কোনো অগ্রগতি নেই। কারণ বাংলাদেশিদের স্বাধীন চলাফেরা দমনে তাদের সেনাবাহিনী চালিয়েছে হত্যা ও নৃশংসতা।

এ বিষয়টি গ্যারি জি বাসের লেখা ‘দি ব্লাড টেলিগ্রাম-ইন্ডিয়া’স সেক্রেট ওয়ার ইন ইস্ট পাকিস্তান’ বইয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশিত এ বইয়ে বাংলাদেশের বিষয়ে কিছু মিসরিপোর্টিং লক্ষ করা যায়। মার্কিন দূতাবাসের বহু কর্মকর্তা এটিকে অনুমোদন করেননি।

প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ এখনো স্বাধীন হয়নি। কারণ এটি মোটা দাগেই বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। আমেরিকার সাহচর্য প্রধান ভূমিকা রাখছে বৈদেশিক অর্থ ঢাকাকে সরবরাহ করে, বাংলাদেশি টাকায় যা বিশাল।

যদ্দূর সম্ভব বাংলাদেশের নেতারা দেখেন না যে বিদেশি শক্তির ওপর তাদের নির্ভর করতে হবে, যা প্রকৃতই মূল্যায়িত হবে সঠিকভাবে। বিদেশিদের প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত করতে প্রচন্ড- বিবাদে লিপ্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মূর্ত কোনো পরিকল্পনা নেই। বস্তুত বিদেশি শক্তিদের সহযোগিতা অভ্যন্তরীণ সমস্যা কিছুটা মেটাতে পারে। তবে এটি দীর্ঘ সময়ের সমাধান নয়।

বাংলাদেশের ট্র্যাজেডি হচ্ছে, উভয় বেগমের কারণে তৈরি তাদের ব্যক্তিগত শত্রুতাকে, তাদের প্রতি সমর্থনকে বহিঃশক্তি সহযোগিতা দিয়ে আসছে। দীর্ঘ সময় ধরে তারা শাসন করে আসছেন রাজনৈতিক চিত্র, ফলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খুব অল্পই। কিন্তু কীভাবে এর পরিবর্তন আনা যায়? দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাদের কোনো বিকল্প নেই। এবং এর আগে বহু পদক্ষেপই আলোর মুখ দেখেনি।

মৌলবাদ কোনো সমাধান নয়, কারণ এটি রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মিলিয়ে ফেলতে চায়। এটি পৃথকভাবে প্রাচীন ভাবনার চর্চা করে থাকে। গণতন্ত্রের সঙ্গে এটি যায় না। বলা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোযোগ শুধু কীভাবে খপ করে ক্ষমতাকে কব্জায় আনা যায় সেই দিকে।

বিএনপিকে তার ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি পরিষ্কার নির্বাচনের ঘোষণা প্রত্যাশা করা খুব সম্ভব অতিরিক্তই হবে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে এটি ধারণা করা যায় যে, একটি পথ খোলা আছে তা হচ্ছে, দেশ (জনগণ) পরিষ্কার দুই ভাগে বিভক্ত হবে এবং রাজনৈতিক শত্রুতায় জড়িয়ে পড়বে। দারিদ্র্যকে সমূলে উৎপাটন করার যে প্রতিজ্ঞা দুই দলই করেছে, তা সম্ভব হবে না, যে পর্যন্ত না দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। আর এটি ঘটবে না, রাজনীতির ময়দানে যতক্ষণ না পরিষ্কার একটি শুরু আরম্ভ করা হয়।লেখক : ভারতীয় কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।