ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রুম্মান পরিবারের আর্তনাদ
বিশেষ প্রতিবেদক.চট্টগ্রাম: প্রতিবার উড্ডয়নের আগে এবং বিমান থেকে নেমে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রুম্মান তাহমিদ মোবাইল ফোনে কথা বলেন মা-বাবার সঙ্গে। গতকাল সোমবারও উড্ডয়নের আগে তিনি প্রথমে ফোন দিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বাবাকে ফোন দেন। তবে বাবা ঘুমে থাকায় কথা হয় ছোট বোনের সঙ্গে। ছোট বোনকে বলেন, ‘ফ্লাইট আছে, আমি একা যাচ্ছি।’
এর পর এফ-৭ যুদ্ধবিমানে করে ঘাঁটি থেকে আকাশে ওড়েন রুম্মান তাহমিদ। ১১টা ১৪ মিনিটে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে বিমানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাড়ে ১১টার দিকে বিমানটি বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। এরপর সাগরে শুরু হওয়া নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের তল্লাশি অভিযান এখনো চলছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিখোঁজ পাইলটের খোঁজ মেলেনি।
তাহমিদের মামা শাহাদত তাহের বলেন, বিমানবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তা ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জেনেছেন প্রায় ৪০ মিনিট পর্যন্ত আকাশে ওড়ে এফ-৭ যুদ্ধবিমানটি। এরপর নামার জন্য রানওয়ের কাছাকাছি এসে নিচু হয়েও আবার ওপরে ওঠে যায় এটি। এর কিছুক্ষণ পরই নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, হঠাৎ বিমানে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নিচে নামতে পারেননি তাহমিদ।
চার ভাইবোনের মধ্যে তাহমিদ বড়। বাবা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল কাদের চৌধুরী। মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। আবদুল কাদের পরিবার নিয়ে ঢাকার শান্তিনগরে থাকেন। তবে কাল দুর্ঘটনার সময় মা ছিলেন তাহমিদের নানার বাড়ি কক্সবাজারের কালিরছড়ায়। সেখানেই বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা ফোন করে তাঁকে বিমান দুর্ঘটনার খবর জানিয়েছেন বলে জানালেন তাহমিদের ছোট ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭৩ বিএম লং কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী আদনান তৌফিক।
আদনান বলেন, ছুটিতে তিনি বাসায় ছিলেন। তাহমিদ ফ্লাইটে যাওয়ার আগে ফোন দিয়েছিলেন। তখন ছোট বোনের সঙ্গে কথা হয়। পরে ঘুম থেকে উঠে বিমানবাহিনীর এফ-৭ যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর তিনি টেলিভিশনে দেখতে পান। তিনি জানতেন তাঁর ভাই এই বিমানটিই চালান। পরে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তাহমিদের আরেক ভাই সালমান তামজিদ ৬৫ বিএম লং কোর্সের একজন প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। তবে প্রশিক্ষণের এক বছরের মাথায় আহত হওয়ায় তিনি সেটি আর চালিয়ে যেতে পারেননি। বর্তমানে মালয়েশিয়ার পড়ালেখা করছেন তিনি। ছুটিতে ২৬ জুন বাড়িতে এসেছেন সালমান। এখন চট্টগ্রামে পুরো পরিবারের সঙ্গে তিনিও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ভাইয়ের জন্য। বললেন, ‘দোয়া করবেন। ভাইয়া যেন আমাদের মাঝে ফিরে আসে।’