• বৃহস্পতিবার , ৭ নভেম্বর ২০২৪

`নারায়ণগঞ্জে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে বিচার বিচার খেলা হচ্ছে’ প্রথম আলোর গোলটেবিলে মেয়র আইভীর চ্যালেঞ্জ


প্রকাশিত: ৭:২১ পিএম, ১২ জুন ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫৯ বার

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে প্রথম আলোর গোলটেবিলে বক্তারা। ছবি: পাপ্পু ভট্টাচার্য্য জেলা প্রতিনিধি নারায়নগঞ্জ: ১২ জুন ২০১৪:  নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, অপহরণ, গুম-খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ও দায়ী কোনো গডফাদার পরিবার নারায়ণগঞ্জে থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, একের পর এক অপহরণ, খুনের ঘটনা ঘটছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের সাজা হচ্ছে না। তবে এভাবে আর চলবে না। যত বড় গডফাদারই হোক না কেন, আর কোনো অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে প্রথম আলো আয়োজিত ‘অপহরণ গুম খুন, কোথায় চলছে নারায়ণগঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মেয়র আইভী এ কথা বলেন। আলোচনায় জেলার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিক, নারীনেত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের যে সম্ভাবনা ছিল, তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। আর এই অবনতির জন্য তাঁরা রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা, গডফাদার পরিবারের পেছনে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সমর্থনকে দায়ী করেন। নারায়ণগঞ্জকে আতঙ্ক, ভয় ও সন্ত্রাসের জনপদের অবস্থান থেকে বের করে আনতে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিনা হায়াৎ বলেন, কেউ না থাকলেও তিনি নারায়ণগঞ্জে থেকেই গডফাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবেন। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা গুম-খুনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় ও সোচ্চার হওয়ায় এই লড়াইয়ে জয়ের ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় আশাবাদের কথা ব্যক্ত করেন তিনি। সাংসদ শামীম ওসমানের নাম উল্লেখ না করে আইভী বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর পালানো অবস্থা থেকে দেশে ফিরে ওই ব্যক্তি একই কাজে লিপ্ত হন। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। কেননা নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও থানায় ওসি হিসেবে আসতে হলে তাঁদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। প্রতি মাসে মাসোহারাও দিতে হয়। ফলে তাঁরা কীভাবে সঠিক কাজ করবে।

ওসমান পরিবারের পাশে থাকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মেয়র বলেন, ‘একটি-দুটি পরিবারের পাশে থাকলে হবে না। জনগণের পাশে থাকতে হবে। এক পরিবারের পাশে থাকবেন আর বাকি পরিবার ওই পরিবারের কারণে আতঙ্কে থাকবে, তা তো হতে পারে না।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি মনে করে ৬৪ জেলায় ৬৪ জন গডফাদার থাকলেই তাদের কাজ হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ বা কর্মীদের তাদের দরকার নেই। তিনি বলেন, এই ভাবনা ঠিক না। সাধারণ মানুষ জেগেছে। যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটবে।

সাত খুনের ঘটনায় নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ে সুস্মিতা সরকার আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, তাঁদের আর কিছু চাওয়ার নেই। তাঁরা কেবল বিচার চান। তাঁরা চান এ ধরনের আর একটি ঘটনাও যেন জেলায় আর না ঘটে।

এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা বলেন, রাজনীতিবিদদের কাছে চাওয়া তাঁরা আমাদের নিরাপত্তা দেবেন। তিনি বলেন, ত্বকীর মতো একজন নিরীহ শিশুকে হত্যা করা হলো। অথচ বিচার হবে না, তা হতে পারে না। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে বিব্রত হই।  

নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, বিচার হচ্ছে লোকদেখানো। ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে না। এই ঘটনা আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে হলেও এর নির্দেশদাতা হলেন শামীম ওসমান। অথচ তাঁদের পাশে আছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এই হলে কোনো হত্যার বিচার হবে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকে নারায়ণগঞ্জে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে বিচার বিচার খেলা হচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, বিচারের ওপর এই ইনডেমনিটি সুখকর নয়।

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ অদূর ভবিষ্যতে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে বলে মনে হয় না। এখানকার মানুষ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলন করছে, এ কেমন কথা। নিরাপত্তা দেওয়া তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হালিম আজাদ বলেন, গত দুই-তিন বছর ধরে যেসব গুম-খুন হচ্ছে, তা সবই একই সূত্রে গাঁথা। আর্থিক ক্ষেত্রগুলোর আধিপত্য নিয়ে এ ঘটনাগুলো ঘটছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সাত খুনের সঙ্গে র্যাবের কিছু বিপথগামী সদস্য জড়িত। তবে এই ঘটনায় র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মাদকে রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। মূল আসামি নূর হোসেনকে পুলিশ প্রশাসনের সবাই পালিয়ে যেত সহায়তা করেছে। সাত খুনের সঙ্গে রাঘব-বোয়ালদের নাম আসছে। অথচ তাদের গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে না।

নারীনেত্রী লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে নিহত মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিকামী মানুষের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসতো। আর এখন সেই নদীতে খুনের শিকার মানুষের লাশ ভাসে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। আলোচনার সূত্রপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগোচ্ছে। এ দেশের মানুষের চাওয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হবে। অপরাধী যত শক্তিধরই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে। এটাই সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের দাবি।

গোলটেবিলে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি নুরউদ্দীন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার প্রমুখ বক্তব্য দেন।