• বৃহস্পতিবার , ৭ নভেম্বর ২০২৪

নগ্নতা এখন অতীত- তাই প্লেবয়-আর নগ্ন ছবি ছাপবে না


প্রকাশিত: ৩:২৭ পিএম, ১৩ অক্টোবর ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২১ বার

নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে প্রিয়া রহমান:   সময়ের ফেরে কত কিই না বদলে যায়। নগ্নতাকে সম্বল করে যার উত্থান সেই প্লেবয় ম্যাগাজিন জানিয়েছে, আগামী সংস্করণ থেকে আর নগ্ন ছবি প্রকাশ করবে না তারা। এ বিষয়ে হয়তো সন্দেহ হতে পারে অনেকের; মনে হতে193153_394513_Lindsay_Lohan_Plaboy পারে আবেদন কমে যাওয়া সাময়ীকীর কাটতি বাড়ানোর নতুন কোনো কৌশল। না, এটি কোনো গুজব নয়, খোদ প্লেবয়ের প্রধান সম্পাদক হিউ হাফনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্লেবয়ের পরবর্তী সংস্করণ নিয়ে গত মাসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়েছে।

কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত? প্লেবয়ের নাম শুনলেই যেখানে চোখের সামনে ভেসে ওঠে নগ্নতা; সেই ম্যাগাজিন কেন এখন আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছে? ম্যাগাজিনটির কর্ণধারেরা অবশ্য এসব প্রশ্ন উঠতে পারে বলে ধরেই নিয়েছিলেন। আর তাইতো নিজে থেকেই এমন সিদ্ধান্তের পেছনে যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেছেন তারা।

এ বিষয়ে প্লেবয়ের সিইও স্কট ফ্ল্যান্ডার্স বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ হয়েছে এবং তাতে আমরাই জয়ী… বলতে গেলে আপনি এখন যৌনতা থেকে মাত্র এক ক্লিকে দূরে, তাও প্রায় বিনামূল্যে। এমন সন্ধিক্ষণে তাই এসব (নগ্নতা) এখন অতীত।’

হ্যাঁ, সময়ের পরিক্রমায় এখন আর সেই আবেদন নেই প্লেবয়ের। যেই যৌনতাকে পূঁজি করে প্লেবয়ের পথচলা; স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের কারণে এখন আর তেমন আকর্ষণ নেই লাখো পুরুষের ঘুম কেড়ে নেওয়া প্লেবয়ের মোহনীয় ভঙ্গিমার সেসব ছবির। বিপরীতে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতায় ধীরে ধীরে কমেছে প্লেবয়ের গুরুত্ব ও আভিজাত্য।

অ্যালায়েন্স ফর অডিটেড মিডিয়া (এএএম) এর হিসেব মতে, প্লেবয়েল কাটতি এখন মাত্র ৮ লাখ কপি। অথচ ১৯৫৩ সালের প্রথম সংস্করণে হলিউড হার্টথ্রুব মেরিলিন মনরোর কভার ফটো দিয়ে যাত্রা শুরু করা প্লেবয় ১৯৭৫ সালের দিকে ৫৬ লাখ কপি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। প্লেবয়ের স্বর্ণযুগে ম্যাগাজিনটিতে লিখেছেন মার্গারেট অ্যাটউড, হারুকি মুরাকামির মতো লেখকরা।

প্লেবয়ে সাক্ষাত্কার ছাপানোর জন্য মুখিয়ে ছিলেন ম্যালকম এক্স, ভ্লাদিমির নাবোকভ, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, জিমি কার্টারের মতো খ্যাতিমানরা। প্লেবয়ের প্রচ্ছদ দিয়েই পরিচিত হয়েছেন ম্যাডোনা, শ্যারন স্টোন, নাওমি ক্যাম্পবেলের মতো তারকা।

তুমুল জনপ্রিয় ম্যাগাজিনটির সমালোচনাও কম হয়নি সেই সময়। ডান-বাম দুই ঘরানার বুদ্ধিজীবীই প্লেবয়কে টার্গেট করেছেন। ডানপন্থীরা নগ্নতা আর বামপন্থীরা নারীকে পণ্যায়ীত করার অভিযোগ এনেছেন প্লেবয়েল বিরুদ্ধে। সমালোচনার মুখে প্লেবয়ের উত্তর ছিল, ‘নগ্নতা কোনো কুসংস্কার নয়।’ সমালোচকরাও তখন প্লেবয়ের জনপ্রিয়তাকে অস্বীকার করতে পারেননি। এখনো অ্যাপল বা নাইকি বা গুগলের মতো লোগো দিয়েই চেনা যায় প্লেবয়কে।

ম্যাগাজিনের অন্যতম প্রবীণ সম্পাদক কোরি জোনস ও প্রধান সম্পাদক হিউ হেফনার জানিয়েছেন, আগামী বছরের মার্চ সংস্করণ থেকেই কার্যকর হচ্ছে নগ্ন ছবি না ছাপার এই সিদ্ধান্ত। তবে নারীদের উত্তেজক ভঙ্গিমায় দেখা যেতে পারে তাতে।
এ বিষয়ে জোনস বলেন, ‘দয়াকরে আমাকে ভুল বুঝবেন না। ১২ বছর বয়সের আমি বর্তমান আমির উপর অনেক বিরক্ত, কিন্তু বাস্তবে এটাই হচ্ছে সঠিক কাজ।’

‘নগ্নতা কুসংস্কার নয়’ এমন প্রচারণার যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কথা মুখে বললেও প্লেবয়ের সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে অন্য আরেক কারণ। চয় দশকের পুরনো ম্যাগাজিনটি আগস্টে তাদের অনলাইন সংস্করণ থেকে নগ্ন ছবি সরিয়ে ফেলেছিল। তখন প্লেবয়ের পাঠকদের গড় বয়স ৪৭ থেকে নেমে তিরিশের কোটায় নেমে আসে। ৪০ লাখ পাঠক বেড়ে থেকে দাঁড়ায় এক কোটি ৬০ লাখে।

সেই সাফল্যেই এবার ছাপা সংস্করণ থেকে নগ্ন ছবি বাদের এমন পরিকল্পনা। এখন থেকে তাহলে প্লেবয়ের পাঠকরা ‘শুধু আর্টিকেলের জন্য ম্যাগাজিনটি পড়েন’ – এমন দাবি করতেই পারেন!