• বৃহস্পতিবার , ১০ অক্টোবর ২০২৪

কুকি চিন সন্ত্রাস-দমনে নেমেছে যৌথবাহিনী


প্রকাশিত: ৩:০৫ পিএম, ৮ এপ্রিল ২৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৭ বার

লাবণ্য চৌধুরী : সন্ত্রাসীদের নাম কুকি চিন বা কেএনএফ। এদের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে গোটা বাংলাদেশ বিস্মিত! সশস্ত্র এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠি হঠাৎ করে কি ক্ষমতা পেয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হলো তা নিয়ে সারাদেশেই চলছে আলাপ আলোচনা। তাদের শক্তি ও গোলাবারুদের উৎসই বা কে বা কারা? এদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ রয়েছে কিনা তা নিয়েই নানা রকমের আলোচনা।যদিও বেশ কয়েক কেএনএফ সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে; কিন্তু মূল নাটের গুরু এবং খোয়া যাওয়া পুলিশের অস্ত্র ও লুটের টাকা এখনও উদ্ধার হয়নি।

এদিকে আজ সোমবার বান্দরবানের থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ। সেইসঙ্গে ওই গাড়ির চালক ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে। গ্রেপ্তাররা হলেন- গাড়িচালক মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন সাগর, কেএনএফ সদস্য ভানুনুন নুয়ান বম, জেমিনিউ বম, আমে লানচেও বম।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, গাড়িচালক মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন সাগরকে থানচির টিএন্ডটি পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবান সদরের রেইচা চেকপোস্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাকি কেএনএফ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

যাহোক- থানচি ও রুমায় সোনালী ব্যাংকের দুটি ও কৃষি ব্যাংকের একটি শাখায় হামলা ও লুটের ঘটনায় নতুন করে সামনে এসেছে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফের নাম। প্রশ্ন উঠেছে কেএনএফ কী ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করেছে, যার জানান দিতে মাত্র ১৬ ঘন্টার ব্যবধানের ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালিয়ে টাকা লুট করেছে। পুলিশের চেকপোস্ট ও থানায় হামলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের তথ্য বলছে, কুকি চিন ব্যাপক শক্তিশালী হয়েছে এমন ধারণা ঠিক নয়। থানচি ও রুমায় সংগঠনটি যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার পেছনে শক্তি জানান দেওয়ার চেয়েও তাদের আর্থিক ভঙ্গুর দশা বেশি কাজ করেছে। কেননা রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় হামলা করলেও টাকা লুট করতে পারেনি। ফলে বাধ্য হয়েই পরদিন দিনের বেলায় থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি করেছে।

সেখান থেকে ক্যাশে থাকা টাকা ও গ্রাহকের তাৎক্ষনিক টাকা লুট করেছে। এতে বোঝা যায় সশস্ত্র এই সংগঠনটি আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। থানচি ও রুমার ঘটনার পর কুকি চিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশ। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। কুকি চিনের ‌‌প্রধান সমন্বয়কারী চেওশিম বমকে আটকের কথাও জানিয়েছে র‍্যাব।

বান্দবানের অভিযানের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, সন্ত্রাসী এই সংগঠনটি অনেক বড় তা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে এটাও ঠিক গত দুই বছরে তাদের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। কেএনএফের সামরিক শাখা কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি বা কেএনএর সদস্য সংখ্যাও বেড়েছে।

এই সদস্যরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের চিন রাজ্য থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এদের একটা কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু বড় ধরনের হামলা পরিচালনার সক্ষমতা এদের নেই। এই কর্মকর্তারা বলেন, ‘কুকি চিন নির্মূল করা হবে। আশা করছি, এখানকার (পার্বত্য চট্টগ্রাম) সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ থাকবে না।’

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কেএনএফ বান্দরবানের পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে ছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।’
বছর দুয়েক আগে কেএনএফ সংগঠনের নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে দাবি করেছে, রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা।

সেগুলো হলো বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি। তারা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম—এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করেছে। সেই সময় থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা একাধিক বিবৃতিতে কথিত এই সংগঠন জানায়, কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে একটি সশস্ত্র দল গঠন করেছে তারা।

তাদের মূল সংগঠনের সভাপতি নাথান বম। তারা তখন দাবি করে, তাদের সামরিক শাখার শতাধিক সদস্য গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে পাড়ি জমান বছর তিনেক আগে। ২০২১ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল ফিরে আসে। চলতি বছর তারা আত্মগোপনে যায়।

অবশ্য কেএনএফ তাদের সদস্য সংখ্যা শতাধিক বললেও বছর দুয়েক আগে তাদের সশস্ত্র শাখার সদস্য সংখ্যা ২০-২৫ জনের মতো ছিল বলে সূত্রগুলোর কাছে তথ্য ছিল। তবে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যে তথ্য আছে তাতে এটা নিশ্চিত গত দুই বছরে সংগঠনটির আকার বেশ খানিকটা বেড়েছে।

স্থানীয় সূত্র ও গোয়েন্দা তথ্য বলছে, নারী-পুরুষ মিলে এই সংগঠনের সশস্ত্র শাখার সদস্য ১৫০ থেকে ২০০-এর মতো। তবে কেএনএফের অবস্থানে বিশ্বাসী সদস্য সংখ্যা এর দ্বিগুণ হবে।কেএনএফ ফেসবুকে দাবি করেছিল, তাদের একটি কমান্ডো দল আছে, যার নাম হেড হান্টার কমান্ডো টিম। তাদের দাবি কমান্ডোরা মিয়ানমারের কাচিন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, বান্দরবানের এলাকাগুলোতে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলেই আছে। তারা হামলার আশঙ্কা করছেন না। বান্দরবানের একটি থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, কেএনএফের খুব বেশি প্রভাব নেই। বমদের মধ্যেও এই সশস্ত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান রয়েছে। দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে টিকে থাকার মতো লোকবল, আর্থিক সামর্থ্য সংগঠনটির নেই।