• শনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৪

খারাপ সংবাদের শিরোনাম না হওয়ার শপথ ছাত্রলীগের


প্রকাশিত: ১:১৯ এএম, ২৫ জানুয়ারী ১৭ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৪ বার

বিশেষ প্রতিনিধি  :  আর কখনও খারাপ সংবাদের শিরোনাম না হওয়ার শপথ নিয়েছে ক্ষমতাসীন 12আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের এ শপথ পড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু ছাত্রলীগের মূলনীতিতেই আছে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। তাই ছাত্রলীগ কর্মীদের—শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়েজিত পুনর্মিলনী এবং সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের শিক্ষা অর্জনে বেশি সময় ব্যয় করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমাদেরকে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে শান্তির পথে এগিয়ে যেতে হবে প্রগতির মধ্য দিয়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর ওই মাদকাসক্তি বা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে হবে। আর এ পথে যারা যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় একজন শিক্ষার্থীর জীবনকে দেশ ও জাতির জন্য অনেক মূল্যবান আখ্যায়িত করে বলেন, ‘তারা দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারবে। কিন্তু নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে, এটা কখনও হয় না। হতে দেয়া যায় না।’

শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন খালেদা জিয়া হুমকি দিল—আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে তার ছাত্রদলই যথেষ্ট, তখন আমি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে কাগজ, কলম, বই তুলে দিয়ে বলেছিলাম—ওটা পথ না; পথ হচ্ছে শিক্ষার পথ। আমরা বাংলাদেশকে নিরক্ষরতামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে—ছাত্রলীগ কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায়, গ্রামে, মহল্লায় কোন অক্ষরজ্ঞানহীন লোক আছে কিনা তার খোঁজ নিতে হবে এবং নিরক্ষরকে অক্ষর জ্ঞান দিতে হবে। এজন্য সবাইকেই একযোগে কাজ করতে হবে যেন বাংলাদেশকে আমরা দ্রুত নিরক্ষরতামুক্ত করতে পারি।’

সমাবেশে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পক্ষে বক্তৃতা করেন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অগ্রজ ও সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাইফুর রহমান সোহাগ সভায় সভাপত্বি করেন ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বর্তমান ছাত্রসমাজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, ১৪ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৩টায় সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান। তার আগমনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকাটি নবীন-প্রবীণ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে পায়রা উড়িয়ে পুনর্মিলনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় পুনর্মিলনীর থিম সং রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ পরিবেশিত হয়।

দেশের বর্তমান উন্নয়ন অগ্রগতিকে ‘আলোর পথের যাত্রা’ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তার ভাষণে বলেন, ‘আলোর পথের যাত্রা—আমরা শুরু করেছি। দেশকে প্রগতির পথে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এই অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায় সেজন্য ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে নিজেকে তৈরি করতে হবে। কেননা এই দেশ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় একদিন তোমাদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ উঠে আসবে।’

‘সে সময় যেন আর কোন কারণে পিছনে ফিরতে না হয়। আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বক্তৃতার শুরুতে নিজেকে ছাত্রলীগের একজন কর্মী আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই ছাত্রলীগের নেতা নয়, একজন কর্মী ছিলাম এবং এখনও কর্মীই আছি।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস—বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার কারণ ছাত্রলীগের জন্ম হয়েছিল এমন একটি সময়ে যখন আমাদের এই মাতৃভাষা বাংলাকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে বাংলাকে বাদ দেবার ঘোষণা যখন পাকিস্তানি শাসকরা দিল, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন ছাত্র। তিনি তখন ছাত্রলীগ সংগঠন গড়ে তোলেন এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে মর্যাদা দেয়ার জন্য ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘৪ জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হয় আর ১১ মার্চ ভাষার জন্য প্রথম আন্দোলনের কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচি থেকে হরতালের ডাক দেয়া হলে বঙ্গবন্ধুসহ অনেক ছাত্রনেতা সেদিন গ্রেফতার হন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মধ্যদিয়েই ছাত্রলীগের জন্ম। আর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বাঙালির প্রতিটি অর্জনের সাথে ছাত্রলীগের ইতিহাস জড়িত রয়েছে। প্রতিটি অর্জনের সাথে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামেই অগ্রসেনানীই ছিল ছাত্রলীগ। জাতির পিতা যখন যেটা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিতেন তখন সেই বিষয়ে তিনি ছাত্রলীগকেই সর্বপ্রথম নির্দেশ দিতেন, তারাই মাঠে যেত। কি শ্লোগান হবে, জাতির পিতা তা বলে দিতেন। ছাত্রলীগ সেটা মাঠে নিয়ে যেত।’