হাসিনার মোটিভ-পুড়ল মানবেন্দ্র’র ঘর-পাকড়াও ৮ আওয়ামী লীগার
হাসিনার মোটিভ না এঁকেও পুড়ল মানবেন্দ্র’র ঘর। এ ঘটনার জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’র মোটিফ নির্মাণকারী শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন মানবেন্দ্র ঘোষ। তার বাড়িতে আগুনের ঘটনায় ৮ জন আওয়ামী লীগারকে গ্রেফতার করা হয়েছে
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : ফেসিস্ট হাসিনার মোটিভ না এঁকেও পুড়ল মানবেন্দ্র’র ঘর। এ ঘটনার জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’র মোটিফ নির্মাণকারী শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন মানবেন্দ্র ঘোষ। তার বাড়িতে আগুনের ঘটনায় ৮ জন আওয়ামী লীগারকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, আটক সবাই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্য। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের চান্দর গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।আগুনে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ির আধপাকা কাচারিঘর এবং ঘরে থাকা অন্তত ৩০টি ভাস্কর্য এবং অন্যান্য জিনিস পুড়ে যায়।
ঘটনার পর বৃহস্পতিবার মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পরিদর্শনে যান অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শিল্পী ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তাদানে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের সবাইকে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’
ইতোমধ্যে ভাস্করশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের পুড়ে যাওয়া ঘরটি পুননির্মাণে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটিকে সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তদন্তকাজ শেষ হলে জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শিল্পীর ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানে ঘরটি পুননির্মান করা হবে।’
তবে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘আমার পরিবার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। মানবেন্দ্র বলেন, এটা যেমন সত্য, তেমনি আমার শিল্পসত্ত্বা চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আমি জানি না, ভবিষ্যতে আমি সচেতনভাবে শিল্পচর্চা করতে পারব কি না।’
শোভাযাত্রার জন্য বাঘের মোটিফ বানানোর কথা জানিয়ে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের আগের দিন রাজ্যসভা নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে আমার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। বলা হয় আমি নাকি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি তৈরি করেছি।’একবার পুড়িয়ে দেওয়ার পর আনন্দ শোভাযাত্রায় ঠাঁই পাওয়া ওই মুখাকৃতির সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাবয়বের মিল রয়েছে বলে অনেকের ভাষ্য।
পরে ফেসবুক পেইজে তার সম্পর্কে ওই প্রচারণা দেখে তিনি তা পুলিশকে অবহিত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, নিরাপত্তার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হয়।’কিন্তু মধ্যরাতে আমার বাড়ির কাচারি ঘরে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত আমার বাড়িতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে শিক্ষাজীবন থেকে এ পর্যন্ত আমার হাতে তৈরি সব ভাস্কর্যসহ ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
ওদিকে, মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে’ বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।আজ এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এ তথ্য জানিয়ে বলছে, দ্রুততম সময়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।বিবৃতিতে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। তদন্তকাজ চলমান রয়েছে, কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে এক ফেসবুক পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ীতে যারা হামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে ধরার জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি পুলিশের আইজিকে পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন।’
ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিন জুলাইয়ে বিতাড়িত আওয়ামী লীগ অনলাইনে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষকে আক্রমণের উস্কানি দিচ্ছিল তাদের ভাষ্যে “হাসিনার এফিজি বানানোর অপরাধে’! এদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।’ মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িটির অবস্থান পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাড়ির কাছাকাছি।