• বুধবার , ১৬ অক্টোবর ২০২৪

৬ চাপে অন্তবর্তী সরকার


প্রকাশিত: ১০:৫৪ পিএম, ১১ অক্টোবর ২৪ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯ বার

00 দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
00 প্রশাসনে অস্থিরতা
00 আইনশৃঙ্খলা
00 পোশাক খাত
00 সড়কে বিশৃঙ্খলা
00 রাজনৈতিক বিতর্ক

 

শফিক রহমান : পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের নানামুখি চাপ ও দুর্নীতিবাজদের বিছানো জালে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার হিমসিম খাচ্ছে।সরকার নানাভাবে চেষ্ঠা চালালেও ফ্যাসিস্টদের রেখে যাওয়া প্রশাসনযন্ত্র অনেক ক্ষেত্রে ভেজাল সৃষ্টি করে বেকায়দায় ফেলছে। ইতিমধ্যে ডিসি পদায়ন নিয়ে বিষয়টি প্রকাশ্য সামনে এসেছে। এর বাইরেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, প্রশাসনে অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা সমস্যা, নানা বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক, পোশাক খাতে অস্থিরতাসহ সড়কে বিশৃঙ্খলা সরকারকে চাপে ফেলছে।

অথচ সরকারের মাত্র দুই মাস পার হলো; তাতেই যেনো অস্থির মানুষ। ফ্যাসিস্টদের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জালে সৃষ্ট অস্থিরতার চাপ এসে পড়ছে অন্তবর্তী সরকারে। মানুষ চাচ্ছে দৃশ্যমান কিছু, বড় ধরনের এ্যাকশন, লুটেরা দুর্নীতিবাজদের শাস্তিসহ দ্রব্যমূল্যের বাজারের উত্তাপ নিয়ন্ত্রণ। যা নিয়ে এরমধ্যেই নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা সামনে এসেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তো প্রকাশ্যেই বলছেন, সরকার চলছে ঢিলেঢালা গতিতে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্তমান অবস্থান নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, বিপ্লবী সরকারের যে চরিত্র হওয়া দরকার এই সরকারের ভেতরে সেটা দেখছি না। ফলে নানা সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে। লোক দেখানো সংলাপের জন্য দুই মাস পরে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকা হয়েছিলো সেখানে কোন রোডম্যাপ দেয়া হয়নি। দুই মাসে আহত পরিবারগুলোর হাতে সহায়তা পৌঁছায়নি। গণ অভুথ্যানের স্বৈরাচারের মূল তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এতো অন্ধকারে থেকে সংস্কার হয় না।

গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, গত দুই মাসে আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে কোন অগ্রগতি দেখিনি। বাজার নিয়ন্ত্রণেও সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ১৫ বছরের যে জঞ্জাল যেখান থেকে মুক্ত হওয়া আসলেই কঠিন। পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এখনো কোনো স্থিতিশীলতা আসেনি।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার ইয়াসমিন মনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস মানে সময়টা কম নয়। পতিত সরকারের পতিত পেতাত্নারা যেখানে সরব সেখানে সফলতা আসে না। মৌলবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এক গ্রুপ উঠে পরে লেগেছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বলেন, শুধু সরকারের ওপর ভরসা করে থাকলে হবে না। নিজ জায়গা থেকে সবাইকে সংস্কার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর করতেও দলের ভেতরে সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি সংস্কার কাজে সাধারণ মানুষকেও সুযোগ দিতে হবে যারা এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল।

সরকারের অবস্থান সম্পর্কে সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসের মাথায় জনগণ ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছে আগেই ভালো ছিলো। তাহলে এই বিপ্লবের কি লাভ হলো? যেভাবে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে, বাণিজ্য উপদেষ্টা একটা কথাও বলেননি। তার কি কোনো দায়িত্ব নেই? তিনি বলেন, সরকার সংস্কারের জন্য যে কমিটি করেছে; সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের কাউকে রাখা হয়নি কেনো? পরবর্তী যারা ক্ষমতায় আসবে তারা কিভাবে কাজ করবে। ড. ইউনুসের প্রতি আহ্বান জানাই ‘রিসেট বাটনে’ এমনভাবে চাপুন; যেন দ্বিতীয়বার এসে আর কাউকে খুব শীঘ্রই ওই বাটনে চাপতে না হয়। তা না হলে জনগণ এমন ভাবে রিসেট বাটনে চাপবে যে এই সরকারের নাম নিশানা মুছে যাবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার থেকে লাভ করেছে। অন্যদিকে কিছু ইস্যু অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য নতুন করে সামনে এসেছে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক মুশতাক খান মনে করেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।তিনি বলেন, মানুষ কিছু অ্যাকশন দেখতে চায়, তাতে সবকিছুর সমাধান হবে না। এখানে যে কোনো সেক্টরে হাত দিলেই আপনি দেখবেন অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনিয়মের কোনো শেষ নাই। “আপনি এমন কিছু করবেন না যা পরে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বড় বড় কয়েকটা কাজ করতে হবে। যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে একটা পরিবর্তন আসছে।”

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে ডিমের দাম ডজন প্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়া।গত পাঁচই অক্টোবর বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশের বাজারে ডিম এবং মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে গত ২০ দিনে ২৮০ কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সুদের হার বাড়িয়ে তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু এ বিষয়টি যথেষ্ঠ নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

“বিষয়টা এ রকম নয় যে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে। সিন্ডিকেটগুলো থামাতে হবে। বাজারে এখনো সিন্ডিকেট কাজ করছে হয়তো। এই সিন্ডিকেট যদি কাজ করতে থাকে, তাহলে সেগুলোকে অবশ্যই ভাঙতে হবে,” বলেন মুশতাক খান।“যেসব বড় সিন্ডিকেটের মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে এবং তারা সে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, আপনাকে সে টাকায় হাত দিতে হবে।”

পোশাক খাত

নানা দাবিকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের আন্দোলন এখনো বিক্ষিপ্তভাবে চলছে। এই আন্দোলনের ব্যাপকতা প্রথম দিকে আশুলিয়া এবং গাজীপুরে ছিল। আশুলিয়া এলাকায় পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হলেও গাজীপুরে এখনো বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন চলছে।প্রায়শই কোন না কোন ফ্যাক্টরিতে অস্থিরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে আশংকা করছেন, এ পরিস্থিতি আবারো যে কোন সময় বড় আন্দোলনের দিকে রূপ নিতে পারে।সরকারের তরফ থেকে ক্রমাগত পরিস্থিতি উন্নতির দিকে বলা হলেও এটি পুরোপুরি স্বাভাবিক নয় বলেই মনে করেন অনেকেই।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি রুবানা হক বর্তমান পরিস্থিতিকে পোশাক খাতের জন্য একটা ‘বড় ধাক্কা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রুবানা হক বলেন, বারো থেকে পনেরো দিন প্রচুর ফ্যাক্টরি বন্ধ থেকেছে। একেবারে বন্ধ। কেউ কেউ আবার ধরেন দুপুর পর্যন্ত চালাতে পেরেছে এরপর পারেননি। এগুলো তো পুরাটাই লস। আর এর চাইতে বড় লস যেটা হচ্ছে সেটা হলো আমাদের যারা ক্রেতা তারা তো সরে যাচ্ছেন।

“তারা বলছেন যে আমরা তোমাদের সাথে আছি, বাংলাদেশকে লাগবে সবই বলছেন কিন্তু আমরা তো এটার বাস্তবতাটা জানি। বাস্তবতাটা হলো অন্তত শতকরা ২৫-৩০ ভাগ অর্ডার ডিসেম্বরের মধ্যে সরে যাবে।”তিনি বলেন, পোশাক খাতে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ক্রেতারা কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারতে, পাকিস্তান এমনকি মিয়ানমারে চলে যাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনির ঘটনা এখনো একটি চিন্তার বিষয় হয়ে রয়েছে। যদিও এই প্রবণতা অগাস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় কমেছে।সর্বশেষ ১০ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শিমুলতলা এলাকায় গণপিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হ্ছে, স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামকে ছুড়িকাঘাত করে এক যুবক। পরে স্থানীয়রা তাকে পিটুনি দিলে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া, একই দিন ঢাকার হাতিরঝিল এলাকায় ফ্ল্যাট দখলকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তিকে তারা বাসায় ঢুকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।এমনিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তার ওপর দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বাড়তি টেনশন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মুখেও সে কথা শোনা যায়।

গত বুধবার ঢাকার বনানীতে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ হলো, এই পূজা সুন্দরভাবে উদযাপন করা।শহিদুর রহমান বলেন, একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো গুজব। তুচ্ছ কোনও ঘটনাকে গুজব আকারে অত্যন্ত বড় হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করা হয়। এর মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে। আমাদের সাইবার ইউনিট সার্বক্ষণিকভাবে এটি মনিটরিং করছে।
গত ৯ই অক্টোবর ঢাকার বারিধারা এলাকায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নতি করে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাথে চাঁদাবাজির বিষয়টিও সম্পর্কিত। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে সরকারে পরিবর্তনের সাথে সাথে চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে মাত্র। এ বিষয়টি স্বীকার করেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। গত ৭ই অক্টোবর তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুর্নীতি কিছুটা কমেছে, তবে চাঁদাবাজি কমেনি।

সড়কে বিশৃঙ্খলা

গত দুই মাসে ঢাকা এবং তার আশপাশের এলাকায় যানজটের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠছে প্রতিদিন। কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে যেতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগছে।যানজটে নাকাল মানুষ প্রতিদিনই ফেসবুকে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছেন। গত পাঁচই অগাস্টের পর অনেকের মনে প্রত্যাশা ছিল যে সড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা কাটিয়ে হয়তো শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি উল্টো হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটিও নিয়েও রয়েছে নানা বিশ্লেষণ।

কেউ বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না। কেউ বলছেন, পুলিশের শিথিলতার কারণে ট্রাফিক আইন মেনে চলা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।গত ১৬ই সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর সমাধান খুঁজতে পুলিশ ও দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি সে বৈঠকে বলেছিলেন, ‘আমাদের যানজট নিরসন হবে। অবিলম্বে এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’

প্রশাসনে অস্থিরতা

জনপ্রশাসনে অস্থিরতা এবং এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় আকারে ঘুস লেনদেনের খবর প্রকাশিত হয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে। সেখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং একজন যুগ্ম সচিবের মধ্যে কথিত হোয়াটস্অ্যাপ বার্তা চালাচালি নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে।জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে ‘উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার।বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, কেন্দ্র থেকে মাঠ প্রশাসনে নীরব অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে গোটা প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিতর্ক

রাজনৈতিক বিতর্ক যেন অন্তর্বর্তী সরকারের পিছু ছাড়ছে না। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক দৃশ্যমান হয়েছে।নিউ ইয়র্ক সফরকালে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিটিয়েটিভ-এর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে গণঅভ্যুত্থানের পেছনে মূল কারিগর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন, যেটিকে অনেক ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে অনেকে মতামত প্রকাশ করেন যে এই আন্দোলন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে, যার সামনের সারিতে ছিল ছাত্ররা। রাজনৈতিক দলগুলোও দাবি করছে, এই আন্দোলনে তাদের ভূমিকা কম নয়।আরেকটি বিতর্কে বিষয়ে হচ্ছে ‘রিসেট বাটন’। ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিটিয়েটিভ-এর অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, তারা (তরুণরা) বলেছে ‘রিসেট বাটন’ চেপেছে এবং পুরাতন বিদায় নিয়েছে।একই কথা তিনি বলেছেন, ভয়েস অব আমেরিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে। এ বিষয়টি নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়।

এই রিসেট বাটন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এতদূর গড়িয়েছে যে অনেকেই তাদের ফেসবুক পোস্টে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লিখছেন ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’। অর্থাৎ, ‘ইউনূসকে হটাও’। অনেকেই বলছেন, চাইলেই অতীত মুছে দেয়া যায় না।

বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে। ১০ই অক্টোবর তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক বিবৃতি দিয়েছেন।সে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘রিসেট বাটন’ চাপার কথাটি উল্লেখ করে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, যা বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং কোটি মানুষের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার হরণ করেছে, সেটি থেকে বের হয়ে এসে নতুনভাবে শুরু করার কথা বুঝিয়েছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘তিনি কখনোই বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেননি। এখানে উল্লেখ্য যে, কেউ যখন কোনও ডিভাইসে রিসেট বোতাম চাপেন, তখন তিনি নতুন করে ডিভাইসটি চালু করতে সফটওয়্যার সেট করেন। এতে হার্ডওয়্যার পরিবর্তন হয় না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের হার্ডওয়্যার।’

‘দ্রুত অ্যাকশন প্রয়োজন’

অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেজন্য মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। মানুষ চায় দ্রুত কিছু পরিবর্তন আসুক। কিন্তু বাস্তবে সেটি সম্ভব নয়। এসব দাবি মেটানোর জন্য ক্ষমতা, প্রয়োজনীয় কাঠামো এবং লোকবল নেই। “ওনারা একটা নরমাল সরকারে মতো ব্যবহার করছে, কিন্তু আসলে ওনারা বিপ্লবী সরকারের মতো। তারা ক্ষমতায় এসেছে মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে। এখন মানুষ অ্যাকশন দেখতে চায়।”

তিনি বলেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উচিত কিছু ‘ইপ্লিমেন্টশন কমিটি’ করা। এতে করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন দ্রুত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।”কোনো কোনো জায়গায় তারা ধীরে-সুস্থে এবং চিন্তাভাবনা করে কাজ করার চেষ্টা করছেন। এটা একদিক থেকে ভালো। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় দ্রুত কিছু অ্যাকশনের প্রয়োজন ছিল।”তিনি মনে করেন, বড় আকারের আর্থিক দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের সাথে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এছাড়া বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে দ্রুত কাজ করা প্রয়োজন। এছাড়া গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্য মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।