২ বিপ্লবীকে সম্মান ৮৬ বছর পর-
কলাকাত প্রতিনিধি জাভেদ শেখ : ২ বিপ্লবীকে সম্মান দেয়া হলো ৮৬ বছর পর-।এটি দিয়েছে কলাকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের দুই নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও বীণা দাশকে ৮৬ বছর পর মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি দিয়ে তাদের সম্মান জানিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার দুই বিপ্লবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ডিগ্রি তুলে দেওয়া হয় কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনারের হাতে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘১৯৩২ সালে তাদের স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার কথা ছিল। সেই সময় ব্রিটিশ সরকার ছিল ক্ষমতায়। আমরা আমাদের সমাবর্তনে তাদের সার্টিফিকেট দিয়েছিলাম কিন্তু সে সময় নেওয়ার মত কেউ ছিল না। তাই কারো হাতে তুলে দিতে পারিনি। আজ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন সেই ঐতিহাসিক সার্টিফিকেট চেয়ে আবেদন জানালে আমরা তা তাদের হাতে তুলে দিতে পেরে গর্বিত।
বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের হেড অব চ্যান্সেরি জামাল হোসেন বলেন, ‘এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩২ সালে বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়েদ্দেদার ডিসটিংশানের সঙ্গে বিএ পাশ করেন। কিন্তু তিনি শহীদ হওয়ার পর তার সনদ কেউ গ্রহণ করেনি। আজ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের তরফে আমরা তা গ্রহণ করলাম। যথাযথ পক্রিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রামে বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়েদ্দেদার ট্রাস্টের হাতে এটি তুলে দেওয়া হবে।’
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও বীণা দাশের সনদ
বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মোফখারুল ইকবাল বলেন, ‘একজন মহান বীরকন্যা যিনি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন, কারণ সেখানে লেখা ছিল ‘ভারতীয় ও কুকুর প্রবেশ নিষেধ’। সেই আক্রমণে ব্রিটিশ সেনার হাতে ধরা দেননি তিনি। পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সময় স্নাতক হয়েছিলেন কিন্তু সনদ গ্রহণ করতে পারেননি। আজ তার হয়ে তার সনদ গ্রহণ করতে পেরে আমরা গর্বিত।’
প্রসঙ্গত, ১৯৩২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন। সেই সমাবর্তনে ছাত্রী হিসেবে ডিগ্রি নেওয়ার কথা ছিল প্রীতলতা ও বীণার। কিন্তু তার আগেই চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুঠ করে বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা। তার দলবল নিয়ে ক্লাবটি আক্রমণ করেন এবং তার নেতৃত্বে সফলভাবে অভিযানটি পরিচালিত হয়। এ সময় পুলিশের আটক এড়াতে বীরকন্যা প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন।
অপরদিকে, বীণা দাশ সে দিন সমাবর্তনে গিয়েছিলেন তবে রিভলভার সঙ্গে নিয়ে। খোঁপার মধ্যে রিভলবার লুকিয়ে সমাবর্তন কক্ষে ঢুকেছিলেন ২১ বছরের বীণা। বাংলার তৎকালীন গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ্য করে পরপর পাঁচটি গুলি চালিয়েছিলেন। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন কক্ষ থেকেই গ্রেফতার হন বীণা। ফলে তার আর কোনদিন স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া হয়নি।
প্রীতিলতাকে ডিগ্রি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রথমে আবেদন জানিয়েছিল কলকাতার চট্টগ্রাম পরিষদ। তিনি যেখানে পড়তেন সেই কলকাতার বেথুন কলেজ থেকেও আবেদন জানানো হয়েছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তবর্ষ উপলক্ষে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।