• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

হোয়াইটওয়াশের অপেক্ষায় পুরো জাতি


প্রকাশিত: ৫:১১ এএম, ১০ নভেম্বর ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৮৩ বার

whitwash-www.jairkhantha.com.bdস্পোর্টস রিপোর্টার:   জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের পর এবার হোয়াইটওয়াশের অপেক্ষায় পুরো জাতি। গতকাল সারাটা দিনই ক্রিকেটের তিনটি খুশির খবর নিউজ চ্যানেলগুলোর স্ক্রিনে শোভাবর্ধন করেছে। দুবাই থেকে সাকিব আল হাসান তার ‘রাজকন্যা’র ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবরটি দেওয়ার পর বিকেল পর্যন্ত তাতেই চোখ ছিল সর্বাধিক। এর পর মুম্বাই থেকে গরম গরম খবর আসে_ আইসিসি থেকে অঘটনের খলনায়ক শ্রীনিবাসনের বিদায়। আর সন্ধ্যার পর প্রত্যাশিত শেষ সুখবরটি দেয় মিরপুর, বাঘের ডেরায় জিম্বাবুয়ে হাঁসফাঁস করে হেরেছে ৫৮ রানে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০-তে

সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছেন মাশরাফিরা। এখন অপেক্ষা হোয়াইটওয়াশের। ২০০৯ সালের পর ফের এক বছরে টানা চারটি সিরিজ জয়। তবে ঘরের মাঠে টানা পাঁচটি সিরিজ জয় এবারই প্রথম, যা নিয়ে মিরপুরের গ্যালারিতে এক-আধটু আহ্লাদিত হলেন বটে মাশরাফিরা। পেশাদারিত্বের মোড়কে তাদের সেই আবেগটা নিয়ন্ত্রণেই রাখলেন। আগামীকাল সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিতে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হলেই হয়তো মাশরাফিরা তাদের সেই মোড়ক খুলে ফেলতে পারেন।

ম্যাচের শেষে ফলাফল যত সহজ মনে হচ্ছিল, আদতে মোটেই তেমন ছিল না। দুপুরে ড্রেসিংরুমে একাদশ ঠিক করার সময়ই চ্যালেঞ্জটা কাঁধে নিয়ে নেন মাশরাফি। সাকিবের বদলে একজন বাড়তি স্পিনার (জুবায়ের হোসেন লিখন) না নিয়ে ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসকে নিয়ে নেন অধিনায়ক। ইমরুল এদিন অধিনায়কের আস্থার যোগ্য প্রতিদান দিয়েছেন ৭৬ রান করে। তবে শুরুতেই কিন্তু চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল তামিম, লিটন আর মাহমুদুল্লাহর উইকেটগুলো। তামিম যেভাবে শুরু করেন, সেভাবেই (১৩ বল পর বাউন্ডারি) এগোচ্ছিলেন। তবে তার সতর্কতা এদিন কাজে আসেনি। পানিয়াঙ্গারার বলটিতে লাইন মিস করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ১৯ রানে ফেরেন তামিম। লিটন, যার স্টাইলিশ শটের ওপর কোচ হাথুরুর প্রবল আস্থা, তিনি এদিন একটি ছক্কা হাঁকিয়েও ফের ভুল শট খেলে আউট হন। পানিয়াঙ্গারাকে পুল করতে গিয়ে উইকেটকিপারের মাথার ওপর ক্যাচ তুলে দেন। বিশ্বকাপের নায়ক মাহমুদুল্লাহ গতকালও হতাশ করেছেন। লেগস্পিনার ক্রেমারের বল খেলার সময় ঠিকভাবে স্টান্স নেননি তিনি। ফল :৪ রান করে কিপারের কাছে ক্যাচ। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, মাহমুদুল্লাহর ফর্মে যেন শনির দশা। বিশ্বকাপের পর তার গড় ১৩.৭৫! ৭৯ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও মুশফিকের প্রতিটি সিঙ্গেলেই গ্যালারি হাততালি দিচ্ছিল। তাদের ভরসা দিয়েছিলেন মুশফিক উইলিয়ামসকে কাভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। তবে যখন হাত খুলতে যাবেন, তখনই ক্রেমারের একটি বল চালিয়ে খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে বসেন মুশফিক। ভরসার নাম তখন ইমরুল কায়েস। যিনি সাত ইনিংস পর এদিন হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন, তার ছক্কা হাঁকানোর ভঙ্গি এদিন মাতিয়ে রেখেছিল গ্যালারিকে। ডাউন দ্য উইকেটে এসে উইলিয়ামসকে ছক্কা হাঁকান ইমরুল। ছয়টি চারও মেরেছিলেন তিনি। সুইপ এমনকি রিভার্স সুইপও খেলতে শুরু করেন ইমরুল। আত্মবিশ্বাস তার এতটাই উঁচুতে পেঁৗছে যায় যে, সেটাই সর্বনাশ ডেকে আনে উইলিয়ামসের একটি ফুলটস বলে।

১৫১ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দলের স্কোর আড়াইশ’ পার হওয়ার চ্যালেঞ্জ সামনে চলে আসে। তবে শেষ ১০ ওভারে ৫৩ রানের বেশি পায়নি বাংলাদেশ। শেষ চার ওভারে আসে মাত্র ১৩ রান। সাবি্বর চেষ্টা করেছিলেন ৩৩ রান করে, নাসিরও খানিকটা এগিয়েছিলেন; কিন্তু সঙ্গীর অভাব আর জিম্বাবুইয়ানদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে দলের স্কোর ২৪১ রানে ইতি টানে।

শীতের আগমনী সন্ধ্যায় এ রান নেহাত কম ছিল না। নতুন বল হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল মুস্তাফিজের। দ্বিতীয় বলেই এলবিডবি্লউর জোরালো আবেদন ছিল, গ্যালারিও গলা মিলিয়েছিল ফিল্ডারদের সঙ্গে। কিন্তু বলটি লেগস্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল বলে মনে হয় আম্পায়ার আলিম দারের। আগের ম্যাচে পরে এলেও এদিন নিজেই দ্বিতীয় ওভারটি করেছিলেন মাশরাফি। নিখুঁত লেন্থে এগোচ্ছিল সব। কিন্তু উইকেট যে পড়ছে না, অগত্যা স্পিনার আরাফাত সানির আগমন এবং চাকাভার বিদায়, এলবিডবি্লউ। পরের ওভারেই চিবাবা বোল্ড, মাশরাফির বল ব্যাটে লেগে স্টাম্প ভেঙে যায় তার। ২৩ রানে ২ উইকেট, ঠাণ্ডার মধ্যেও বেশ গরম হয়ে গিয়েছিল তখন গ্যালারি। কিন্তু উইলিয়ামস মাশরাফিকে আর আরভিন মুস্তাফিজকে একের পর এক বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেলতে থাকেন। বিরক্ত মাশরাফি মুস্তাফিজকে কাছে ডেকে এনে কিছু বলতেই_ অফ কাটার! আরভিনের শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ ধরে নাসিরের গ্যাংনাম ডান্স। আগের ম্যাচে মুস্তাফিজের উইকেট না পাওয়া নিয়ে যা একটু খটকা ছিল. তা এদিন কেটে যায়।

তার পরও আরভিন আল-আমিন আর চিগুম্বুরা নাসিরকে যেভাবে তুড়ি মারতে থাকেন, তা দেখে নিশ্চুপ থাকে গ্যালারি। লিটনের সরাসরি থ্রোতে আরভিন রানআউট হয়ে গেলে আবারও দোল খায় মিরপুর।

কিন্তু জিম্বাবুইয়ান হার্ডহিটার চিগুম্বুরা যে তখনও ক্রিজে, সঙ্গে নির্ভরযোগ্য সিকান্দার রাজা। স্বস্তি পাচ্ছিলেন না মাশরাফি। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নাসির আর সানিতে আসছিলেন বারবার। তখন নিশ্চিত সাকিবের শূন্যতা মনে করিয়ে দিচ্ছিল সবাইকে। মাশরাফির একটি ওভারে চার-ছক্কায় ১৫ রান নিয়ে নেন চিগুম্বুরা। সিকান্দার রাজা চড়াও হন সানির ওপর। এ দুই জিম্বাবুইয়ান কিছুক্ষণের জন্য আতঙ্ক ছড়ান গোটা মাঠে। মাহমুদুল্লাহর হাতে তখনও কেন বল তুলে দিচ্ছেন না অধিনায়ক?

মিরপুরের প্রেসবক্সে যখন এ নিয়ে কানাঘুষা, তখনই আল-আমিন এসে তুলে নেন রাজা ও চিগুম্বুরাকে। শর্ট বল পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন রাজা। আর ভয়ঙ্কর চিগুম্বুরাকে এর পর ড্রেসিংরুমে ফিরিয়ে দেন আল-আমিন। বিশ্বকাপের পর এটা তার দারুণ একটি প্রত্যাবর্তন। লেগকাটার থার্ডম্যান দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে বসেন ৪৭ রানে থাকা জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক। ১৫৬ রানে ৬ উইকেট, ৮৫ বলে ৮৬ রান দরকার অতিথিদের। ‘বাংলাদেশ… বাংলাদেশ…’ কোরাস শুরু হয়ে যায় গ্যালারিতে। এর পর যা হয়েছিল, তা শুধুই তেল ফুরিয়ে যাওয়া গাড়ির ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যাওয়া। জিম্বাবুয়ের সেই গাড়ি শেষ পর্যন্ত ১৮৩ রানে গিয়ে স্থির হয়ে যায়। মিরপুরের এই উইকেটেও পেসারদের ছয় উইকেট নেওয়াতে মাশরাফি একটি চ্যালেঞ্জও জিতে নেন।

২০০৯ সালে সর্বোচ্চ চারটি সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ঘরে-বাইরে তিনটি সিরিজে সেবার জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল, সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও হারানোর রেকর্ড গড়েছিল। তবে এবার টানা চার সিরিজ জয়টি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি গর্বে ভরা আনন্দের। পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো র‌্যাংকিংয়ের ওপরের দলগুলোকে নাস্তানাবুদ করার পর শেষ পাতে এসে জিম্বাবুয়ে। তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যেতেই পারে।