হুন্ডি জাভেদের বাদশাহী বিয়ে বিয়ের খরচ ২৭০ কোটি
শফিক রহমান : বাংলাদেশী বিতর্কিত ব্যবসায়ী জাভেদ অফগ্যানহাফেন এর বাদশাহী বিয়ে নিয়ে তোলপাড় চলছে বাংলাদেশ ও প্যারিসে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাভেদ তার বিয়েতে ২৭০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে এই বিপুল পরিমান টাকা প্যারিসে নেয়ার জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্ঠরা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ঠরা সন্দেহ করছেন হুন্ডির মাধ্যমে এই টাকা পাচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে মিলেছে, বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে কারচুপি, স্টক ম্যানিপুলেশন এবং বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মে জড়িত জাভেদ অফগ্যানহাফেন গত পরশু ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় ২৫ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২৭০ কোটি টাকা) খরচ করে বিয়ে করেছেন দুবাইয়ে বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইনফ্লুয়েন্সার ও উদ্যোক্তা রোজেমিন মাধবজি’কে।
এই বাদশাহী বিয়েতে অতিথিদের মধ্যে মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত ও বাংলাদেশ থেকে পলাতক ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আজিজ মোহাম্মদ ভাই, -এফ রহমানের ছেলে সহ বাংলাদেশের বহু ধনাঢ্য ব্যক্তি সেখানে ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তার বিয়েতে বাদশাহী স্টাইলে জৌলুসের ছড়াছড়ি ছিল। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে দুটি ভাগে বিয়ে ও সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার (৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর) প্যারিসের অপেরা গার্নিয়ার ও পার্ক ডি বাগাটেলি নামের যে দুটি ভেন্যুতে জাভেদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, সে দুটি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ভেন্যু। বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন হারপারসবাজার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। হারপারসবাজার এর ওয়েব সাইটে জাভেদ ও মাধবজীর দুই দিনব্যাপী বিয়ে উৎসবের বিস্তারিত দেখাও যাচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাভেদের বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, এসব অনুষ্ঠানে নাকি শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। হারপারসবাজারের খবর অনুসারে, জাভেদ অফগ্যানহাফেনের স্ত্রীর নাম রোজেমিন মাধবজি। দুবাইতে বসবাসরত রোজেমিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও উদ্যোক্তা।
নতুন এই দম্পতি আয়োজনকে দুটি জমকালো ইভেন্টে ভাগ করেছিলো। প্রথমটি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় এবং দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটি পরের দিন শনিবার রাতে প্যারিসের একটি বাগানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফ্যাশন ম্যাগাজিন হারপারসবাজারে আরও বলা হয়, এই দম্পতির প্রেম উদযাপন করতে সারা বিশ্ব থেকে অতিথিরা এসেছিলেন। তাদেরকে দক্ষিণ-এশীয় সেরা পোশাকে সজ্জিত করা হয়। অনেকেই মনীশ মালহোত্রা এবং ফারাজ মাননের মতো বিখ্যাত ভারতীয় ডিজাইনারদের পোশাক পড়েছিলেন।
এছাড়াও দুবাই-ভিত্তিক প্রভাবশালী ফ্যাশন ডিজাইনার লিনা ডেরাওয়ান ইনস্টাগ্রামে বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করেন। অপরদিকে সিরিয়ার উদ্যোক্তা এবং লা লোজ বিউটি সেলুনের প্রতিষ্ঠাতা রিম খাব্বাজেহ তার স্বামীর সাথে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি লুই ভিটন ব্যাগের সাথে একটি কালো কেপ পোষাক পরেছিলেন। এদিন তিনি ইনস্টাগ্রামে সুন্দর সাজসজ্জার ছবি শেয়ার করেছেন।এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা বিয়ের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। দুইদিনের জমকালো অনুষ্ঠানে শিল্পী, ব্যবসায়ী, ড্যান্সার. আর্টিস্ট সহ অনেকেই যোগদান করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে নানা কারসাজি, হুন্ডি, জালিয়াতিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে জাভেদ অফগ্যানহাফেনের বিরুদ্ধে। একাধিক ঘটনায় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তার নিজের ও কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং বিপুল অংকের টাকাও জরিমানা করেছে।
উল্লেখ, জাভেদ অফগ্যানহাফেন শেয়ারবাজারে তঅলিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান। খুবই দুর্বল এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২০১৫ সালেও ছিল মাত্র ১০ কোটি টাকা। পরের বছর এর মূলধন দেখানো হয় ২১০ কোটি টাকা।
প্লেসমেন্টে নামে-বেনামে শেয়ার ইস্যু করে পরবর্তীতে ওই শেয়ার উচ্চ দামে বিক্রি করে কয়েকশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ২০২০ সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট ইস্যু করা ১ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ওই শেয়ার ফ্রিজ করে দেয়।
জাভেদ অফগ্যানহাফেন পরবর্তীতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফুওয়াং সিরামিক অধিগ্রহণ করেন। আর এই অধিগ্রহণের সময়ও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়। জাভেদ অফগ্যানহাফেন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ কোম্পানিটির বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।জাভেদের নিয়ন্ত্রনাধীন তিনটি কোম্পানির মধ্যে এসএস স্টিল ও ফু-ওয়াং সিরামিক সর্বশেষ বছরের জন্য ২ শতাংশ হারে এবং জেনারেশন নেক্সট ১ শতাংশ হারে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। জেনারেশন নেক্সট আগের তিন বছরে শেযারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ডই দেয়নি।
এমন দুর্বল ও রুগ্ন কোম্পানির মালিক জাভেদের এত জৌলুসময় বাদশাহী বিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও জাভেদ অফগ্যানহাফেন ওই বিলাসবহুল বিয়ের অনুষ্ঠানের অর্থ কীভাবে নিয়ে গেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি তিনটিকে ব্যবহার করে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল এই অর্থ পাচার করা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। জাভেদ অফগ্যানহাফেন বাংলাদেশ ও বেলজিয়ামের দ্বৈত নাগরিক এবং তার সকল ব্যবসা বাংলাদেশ কেন্দ্রীক।