• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

হাসিনার পেতাত্মা বিআরটিএ চালাচ্ছে


প্রকাশিত: ৮:৪৬ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৫ বার

টাইগার আইটির অবৈধ টাকায় প্রশাসন নিশ্চুপ-

 

লাবণ্য চৌধুরী : পলাতক হাসিনার পেতাত্মারা এখনো বিআরটিএ চালাচ্ছে। লুটেরা তারিক আহমেদ এর অবৈধ টাকায় বিআরটিএ প্রশাসন নিশ্চুপ। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) আরএফআইডি ভেহিক্যাল নম্বর প্লেট এবং ডিজিটাল স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে টাইগার আইটি নামে এ প্রতিষ্ঠানটি। হাসিনা সরকার পালানোর পরও টাইগার আইটি বহাল তবিয়তে সব সামলাচ্ছে। অভিযোগ করা হয়েছে, লুটেরা তারিক আহমেদ এর অবৈধ টাকায় বিআরটিএ প্রশাসন নিশ্চুপ রয়েছে রহস্যজনক কারণে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতি ও অনিয়মের দায়ে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত। তারপরও পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওয়াবদুল কাদেরের প্রভাব খাটিয়ে বিআরটিএর এ প্রকল্পের কাজ করছে কোনো প্রকার টেন্ডার ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই। এতে একদিকে সরকারি কাজে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে বিআরটিএর এ প্রকল্পকে কুক্ষিগত করে কোনো প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম ছাড়াই বছরের পর বছর কাজ পেয়ে আসছে টাইগার আইটি। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর এক যুগের বেশি সময় ধরে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিআরটিএতে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পেয়ে আসছে এ প্রতিষ্ঠানটি। সক্ষমতা থাকলেও বিআরটিএর আরএফআইডি স্মার্টকার্ড প্রকল্পে টাইগার আইটির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সাহস দেখায়নি কোনো দেশি প্রতিষ্ঠানই। কেননা সেখানে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে এলে সুকৌশলে সেটাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হতো। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে কোনো প্রকার প্রতিযোগিতা ছাড়াই কাজ পেয়ে যায় টাইগার আইটি।

সূত্র জানায়, টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওরাকল, সিসকোর মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির সঙ্গে কোনো কাজ করছে না। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে কাজ করার জন্য ইউরোপে কয়েকটি শেল কোম্পানি (মূলত মুদ্রা পাচারের লক্ষ্যে) খুলেছেন জিয়াউর রহমান। নির্বাচন কমিশন, ঢাকা ওয়াসা, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, এনআইডি অনুবিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে আইবিসিএস-প্রাইমেক্স নামে ছদ্মবেশী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়েক শ কোটি টাকার কাজ করেছে টাইগার আইটি সবকিছুই অডিট ও মূল্যায়ন ছাড়াই।

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের স্মার্টকার্ড মুদ্রণ-সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পেও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে টাইগার আইটির বিরুদ্ধে। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটিকে ২০১৯ সালে সাড়ে ৯ বছরের জন্য এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে সাড়ে ৬ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করে। তারপরও বিআরটিএতে টাইগার আইটির আধিপত্য সামান্যতম কমেনি।

বর্তমানে বিআরটিএর স্মার্টকার্ডসহ অন্যান্য সরকারি প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হতে চেষ্টা অব্যাহত রাখেন তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহনাজ সিদ্দিক। বিভিন্ন কোম্পানির নামে পুরো প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখেন টাইগার আইটির জিয়াউর রহমান। কালো তালিকাভুক্ত হিসেবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কোনো টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না টাইগার আইটি এবং চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা নেই।

জানা গেছে, কালো তালিকাভুক্ত হলেও হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের ছায়ায় বিআরটিএর প্রকল্পে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে টাইগার আইটি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর অফিসের (পিএমও) দাপটে কোনো বিআরটিএ অফিসার মুখ খোলেননি ১৩ বছর ধরে। জাল, অবৈধ ও ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠেকাতে ২০১১ সালে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রবর্তন করে। শুরু থেকেই বিআরটিএ প্রকল্পে যুক্ত টাইগার আইটি। বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত হওয়া ২০১৯ সালের আগস্টে ‘টাইগার আইটি’র সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিআরটিএ। এটা এক ধরনের আইওয়াশ বলা যায়। নতুন টেন্ডার করে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে নিয়োগ দিলেও চুক্তির মেয়াদ ২০২১-এর জুন পর্যন্ত স্মার্টকার্ডের সার্ভার এবং ডেটাবেজ হস্তান্তরে গড়িমসি করে।

বিআরটিএর প্রকল্পে প্রতিযোগিতা ছাড়াই কাজ করা প্রসঙ্গে টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের মন্তব্য জানতে কয়েকবার হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা ও ফোন করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট নিয়ে বর্তমানে দুবাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। গত ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি টেন্ডার ছাড়াই ৪ লাখ ডিজিটাল স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স কিনতে ১৮ দশমিক ৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় হাসিনার মন্ত্রিসভা। প্রতিটি লাইসেন্স প্রায় ১০ গুণ বেশি দামে কেনা হয় উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে। প্রতিটি স্মার্টকার্ডের বাজারমূল্য ৫০ টাকা হলেও প্রকল্পে প্রায় ৫০০ টাকা (৪৭২.৬০ টাকা) করে কেনা হয়। বিগত বছরগুলো ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর পরিসংখ্যান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনা করে প্রতি বছর গড়ে ৩ লাখ স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। এর পুরোটাই টাইগার আইটি সরবরাহ করে আসছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে।