হাসিনার পদত্যাগপত্রটা কই!
০০ ফের হাসিনার অডিও ফাঁস:
০০ পদত্যাগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বিভ্রান্তি’
শফিক রহমান : পলাতক হাসিনার পদত্যাগপত্রটা কই! এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দেশের সর্বত্র। কারণ শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো প্রজ্ঞাপন বা গেজেট এখনো প্রকাশ্য হয়নি। তার পদত্যাগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বিভ্রান্তি’চলছে। ফাঁস হচ্ছে একাধিক অডিও। শুক্রবারও একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। সেটি সোসাল মিডিয়ায় সার্স দিলেই মিলছে। দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন এর কাছেও এটি এসেছে। পদত্যাগি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষ নিয়ে একাধিক অডিও ফাঁস হচ্ছে সোসাল মিডিয়ায়। সম্প্রতি কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখেছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে ভারত চলে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান জানান, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে পদত্যাগ করে গেছেন। পরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে এই সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। তবে তার পদত্যাগের কোনও প্রজ্ঞাপন বা গেজেট প্রকাশ্যে আসেনি এখনও।
এরই মধ্যে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই জনের মধ্যে কথোপকথনের একটি কলরেকর্ডের অডিও ভাইরাল হয়। বলাবলি হচ্ছে, শেখ হাসিনা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভীর কায়সারের মধ্যে এই আলাপচারিতা হয়। সেখানে শেখ হাসিনার মতো কণ্ঠে যাকে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, তিনি বলছেন এখনও পদত্যাগ করেননি। তবে এই ফোনালাপের সত্যতা আছে কিনা, তা কোনও মাধ্যমেই যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অডিওতে যাকে শেখ হাসিনা বলে মনে হচ্ছে, তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ওই সময় (আগস্টের শুরুতে) দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিজে থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন তিনি। তার ইচ্ছা ছিল ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। ফুটেজের আরেক প্রান্তের ব্যক্তিকে বলা হচ্ছে তানভীর কায়সার, সামাজিকমাধ্যমে তার পরিচয় বলা হচ্ছে তিনি বেলজিয়ামে অবস্থানরত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, বাড়ি ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার, তিনি বারবার ‘জি আপা জি আপা’ বলে বিভিন্ন কথায় সায় দিচ্ছেন, আবার নির্দেশনাও নিচ্ছেন।
অডিওতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘সে (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) তো জবর দখল করছে। তার কোনও লিগ্যালিটি নাই। বলে, আমাদের কোনও পদ নাই। যেভাবে সে ক্ষমতায় গেছে…মানুষ খুন করে, একটা সিচ্যুয়েশন তৈরি করে তারপর সে ক্ষমতায় গেলো। তাদের উদ্দেশ্য তো ছিল আমাকে মেরে ফেলা।’এ সময় তানভীর কায়সার বলেন, ‘জি আপা, জি আপা। এগুলো আমরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে জানাচ্ছি।’
পরে আবার ওই নারী কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো পদত্যাগ করি নাই। আমাদের কনস্টিটিউশনের আর্টিক্যাল ৫৭ অনুযায়ী যেভাবে পদত্যাগ করতে হয়, আমার কিন্তু সেভাবে পদত্যাগ করা হয়নি। সে কিন্তু ৬ তারিখের জায়গায় ৫ তারিখে (লং মার্চ) নিয়ে এলো। ৫ তারিখে নিয়ে আসার ফলে এমনভাবে চারদিকে লোক ঘেরাও…। আমি দেখলাম যে এখন যদি ফায়ার ওপেন করে আমার এখানের সিকিউরিটি…তাহলে অনেক লাশ পড়বে। লাশ ফেলে আমি ক্ষমতায় থাকতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন এমন সিচুয়েশন হয়ে গেলো যে আমার সিকিউরিটি যারা ছিল…তারা বাধ্য হয়ে…তখন আমাকে সরে যেতে হলো গণভবন থেকে। যার ফলে বঙ্গভবনে গিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা আমি দেইনি। কাজেই আমার কিন্তু পদত্যাগ হয়নি। যার কারণে আমি এখনও বাংলাদেশের কনস্টিটিউশনাল ইলেকটেড প্রাইম মিনিস্টার।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তার যে দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া, অর্থ আত্মসাৎ করা আবার লিভার লিডার (করপোরেট অংশীদার) দিয়ে ঘুষ দেওয়া—এই সব কিছু মিলিয়ে সে একটি সিচুয়েশন তৈরি করেছে। আর কিছু দেশ তাকে সাপোর্ট করে। এটা সে কাজে লাগিয়েছে। তার একটা মামলার ভারডিক্ট ছিল ৬ তারিখে। এটা যাতে না হতে পারে, এ জন্য এগিয়ে ৫ তারিখে নিয়ে এসেছে। এই ৫ তারিখে আনার ফলে যাওয়া হলো, যখন মানুষ মারা গেলো, আমি একটা জুডিশিয়াল কমিশন করলাম এনকোয়ারি করার জন্য। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম থাকবো না। আমি ছেড়ে দেবো। আমি থাকতে চাই না। ৫ তারিখে আমি নেশনকে অ্যাড্রেস করে যাবো রাষ্ট্রপতির কাছে। আমি তার কাছে সাবমিশন (পদত্যাগপত্র) করবো। সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়ম হচ্ছে আমি যদি রেজিগনেশন সাবমিটও করি, তাহলে অন্য কেউ মেজরিটি দেখাতে পারলে প্রাইম মিনিস্টার হবেন। আর সংসদ ভাঙতে হলে প্রাইম মিনিস্টারকে রিকোয়েস্ট (রাষ্ট্রপতির কাছে) করতে হবে, তখন সংসদ ভাঙে; তা ছাড়া সংসদ ভাঙতে পারবে না।’
তখন পুরুষ কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘আপা, আপনি কোনও স্পিচ দেবেন কিনা? এ প্রশ্নে অপর প্রান্ত থেকে কোনও জবাব দেননি।
তানভীর বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ আপা, আপনি চলে আসবেন তো। আর বেশি দিন নাই।’
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারপর ফলস ছবি দেখালো আমি সই করছি। সেটা হলো আমার ভিজিটিং বুকের সই। ছবিটা ভালো করে দেখলে দেখা যাবে ওইটা একটা মোটা বই। ও রকম কোনও বইয়ে প্রাইম মিনিস্টার সই করে পদত্যাগ করেন না। আমার সেই চিঠিও কেউ দেখাতে পারছে না। গণভবনে রেখে আসছিলাম, গণভবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, লুটপাট হয়েছে; ওগুলো সব চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কটা মার্ডার হইছে, পুলিশের গুলিতে কিন্তু হয়নি। মুভমেন্টের ভেতরে কিলিং এজেন্ট ছিল। ওরা যে বুলেট ব্যবহার করেছে…অ্যাডভাইজার সাখাওয়াত সাহেব আর্মির লোক…উনি নিজেই বলছেন এই বুলেট তো পুলিশের কাছে থাকে না। তার মানে সাধারণ লোকের কাছে ওই বুলেট ছিল। আজ পর্যন্ত এই বুলেট সম্পর্কে কোনও তদন্ত নেই এবং এই রাইফেল কে ব্যবহার করেছে কোনও তদন্ত নেই। এমনকি কিছু পুরুষ মানুষ বোরকা পরে ইন্ডাস্ট্রিতে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে এগুলো করেছে।’
পুরুষ লোকটি বলেন, ‘জি আপা, যখন আপনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন, আমরা খাইতেও পারিনি ঠিকমতো।’ এর উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি লাশের স্তূপ দেখতে চাইনি।’ তিনি আবার বলেন, ‘তারপরও কত মানুষ মারলো। পুলিশ মারলো। আনসারদের কোনও হদিস নাই। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী, হিন্দুদের পরিবার…মেরে লাশ গুম করা এবং মেয়েগুলোকে তুলে নিয়ে যাওয়া। ইডেন কলেজের একটা মেয়েকে মেরে ঝুলিয়ে রেখে বললো আত্মহত্যা করছে।’
তানভীর প্রশ্ন করেন, ‘আপা আপনার অ্যাবসেন্সে দলের এখন দায়িত্বে কে বা দল কীভাবে দাঁড়াবে?’
তবে এই প্রশ্নের উত্তরে কিছু বলতে শোনা যায়নি।
প্রসঙ্গত, দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার নামে অনেকের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও ফাঁস হচ্ছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এটিও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ তানভীর কায়সার ও শেখ হাসিনার কথোপকথনের অডিও বলে সামাজিকমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া অডিও ফাঁসের জেরে বরগুনার এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে এসব কথোপকথনের কোনও সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।