হরতাল-অবরোধের নামে নৈরাজ্য-সহিংসতা বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের
প্রিয়া রহমান.ঢাকা:
হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।
শাহিনুর ইসলাম নামে কেরানীগঞ্জের এক ব্যবসায়ী গত বৃহস্পতিবার রিট আবেদনটি করেন। আজ ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়।
এমন এক সময়ে আদালতের এই নির্দেশনা এল, যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে ব্যবসায়ীরা আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, জনগণ চাইলে হরতাল বন্ধে আইন হবে।
বিএনপি জোটের চলমান অবরোধ-হরতালে নাশকতার চিত্র তুলে ধরে শাহীনুর রহমান শাহীন নামে কেরানীগঞ্জের এক ব্যবসায়ী রোববার রিট আবেদন করলে আদালতের এই আদেশ আসে।
আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ ‘নৈরাজ্য’ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ ও রুল জারি করেন।
স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, বিজিবির মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিকল্পধারার সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অপর এক রিটে হরতাল-অবরোধের মধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে একই আদালত। এক্ষেত্রে কেউ বাধা দিলে ‘সিরিয়াস ব্যবস্থা’ নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে ‘শিক্ষার জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রম’ কেন ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে আদালত।
এই রিটেও স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, বিজিবির মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিকল্পধারার সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বিবাদী করা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ইস্পাহানি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির পক্ষে শফিউল আজম খান বারকু এই রিট আবেদন করেন।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চালিয়ে আসছে। এরই মধ্যে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতিদিনই চলছে হরতাল।
অবরোধ ও হরতালের মধ্যে নাশকতা ও সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানালেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া
চলমান মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি না দিতে সরকার, শিক্ষক ও অভিভাবকদের আহ্বানেও বিএনপি জোট সাড়া দেয়নি।
এর আগে নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালে বছরজুড়ে সংঘাত সহিংসতার কারণে ব্যবসায়ীরা আইন করে হরতাল বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন একাধিকবার।
আর এবার অবরোধের প্রথম ৩৩ দিনে দেশের অর্থনীতির ৭৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে আবারও একই দাবি তোলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই হরতাল নিষিদ্ধের এ দাবিকে সমর্থন করেছেন।
হরতাল-অবরোধের নামে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সরকার নতুন একটি আইন করার কথা ভাবছে বলেও সম্প্রতি জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত।
অবশ্য বিদ্যমান আইনেই চলমান জ্বালাও পোড়াওয়ের বিচার সম্ভব বলে সম্প্রতি মত প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।