• রোববার , ৫ মে ২০২৪

স্বাধীনতার শত্রু সাকা চৌধুরীর খেল খতম-ফাঁসি বহাল


প্রকাশিত: ১২:২২ পিএম, ২৯ জুলাই ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৯ বার

saka-carton-www.jatirkhantha.com.bdএস রহমান.ঢাকা:  অবশেষে স্বাধীনতার শত্রু সাকা চৌধুরীর খেল খতম হলো।আজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন।
বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন সাকা চৌধুরী।
আজ সকাল নয়টা পাঁচ মিনিটে ওই আপিলের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হলো। ৭ নম্বর অভিযোগ থেকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেওয়া হলো। ২,৩, ৪,৫, ৬,৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে সাজা বহাল রাখা হলো।
ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি (২ থেকে ৮ এবং ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হয়। চারটি অভিযোগে (৩,৫, ৬ ও ৮ নম্বর) তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আপিল বিভাগ তা বহাল রাখেন। ৭ নম্বর অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগ থেকে আসামিকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আসামিপক্ষ বলেছে, রায়ে তারা হতাশ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে তারা রিভিউ আবেদন করবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ও খালাস চেয়ে ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন সাকা চৌধুরী। চারটি অভিযোগে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি। চলতি বছরের ১৬ জুন আপিলের শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৭ জুলাই। ওই দিন আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৯ জুলাই (আজ) তারিখ ধার্য করেন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের পঞ্চম আপিল মামলার রায় আজ ঘোষণা হলো। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং দুই সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার আপিলের রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। এর মধ্যে কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ ভোগ করছেন সাঈদী। আর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি।

ট্রাইব্যুনালের রায়: মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর বণিকপাড়া ও ঊনসত্তরপাড়ায় গণহত্যা, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মোজাফফর আহমেদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরণ ও হত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ওই রায়ে বলা হয়, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২৩টি অভিযোগ এনেছে, যার মধ্যে নয়টি (২ থেকে ৮ এবং ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, পঞ্চম অভিযোগে সুলতানপুর বণিকপাড়া ও ষষ্ঠ অভিযোগে ঊনসত্তরপাড়ায় গণহত্যা, অষ্টম অভিযোগে হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মোজাফফর ও তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
দ্বিতীয়, চতুর্থ ও সপ্তম অভিযোগে হত্যা, গণহত্যার পরিকল্পনা, সহযোগিতা এবং লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার ঘটনায় সাকা চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ২০ বছর করে ৬০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে তাঁকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সেগুলো থেকে তাঁকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল।
হরতালে গাড়ি পোড়ানোর এক মামলায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাঁর বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।