স্বজাতীর ক্ষয়ে যাওয়া মেরুদন্ড…
ডেস্ক রিপোর্টার : রাস্তায় যানজট সৃষ্টির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয়দানকারী সচিবের গাড়িতে মামলা দিলেন পুলিশের ইন্সপেক্টর সমমর্যাদার এক কর্মকর্তা। এসময় ওই কর্মকর্তা রাগান্বিত হয়ে সিভিল পোশাকে থাকা পুলিশের এই কর্মকর্তার নাম জানতে চাইলে নিজের ভিজিটিং কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি আমাকে দেশের যেকোনো জায়গায় বদলি করতে পারেন’ ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার দুপুরের।
ঘটনাস্থল রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে। বাংলাদেশ পুলিশের সাহসী ওই কর্মকর্তার নাম ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম সুমন। নিজের ফেসবুক ওয়ালে কয়েকটি ভিডিওসহ পুরো কাহিনী তুলে ধরেন তিনি। পাঠকের জন্য ওই পুলিশ কর্মকর্তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
একটু আগের ঘটনা। বাচ্চাকে স্কুল থেকে পিক করার জন্য ৭/৮ নং গেটের কাছে আসলাম, দেখি প্রচণ্ড জ্যাম, কারণ গাড়িওয়ালারা তিনলাইন করে পার্ক করে রাস্তা বন্ধ করে বসে আছে আর উনাদের বাচ্চারা স্কুল গেইটে কিছু খাচ্ছে অথবা স্কুলেই খেলায় মগ্ন। এদিকে আমার মত রিকশার যাত্রীরা অনবরত ট্রাফিক পুলিশকে গালি দিতে থাকল।
মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে সিভিল ড্রেসে একাই তৃতীয় সারির দশটি গাড়ির কাগজ নিয়ে বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে সার্জেন্টকে কল দিয়ে নিয়ে আসলাম মামলা করানোর জন্য। বিপত্তি বাধল এক সচিব স্যারকে নিয়ে। উনি নিজেকে পিএম এর পিএস বলে পরিচয় দিচ্ছেন, যদিও আমি তা যাচাই করে দেখিনি।
উনি মামলা তো দূরের কথা, গাড়ির কাগজই দেবেন না, আমি যা পারলে করি। আমি উনাকে বারবার স্যার সম্বোধন করে বলি যে উনাকে আমি ছাড়লে সবাইকে ছাড়তে হবে, নইলে বাকি নয়জনের কাছে পরকালে হলেও জবাবদিহি করতে হবে, তাই উনাকে ছেড়ে দিয়ে সেই পাপের দায়ভার নিতে পারব না।
উনি আমার উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে যাবেন এই অবস্হা। আমিও নাছোড়বান্দা, বললাম আমার লাশ পড়লেও আপনাকে মামলা নিয়ে যেতে হবে। উনি খুব গরম দেখাচ্ছিলেন, তাই আমি পথচারীকে ভিডিও করতে বলি, উনার গরম তখন পালালো, আমি ৯০০ টাকা জরিমানা করলাম।
উনি আমার নাম জানতে চাইলে আমি এক ডিগ্রী এগিয়ে নিজের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে সালাম দিয়ে বললাম, ‘Sir, you can transfer me anywhere of Bangladesh’ আমি রাস্তার কামলা, কামলাই থেকে যাব, বেতন এক টাকাও কমবে না, আপনি যদি ভদ্রভাবে পরিচয় দিয়ে বলতেন, আমি পিএম এর পিএস, আজকের মত আমাদের সবাইকে ছেড়ে দেন,
আর কোনদিন এভাবে গাড়ি রাখব না, আমি আপনাকে সহ সবাইকে সসম্মানে ছেড়ে দিতাম, কিন্তু আপনি ক্ষমতা দেখিয়ে শুধু আপনারটাই ছাড়াতে চাচ্ছেন, অন্য কারোটা নয়, অথচ আপনারা সবাই একই অপরাধে অপরাধী”। বাকি সবাইকেও ৯০০ টাকা করেই জরিমানা করেছি।
এবার মনে হয় ঢাকার বাইরে পোস্টিংটা খুব দ্রুতই হবে…..!!!!!!! আমি অমুক, আমি তমুক, এই পরিচয়ে এক্সট্রা প্রিভিলেজ পাওয়ার চিন্তাটা আমরা বাদ দেব কবে? কেন অপরাধ করে তার পানিশমেন্টটা আমরা নিতে চাই না…………..? (বি.দ্র. এই পোস্টগুলো সস্তা লাইক বা বাহবা পাওয়ার জন্য দেয়া হয় না, এগুলো দেয়া হয় আমার স্বজাতীয়দের ক্ষয়ে যাওয়া মেরুদণ্ড সোজা করার জন্য।)