• মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

স্ত্রীর এ্যাকাউন্টে প্রায় ১০ কোটি-এসপি সুভাষের টাকার বাগান


প্রকাশিত: ১০:১৩ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২৩ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫১ বার

শফিক রহমান : বাংলাদেশ পুলিশের বহুল বিতর্কিত আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী রীনা চৌধুরীর দুর্নীতি লুটপাটে পুলিশের বদনামের ষোলকলা পূর্ণ হবার জোগাড় হয়েছে। দুদক বলছে ‘এসপি সুভাষ’ যেন টাকার গাছ বানিয়ে রেখেছিলেন। তা থেকে টাকা পেরে যেন টাকার বিছানা বানিয়েছেন এসপির স্ত্রী রীনা চৌধুরী।

এসপির টাকার গাছের বাগানে ফল দিয়েছে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ, গ্রেপ্তার বাণিজ্য, তদবিরসহ নানা উপায়ের সামারি বাণিজ্য।এসব থেকে এসেছে কাড়ি কাড়ি টাকা। যা এসপি একা হজম করতে না পেরে স্ত্রীর হাওলায় ছেড়ে দিলে তিনি তা দিয়ে বানান সম্পদের বাড়ান।

কিন্তু এসপির স্ত্রী পেশায় গৃহিণী। তার দৃশ্যমান কোনো আয় নেই।তারপরও পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর চেয়ে তার ব্যক্তিগত সম্পদ ৭ কোটি ৫১ লাখ ২৪ হাজার টাকা বেশি। যেখানে পুলিশ সুপার স্বামীর মোট আয় ও সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ১৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, সেখানে স্ত্রীর সম্পদ ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৮৯ হাজার ৬২১ টাকা।

গৃহিণী হলেও রীনা চৌধুরী এসব অর্জন করেছেন এসপি নামের টাকার গাছ থেকে। স্বামী সুভাষ চন্দ্র সাহার অসাধু উপায়ে অর্জিত সম্পদ বৈধ করতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন। ‍সুভাষ নিজের অবৈধ সম্পদ বৈধ করার উদ্দেশ্যে স্ত্রীর নামে আয়কর নথি খুলে তার নামে দেখান বিপুল সম্পদ। সুভাষ ও রীনার বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের ‍উপপরিচালক আলমগীর হোসেনের করা পৃথক দুটি মামলায় এমন অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলায় সুভাষের বিরুদ্ধে ৫৭ লাখ ৯১ হাজার ৯৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও রীনার বিরুদ্ধে ৯ কোটি ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩১৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের দুজনকেই ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। তারা ওই বছরের ২ অক্টোবর কমিশনে হিসাব বিবরণী দাখিল করেন। দীর্ঘ ছয় বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর মামলাটি দুটি করল দুদক।

স্ত্রী ও নিজের যৌথ নামে ১৯টি এফডিআরে সাড়ে ৮ কোটি টাকা রেখে আলোচনায় এসেছিলন সুভাষ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য পাওয়া যায়। বর্তমানে ওএসডি ও পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত থাকা সুভাষ চন্দ্র সাহা ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন।
তিনি পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ, গ্রেপ্তার বাণিজ্য, তদবিরসহ নানা উপায়ে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন বলে অভিযোগ বলা হয়। এফডিআর কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোর সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বংশাল থানায় মামলা করেছিলেন দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ। সুভাষ প্রভাব খাটিয়ে ওই মামলার তদন্ত বন্ধ রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওই মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, সুভাষ চন্দ্র সাহা পুলিশে চাকরিকালে বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে তার নিজ নামে ও স্ত্রী রীনা চৌধুরীর নামে একাধিক এফডিআর হিসাব খোলেন।

তারা যৌথ নামে ওয়ান ব্যাংকের ঢাকার বংশাল শাখায় ছয়টি, এলিফ্যান্ট রোড শাখায় একটি এবং যশোর শাখায় ১২টি এফডিআর হিসাবে অর্থ জমা করেন। তাদের মোট ১৯টি এফডিআরে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৭ টাকা পাওয়া যায়। এফডিআরকৃত সম্পদের বৈধ উৎস না থাকায় সুভাষ চন্দ্র সাহা ও রীনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়। ওই সময় সুভাষ চন্দ্র সাহা ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার রাধানগর গ্রামে। দুদক সূত্র জানায়, গতকাল যে মামলা করা হয়েছে সেগুলো ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাবের মামলা।

রীনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা এজহারে বলা হয়েছে, রীনা চৌধুরী দুদকে ৮৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭৪ টাকার সম্পদের হিসাব তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে ৯ কোটি ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩১৪ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখল করেন।
তিনি মোট ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৫ টাকার স্থাবর ও ৭ কোটি ৪৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯৩৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। যাচাইকালে রীনা চৌধুরীর ২ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজার ১৫৯ টাকার স্থাবর ও ৭ কোটি ৪৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯৩৬ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৯ কোটি ৬২ লাখ ১৭ হাজার ৯৫ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। রীনা চৌধুরী একজন গৃহিণী। স্বামী সুভাষ চন্দ্র সাহার অসাধু উপায়ে অর্জিত সম্পদ বৈধ করার উদ্দেশ্যে নিজ নামে রাখেন।

অপরদিকে সুভাষ চন্দ্র সাহা ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর কমিশনে হিসাব বিবরণী দাখিল করেন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ ও ২ কোটি ২ লাখ ২ হাজার ১২৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং ৪০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণের তথ্য দেন। যাচাইকালে তার নামে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকার স্থাবর ও ২ কোটি ২ লাখ ২ হাজার ১২৫ টাকার অস্থাবরসহ মোট ২ কোটি ১৯ লাখ ৮৯ হাজার ১২৫ টাকার সম্পদ ও ৪০ লাখ টাকা ঋণের তথ্য পাওয়া যায়। কমিশন তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৭ লাখ ৯১ হাজার ৯৯৭ টাকার সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রাখায় সর্বশেষ এই মামলা করা হয়।
এ সম্পর্কে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে তদন্ত কর্মকর্তা কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল করেন। কমিশন মামলার অনুমোদন দেওয়ার পর মামলা করা হয়েছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।