• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

স্কুলে স্কুলে ঈদের মত খুশী বই উৎসবে-


প্রকাশিত: ২:৫২ এএম, ২ জানুয়ারী ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২১২ বার

bbবিশেষ প্রতিনিধি :  ‘ঈদের খুশির মতো আজকের দিনটি ছিল। আজ সারাদিন প্রতিটি বিদ্যালয় মুখর হয়ে ওঠে কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। নতুন বছরের প্রথম দিনে উপহার হিসেবে দেশের সাড়ে চার কোটি শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় ঝকঝকে নতুন পাঠ্যবই। নতুন বইয়ের সোঁদা গন্ধে মাতোয়ারা হয়েছে তারা

কোমল প্রাণের যত স্বপ্ন যেন মিশে রয়েছে বইয়ের পাতার ভাঁজে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে প্রতিটি স্টু্কলের পাঠ্যপুস্তক উৎসবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদরাও উৎসবে অংশ নেন। প্রথমবারের মতো পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্র্রেইল পদ্ধতির বই ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া মাধ্যমিকের শিক্ষক নির্দেশিকা গাইডও এবার নতুন করে ছাপানো হয়েছে।

আজিমপুর গার্লস স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত আক্তার বলল, ‘নতুন বই খুব সুন্দর।’ লালবাগ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ সুলতান আদনান নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে বলে, ‘খুব সুন্দর ছবি আছে নতুন বইয়ে। আমি আজই পড়া শুরু করব।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পরে মন্ত্রী উপস্থিত শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। কিছুটা সময়ের জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যান।

জানা যায়, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে চার কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হচ্ছে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই। প্রাক-প্রাথমিকের ৩২ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৪ শিক্ষার্থী পাবে এক কোটি পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার ৮৩২টি বই, প্রাথমিকে ২ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ১২৯ শিক্ষার্থী পাবে ১০ কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৭টি বই, মাধ্যমিক ও এসএসসি ভোকেশনালে এক কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার ২৬৮ জন শিক্ষার্থী পাবে ১৭ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৮টি বই, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে ২ লাখ ১০ হাজার ৭৭৫ জন শিক্ষার্থী পাবে ৯ লাখ ২১ হাজার ১১০টি বই এবং ইবতেদায়ি ও দাখিলে ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার ২১ জন শিক্ষার্থী পাবে ৫ কোটি ৭১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৫টি বই

এবারই প্রথম নিজেদের ভাষায় পাঁচ নৃগোষ্ঠীর ২৪ হাজার ৬৬১ জন শিশু ৫১ হাজার ৭৮২টি বিনামূল্যের বই পাবে। চাকমা, মারমা, সাদ্রী, গারো ও ত্রিপুরা এই পাঁচ ভাষার শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক স্তরে তাদের মাতৃভাষায় বই ছাপানো হয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে এক কোটি ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৮টি টিচিং ম্যাটেরিয়াল একই সঙ্গে বিতরণ করা হবে।

সকালের মিষ্টি রোদে শিশুসুলভ হাসিতে প্রাথমিকের ছোট্ট বন্ধুদের হাতে বই তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নতুন বইয়ের উচ্ছ্বাসে সোনামণিদের মুখেও লেগেছিল মিষ্টি হাসি। আকাশে উড়ছিল রঙিন বেলুন-ঘূর্ণায়মান ড্রোন। আর শিশুদের এক হাতে লাল-সবুজের ফেস্টুন ও অন্য হাতে রঙিন মলাটের নতুন বই।

সমস্বরে তারা আওয়াজ তুলেছে, ‘পড়তে পড়তে বই, অনেক বড় হই।’ সে আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়ে কানে বেজেছে উপস্থিত শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষাকর্মী ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বই বিতরণের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবেই উৎসবে রূপ নেয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘বই বিতরণ উৎসব ২০১৭’-এ ঢাকা মহানগরীর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়।

পোলিও আক্রান্ত আট বছরের শিশু ইয়াসিন রাজধানীর পশ্চিম ভাসানটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। হুইলচেয়ারই তার নিত্যসঙ্গী। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও গতকাল ইয়াসিনকে ঘরে আটকে রাখতে পারেননি ওর মা মোসাম্মাৎ তানিয়া। তিনি সমকালকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ভর্তির ব্যাপারে স্কুলে গিয়েছিলাম। তখন শিক্ষকরা ওকে বলেছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে বই উৎসব হবে। তুমি আসবে। সেই থেকে ইয়াসিন আজকের দিনটির কথা মনে করে আছে। তাই যত কষ্টই হোক নিয়ে আসতেই হলো। নতুন বই পাওয়ার পর ওর যে আনন্দ তা দেখে মনে হচ্ছে কষ্ট করে ওকে এই উৎসবে নিয়ে আসা সার্থক হয়েছে।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন বইয়ের গন্ধ ভারি চমৎকার। বইয়ে নিজের নাম লেখাটাও আনন্দের; নতুন বই পড়তে ততধিক আনন্দ।’ শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তবে শুধু মানুষ হিসেবে জন্মালেই এ শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা যায় না। পড়ালেখা করে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই শ্রেষ্ঠ হতে হয়। বড় হয়ে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অবদান রাখার জন্য তিনি তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এবার ২ কোটি ৪৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের সর্বমোট প্রায় ১১ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৫২ কপি পাঠ্যবই বিতরণ করা হচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আসিফ-উজ-জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি, সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, উম্মে রাজিয়া কাজল প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল।