সুস্থতার গোপন চাবিকাটি আমলকি
আসমা খন্দকার : সুস্থতার গোপন চাবিকাটি আমলকি । আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, এই ভেষজ ফলটিতে পেয়ারার চেয়ে ৩ গুণ এবং কাগজি লেবুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। আর কমলা, আপেল, আম, কলার চেয়ে এটি ১৫ থেকে ১২০ গুণ বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
আমলকি এক প্রকার ভেষজ ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম – আমালিকা। ইংরেজি নাম -aamla বা IndiangooseberryIndian gooseberry। আমলকি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus emblica বা Emblica officinalislanthus। এর স্বাদ প্রথমে কষটে লাগলেও খাওয়া শেষে মুখে মিষ্টি ভাব আসে। আমলকির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, প্রতিদিন একটি আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করুন। সুস্থ থাকুন।
এটা হতে পারে বিভিন্ন ভাবে- আমলকির আচার তৈরি করে; আমলকির মোরব্বা কিংবা আমলকির পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে রান্নায়। এই সামান্য আমলকি আপনাকে এনে দেবে বিস্ময়কর সব উপহার।
পুষ্টিগুণ:
এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিস রোগে আমলকির রস কিছু কাজ করে। কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতা রয়েছে । প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগে আমলকি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের পরে ক্ষতিগ্রস্ত প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়) -এর ক্ষত সারাতে আমলকি কার্যকর। আমলকির ফল, পাতা ও ছাল থেকে তৈরি ওষুধে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, প্রদাহ এবং কিডনি-রোগের জন্য ভূমিকা রাখে। আমলকি মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল-মাত্রা কমাতে পারে।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা:
০১) আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
০২) চুলের খুসকি সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।
০৩) কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায় আমলকি অনেক উপকারী।
০৪) আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে।
০৫) আধা চূর্ণ শুষ্ক ফল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে। খাবারের সঙ্গে আমলকির আচার হজমে সাহায্য করে।
০৬) আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ, চোখে চুলকানি বা পানি পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়।
০৭) প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত শক্ত থাকে।
০৮) এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকি গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। অ্যাসিডেটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।
০৯) আমলকি চোখ ভালো রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল; যা চোখের সঙ্গে জড়িও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
১০) প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সঙ্গে মধু মিশে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
১১) আমলকির টক ও তেতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকি গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন।
১২) ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার জন্য আমলকির জুস উপকারী।
১৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
১৪) লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে।
১৫) শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
১৬) এটি হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। আমলকির আচার বা মোরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে।
১৭) শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, পেশী মজবুত করে।
১৯) সর্দি-কাশি, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বেশ ভালো কাজ করে।
২০) ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলও কম রাখতে অবদান রাখে।