সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে ১ বছরে ৪৩ শতাংশ কালো টাকা পাচার হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার : শুধু ২০১৫ সালেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা করার হার আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিদ্বেষমুলক বক্তব্য ও সংঘাতপূর্ণ রাজনীতি পরিহার করতে হবে। একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
দেশের অর্থ পাচার নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদসম্মেলনে একথা বলেছেন বক্তারা।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কর বৃদ্ধি নয়, বরং অর্থপাচার বন্ধ হোক সর্বোচ্চ অগ্রধিকার: ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিতে গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমুহকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইকুইটিবিডি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরী।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোকে সুইস ব্যাংক বলা হয়। দেশটির আইন অনুয়ায়ী ব্যাংকগুলো তদের গ্রাহকদের পরিচয় প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা তাদের গোপন আয় সেখানে জমা রাখে।
প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, মোট বাজেটের ৬৭ শতাংশই ব্যায় করা হবে অনুন্নয়ন খাতে। মাত্র ৩৩ শতাংশ ব্যায় করা হবে উন্নয়ন খাতে। এই বাজেটে ভ্যাট এবং ট্যাক্স বাড়িয়ে জনগণের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
দেশের ব্যাংকগুলোতে সঞ্চয় বাড়ছে না উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, দুর্নীতি ও বিদেশে প্রতি বছর যে টাকা পাচার হয় তা দিয়ে বছরে দু’টি পদ্মা সেতু তৈরি করা সম্ভব। অথচ এই টাকা বিদেশে পাচার করে ওইসব দেশগুলোর ব্যাংক ভরা হচ্ছে। বিদেশের বাংকে বাংলাদেশীদের অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
সংগঠনের গবেষক আহসানুল করিম বাবর ১১ দফা প্রস্তাব দিয়ে বলেন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশী নাগরিকত্ব নিয়েছে তাদের সব অর্থনৈতিক তথ্যের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যাংক লেনদেনের স্বচ্ছতার ওপর আন্তঃদেশীয় চুক্তি করতে হবে। বেনামি সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে ভারতের পথ অনুসরণে আইন করতে হবে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সশিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) এর ২০১৫ সালের রিপোর্টের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ এই দশ বছরে বিল কারচুপি, ঘুষ, দুর্নীতি, আয়কর গোপন ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার এদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, অপচুক্তিতে বছরে ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ২০১৩ সালে ৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ৭০০কোটি টাকা কর কম দিয়েছে।
বাজেটে সুদ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। নতুন বাজেটে শতকরা প্রায় ১২ শতাংশ সুদ পরিশোধে খরচ ধরা হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশী। নতুন বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ ৩৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা ব্যায় বরাদ্দ ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন সৈয়দ আমিনুল হক, মোস্তফা কামাল আকন্দ ও বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের জায়েদ ইকবাল খান।