সিটিং চিটিং-অভিযানের পর এবার বাস উধাও রাজধানীতে-দুর্ভোগ
বিশেষ প্রতিনিধি : সিটিং চিটিং বাস সার্ভিস অভিযানের পর এবার বাস উধাও রাজধানীতে-এতে জন দুর্ভোগ তীব্র আকার ধারণ করেছে।
রাজধানীতে বাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রোববার সকাল থেকেই যাত্রীরা রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাসের দেখা পাচ্ছেন না। অনেকক্ষণ পর পর দু’একটি বাস চলাচল করছে। যে কয়েকটি বাস চলছে, তাতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডে অফিসগামী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। বাস না পেয়ে অনেকেই হেঁটেই ছুটেন গন্তব্যে। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই রিকশা-সিএনজি অটো রিকশায় উঠে পড়েন।
রোববার সকালে রাজধানীর জিগাতলায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকশ যাত্রীকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়। আর কোনো বাস হঠাৎ এলে তাতে ওঠার জন্য একসঙ্গে শত শত মানুষের ভিড় জমছে। কিন্তু অধিকাংশ যাত্রীই বাসে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা এলেই সেটি ঘিরেও ভিড় জমে যাত্রীদের।
ঢাকায় ‘সিটিং সার্ভিস’ ‘স্পেশাল সার্ভিস’ ও ‘গেট লক’ বাস বন্ধে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি অভিযান শুরু করেছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রোববার সকাল থেকে এ অভিযান তদারকিতে কাজ করছে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ছাড়া কাজ করছে মালিকদের পাঁচটি ভিজিলেন্স টিমও। অভিযানের ফলে সকাল থেকে রাজধানীতে পরিবহন মালিকরা রাস্তায় বাস নামাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, বাস বন্ধ করে মালিকরা কৃত্রিম গণপরিবহণ সঙ্কট তৈরি করছেন। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলছেন তারা।
এ দিকে রোববার সকালে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় মন্ত্রী বলেন, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা না আসা পর্যন্ত রাজধানীতে ‘সিটিং’ সার্ভিস বন্ধ এবং যানবাহনের বাম্পার অপসারণ ও অন্যান্য অনিয়ম বন্ধে অভিযান চলবে। আইনের মাধ্যমেই পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা সমাধান করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। এখানে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
শনিবার রাজধানীর এলেনবাড়িতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান জানান, আইন অনুযায়ী সব বাস গণপরিবহন হিসেবে চলাচল করবে।
এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করা যাবে না। বাসে ভাড়ার তালিকা থাকতে হবে। নারী, শিশুদের জন্য আসন সংরক্ষণ করতে হবে। অবৈধভাবে সংযোজন করা আসন, অ্যাঙ্গেল, বাম্পার, ক্যারিয়ার ও হুক অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় পড়তে হবে শাস্তির মুখে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যানের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার থেকেই সব বাস গণপরিবহন হিসেবে চলাচলের কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি।
গত ৪ এপ্রিল ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গণপরিবহন মালিকরা আর ‘সিটিং সার্ভিস’ চালাবেন না।
পরিবহন আইন ও রুট পারমিটের শর্ত লঙ্ঘন করে গত দুই যুগ ধরে রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’, ‘স্পেশাল সার্ভিস’ ও ‘গেট লক’ নামের বাসের দৌরাত্ম্য চলছে। এসব বাসে মালিকের খেয়াল-খুশি মতো ভাড়া আদায় করা হয়। মিনিবাসে ও বাসে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ ও ৭ টাকা হলেও সিটিং বা গেটলক সার্ভিসগুলোতে ৩৭ টাকা পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। শুধু ভাড়া নয়, নৈরাজ্য চলছে গণপরিবহনের পরিবেশেও। রাজধানীতে চলাচলকারী বাসে মালিকের ইচ্ছামাফিক আসন সংযোগ করা হয়েছে।