সিএ’র বাগড়ায় বিদ্রোহী স্মিথ-ওয়ার্নাররা
ডেস্ক রিপোর্টার : সিএ’র বাগড়ায় বিদ্রোহী হয়েছেন স্মিথ-ওয়ার্নাররা! বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা না হলে অস্ট্রেলিয়ার বিপর্যয় নেমে আসবে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে। বেতন-ভাতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীদের সংকটের নজির নতুন নয়। ক্রিকেটেও এর দেখা মিলবে। অতি সম্প্রতিই ভারতীয় খেলোয়াড়েরাই যেমন বোর্ডের সঙ্গে বেশ দর-কষাকষি করেছিলেন।
কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) সঙ্গে দেশটির ক্রিকেটারদের সংগঠনের (এসিএ) বিরোধ আসলে অন্য মাত্রার। এই সংকটটা এতটাই জটিল, আজ শেষ সময় পেরিয়ে গিয়েও তাই কোনো সমাধান হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট এতটাই সংকটে পড়েছে, দেশটির মিডিয়ার চোখে এটি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের কেয়ামতের দিন!
কিন্তু বিরোধটা কী নিয়ে? কেন রীতিমতো বোর্ডের বিরুদ্ধে একরকম বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন ক্রিকেটাররা? কেন সেটা এমন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছাল, যা এখন সমাধান করাই সম্ভব হচ্ছে না? অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটাররা কি বেশি লোভী হয়ে উঠেছেন, আকাশচুম্বী বেতন দাবি করছেন ওয়ার্নার-স্মিথরা?
না, আসলে ব্যাপারটি ঠিক তা নয়। সিএ যে নতুন বেতনকাঠামো প্রস্তাব করেছে, তাতে আসলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতেন দেশটির তারকা ক্রিকেটাররাই। কিন্তু ওয়ার্নার-স্মিথরা একা নন; তাঁদের একটি ক্রিকেট ইউনিয়ন আছে। যেখানে সব পেশাদার ক্রিকেটারের স্বার্থ দেখা হয়। সিএর নতুন প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ঘরোয়া ক্রিকেটের এই সাধারণ ক্রিকেটাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে শুধু নিজেদের স্বার্থ না দেখে অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটাররা এসিএর এই অবস্থানের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের দাবি, ‘ফেয়ার শেয়ার’।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের নির্দিষ্ট অঙ্কের বেতন দেয় না বোর্ড। বরং দেয় লভ্যাংশ। গত ২০ বছর ধরে এই ‘পে মডেল’ চলে আসছে। সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী, সিএ তার লাভের ২৬ শতাংশ দেয় ক্রিকেটারদের। যে বছর সিএর লাভ বেশি হয়, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক তত বাড়ে। লাভ কম হলে পারিশ্রমিকও কমে। লাভের এই ভাগ সব ক্রিকেটারই আনুপাতিক হারে পান। যে ক্রিকেটার বেতনের যে স্তরে থাকেন, লভ্যাংশ সেই অনুপাতে ভাগ হয়।
কিন্তু দুই দশক পার হয়ে সিএ এখন নতুন মডেলের কথা ভাবছে। তাদের মতে, আগের মডেল একদম তৃণমূল পর্যায়ে ক্রিকেটের বিকাশে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ কারণে গত মার্চে প্রথম যে নতুন মডেলের প্রস্তাব তারা দেয়, তাতে বলা হয়, শুধু শীর্ষ ২০ জন ক্রিকেটার সম্ভাব্য ২০ মিলিয়ন লাভের অংশ পাবেন। পুরুষ ক্রিকেটাররা (সংখ্যাটা হতে পারে ১৭ জন) পাবেন ১৬ মিলিয়ন, নারী ক্রিকেটাররা (বাকি তিনজন) পাবেন ৪ মিলিয়ন ডলার।
বাকি সব ক্রিকেটারের বেতন হবে নির্দিষ্ট। তবে এই বেতন প্রত্যেক বছর বাড়বে। এখনকার ৩১১ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে মোট বেতনের অঙ্কটা ২০২২ সাল নাগাদ ৪১৯ মিলিয়ন ডলার হবে। গড়ে প্রত্যেক নারী ক্রিকেটারের বেতন ১৫০ শতাংশ বাড়বে। বাড়বে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের বেতনও।
কিন্তু এসিএ হিসাব করে দেখেছে, সিএর প্রস্তাবে আগের মডেলের মোট লাভের ২০ শতাংশ খেলোয়াড়দের পাওয়ার হিসাব পূর্ণ হচ্ছে না। বিশেষ করে সিএ শিগগিরই বিলিয়ন ডলারের নতুন টিভি চুক্তি করতে যাচ্ছে। চার বছর ধরে বিগ ব্যাশ থেকে লাভ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। ফলে সিএর সম্ভাব্য আয় হবে অনেক বেশি।
খেলোয়াড়দের সংগঠনের অভিযোগ, সিএ কৌশল করে এই আয়ের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে ক্রিকেটারদের। এ কারণে এই নতুন মডেল। আবার সিএর দাবি, যেহেতু আয়ের ক্ষেত্রে ঘরোয়া ক্রিকেটাররা সেভাবে ভূমিকা রাখে না, তারা তাদের লাভের টাকা শীর্ষ ক্রিকেটার ও তৃণমূল ক্রিকেটারদের ওপর বেশি বিনিয়োগ করতে চাইছে। স্কুল ও তৃণমূলের ক্লাব ক্রিকেটে, যেখানে কয়েক লাখ ক্রিকেটার জড়িত। এখান থেকেই উঠে আসবে শীর্ষ ক্রিকেটাররা, যারা সিএর মূল আয়ে অবদান রাখবে।
এ নিয়েই ঝামেলা। এর মধ্যে সিএ নতুন আরেকটি প্রস্তাব নিয়ে হাজির হলেও তা গ্রহণ করেননি ক্রিকেটাররা। এর মধ্যেই পেরিয়ে যাচ্ছে আজকের শেষ সময়সীমা। আপাতত দুই পক্ষই কোণঠাসা। ক্রিকেটাররা বেতন পাবেন না নতুন চুক্তি না হলে। সিএ এর মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, প্রতি ১৫ দিনে যে পরিমাণ টাকা তাদের বেঁচে যাবে, তা সরাসরি দিয়ে দেওয়া হবে তৃণমূলের ক্রিকেটে। ক্রিকেটাররা যেন বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া অন্যান্য দেশের টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতেও খেলতে না পারে, এই উদ্যোগও সিএ নিচ্ছে। ফলে খেলোয়াড়েরা আসলেই বেকার হয়ে পড়বেন, সন্দেহ নেই।
আবার এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। ক্রিকেটারদের ছাড়া সিএ দল করবে কীভাবে? বিগ ব্যাশই বা চলবে কীভাবে? শুধু তা-ই নয়, ইন্টেলেকচুয়াল কপিরাইট বা ইমেজ রাইটের যে আইন; তাতে তারকা ক্রিকেটারদের ব্যবহার করে নতুন চুক্তি করতে পারবে না সিএ। টিভি সম্প্রচারকারীও নিশ্চয়তা চাইবে তারকা ক্রিকেটারদের উপস্থিতির। না হলে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ কেনই-বা করবে তারা?