• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

সারাদেশে দলীয় কামড়াকামড়িতে ইমেজ পাংচার আওয়ামী লীগের


প্রকাশিত: ১১:৪০ পিএম, ১২ জুন ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৭ বার

aaaaটিপু খন্দকার.ঢাকা:  বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চলেছে সারা দেশজুড়ে। শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না থাকায় বেশির ভাগ এলাকায় নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ নিজ এলাকার আধিপত্য ধরেই রাখাই এর পেছনের কারণ বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজেদের আধিপত্য আর ক্ষমতা ধরে রাখতে নেতারা গড়ে তুলছেন নিজস্ব বলয়। প্রয়োজনে চলে যাচ্ছেন দলের স্বার্থের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি এমন দিকে মোড় নিয়েছে যে, নিজ দলের প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীকে খুন করতেও সংকোচ করছেন না তাঁরা।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন ১৭২

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত ১৭২ নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও চরমপন্থীদের হাতে খুন হয়েছে দলটির ৭৫ নেতা-কর্মী।

অভ্যন্তরীণ হুমকি-ধমকি

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দুদিন আগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের যুবলীগ অফিসের ভেতরে একসময়ের প্রভাবশালী নেতা ও আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোসকে চরম অপমান করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। অভিযোগ পাওয়া গেছে, বাহাউদ্দিন নাছিম তাঁকে কার্যালয়ে না আসতে হুমকি-ধমকিও দেন। মুকুল বোস সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে চিহ্নিত।

এ ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে গত ২৭ মে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনা উপলক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি প্রস্তুতি সভা হয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের ওই সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম প্রস্তুতিসংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্য দিতে গেলে সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম তাঁকে তিরস্কারমূলক কথাবার্তা বলেন। সেই সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা বিষয়টি জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মৌনযুদ্ধ চললেও তৃণমূলে চলছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা। শুধু তাই নয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের পর নগরকেন্দ্রিক রাজনীতিতেও নতুন মেরকরণ শুরু হয়েছে। ক্ষমতার কাছে থাকা নেতারা ক্ষমতা ছাড়তে চাচ্ছেন না। আর নতুন করে অনেকে ক্ষমতার বলয় গড়ে তুলতে চাচ্ছেন।

মহিউদ্দিন-নাছিরে বিভক্ত চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের পর সেখানকার আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

চসিক মেয়র নির্বাচনের আগেও চট্টগ্রাম মহানগর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকদের আধিপত্য ছিল। কিন্তু আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চুপসে যান এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরা। আর এই নতুন করে জায়গা করে নিচ্ছেন আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মেয়রকে সম্ভাষণ জানাতে গিয়ে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে মহিউদ্দিন ও ছালামের সমর্থকদের।

গত ৩ জুন চট্টগ্রামের জামাল খান এলাকায় নাগরিক সংবর্ধনায় এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী-সমর্থিত যুবলীগের দুই কর্মীকে ছুরিকাঘাত করে মেয়র নাছিরের সমর্থকরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী কিছু বলতে রাজি হননি। আর আ জ ম নাছির তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থকদের কারণে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যতম দুই নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও  আবদুচ ছালামের সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অজানা আতঙ্ক কাজ করছে।

উত্তেজনা ঢাকার রাজনীতিতেও

চট্টগ্রামের মতো ঢাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ঘোলাটে। সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা সিটিতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি সেলিমসহ অনেকেই নিজেদের প্রভাব ও ক্ষমতা নিয়ে শঙ্কায় আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা হাজি মো. সেলিম বলেন, ‘আমাকে নিয়ে বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র চলছে। আমি আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করে রাজনীতি করি। দলের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজে নিজেকে জড়াইনি।’

জেলা শহরগুলোর কোন্দ্বল

গত ২ জুন সকালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরে স্থানীয় যুবলীগকর্মী আরশেদ মাতবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর নিজ দলের অন্য একটি পক্ষ এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আরশেদের সঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে শাজাহান দরানী নামে এক মুদি দোকানিকেও।

এর একদিন আগে সোমবার রাতে আরেক যুবলীগ নেতা আজিজুল হককে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো দুজন। এটিও অভ্যন্তরীণ কোন্দ্বলের কারণে ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

একই দিন পাবনার ঈশ্বরদীতে এক ছাত্রলীগ নেতার বাম হাত কেটে নিয়ে উল্লাস করেছেন একই দলের আরেকটি পক্ষের নেতাকর্মীরা।

২৯ মে রাজশাহীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জীবন বিশ্বাস (২২) নামে এক ছাত্রলীগকর্মী নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো দুজন।

খুনোখুনি

প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের মধ্যকার সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এতে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কার্যকর দলীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

একইভাবে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ছয় বছরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছেন দুই শতাধিক নেতা-কর্মী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলার চার্জশিটও দাখিল করেনি পুলিশ। যেগুলোর চার্জশিট হয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়াও চলছে ধীরগতিতে।

ঢাকা

রাজধানীতে ২০১৩ ও ১৪ সালে আলোচিত দুটি ঘটনা মিল্কী হত্যা ও জাহাঙ্গীর কবির হত্যা। দুটি ঘটনারই খুনিরা এখনো বিচারের আওতায় আসেনি।

১. মিল্কী হত্যা

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে গুলশানের একটি বিপণিবিতানের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তারও করে র‌্যাব। মূল আসামি জাহিদ সিদ্দিক তারেক র‌্যাবের সঙ্গে ‘কথিত’ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে নারাজি আবেদন করা হয়। বর্তমানে ওই মামলার কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

২. জাহাঙ্গীর হত্যা

২০১৪ সালের ৮ আগস্ট দলীয় কোন্দলে খুন হন রাজধানীর ৪০ নম্বর ওয়ার্ড নেতা জাহাঙ্গীর কবীর। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত দুই নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, স্বপন, অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিচার চলছে।

ফেনী

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরে প্রকাশ্যে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক একরামকে গুলি করে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আলোচিত এ হত্যাকা-ে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে কোনো কথা না বললেও আল্লাহর কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন।

নরসিংদী

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন খুন হন। ওই খুনের ঘটনায় তৎকালীন সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ভাই সালাউদ্দিন বাচ্চুকে প্রধান আসামি করেন লোকমানের ভাই কামরুজ্জামান। পরে বাচ্চুসহ ১১ জনের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। সর্বশেষ উচ্চ আদালতে মামলাটি স্থগিত রয়েছে।

এ ছাড়া জেলার শিবপুরের কাড়ারচর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দুলাল ভা-ারী, পুটিয়া ইউপির মেম্বার আরিফুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহীনও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন। কিন্তু এসব খুনের ঘটনায় কোনো বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

সিলেট

২০১৪ সালের ১১ জুলাই সিলেট জেলায় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উদয় সিংহ পলাশ নিহত হন। পলাশ হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের ছয়জনকে আসামি করে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়। প্রত্যেকেই সরকারি দলের প্রভাবে জামিনে রয়েছেন। একই বছরের ২০ নভেম্বর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই গ্র“পের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন সুমন চন্দ্র দাস। এ ঘটনায় মামলা হলেও এজাহারভুক্ত কোনো আসামিই গ্রেপ্তার হয়নি।

গাজীপুর

এক বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুরে আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যান উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন। আলোচিত ওই মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে স্থগিত রয়েছে।

কুমিল্লা

চলতি বছরের ৫ এপ্রিল কুমিল্লায় প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শহর ছাত্রলীগের সভাপতি এম সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় একটি মামলা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

চলতি বছরের ১৪ মে কুমিল্লার তিতাসে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মাসুম সরকার নিহত হন। এ ঘটনায় ৪০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো আসামিই গ্রেপ্তার হননি।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৯ মে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ভাতিজা আহসান হাবিব সুমু এবং ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ নেতা পলাশও দলীয় কোন্দলে খুন হন। এসব ঘটনায় মামলা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। হামলাকারীরা জেলার সদর আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের অনুসারী বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে গোলাগুলি ও সংঘাত-সংঘর্ষে ১১ জন খুন হয়েছেন।

আ. লীগ নেতাদের ভাষ্য

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। তাই ছোটখাটো সমস্যা আছে, থাকবে। তাঁরা বলেন, পরিবারেও সমস্যা হয়। এখানে মত-পথের পার্থক্য আছে। এটা বড় করে দেখলে হবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। খুব শিগগিরই এসব ঘটনার সমাধান হবে।

সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বড় ও সুশৃঙ্খল সংগঠন। এখানে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটতেই পারে। এটাকে বড় করে দেখার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায়। দলকে বিতর্কে জড়ানোর জন্য ভিন্ন মহলও কিছু ঘটনার পেছনে যুক্ত থাকতে পারে।

তবে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এগুলো নিরসনে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনা শিগগিরই মিটে যাবে। দল ক্ষমতায় থাকার ফলে কিছু কিছু জায়গায় অভ্যন্তরীণ গ-গোলগুলো সৃষ্টি হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কোথাও কোথাও ষড়যন্ত্রকারীরা এগুলো করছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ক্ষমতাসীন আ.লীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে
আমাদের সময়.কম : ১২/০৬/২০১৫

১৪২৭৩৫০১৬৩এম এ আহাদ শাহীন: বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চলেছে সারা দেশজুড়ে। শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না থাকায় বেশির ভাগ এলাকায় নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ নিজ এলাকার আধিপত্য ধরেই রাখাই এর পেছনের কারণ বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজেদের আধিপত্য আর ক্ষমতা ধরে রাখতে নেতারা গড়ে তুলছেন নিজস্ব বলয়। প্রয়োজনে চলে যাচ্ছেন দলের স্বার্থের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি এমন দিকে মোড় নিয়েছে যে, নিজ দলের প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীকে খুন করতেও সংকোচ করছেন না তাঁরা।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন ১৭২

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত ১৭২ নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও চরমপন্থীদের হাতে খুন হয়েছে দলটির ৭৫ নেতা-কর্মী।

অভ্যন্তরীণ হুমকি-ধমকি

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দুদিন আগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের যুবলীগ অফিসের ভেতরে একসময়ের প্রভাবশালী নেতা ও আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোসকে চরম অপমান করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। অভিযোগ পাওয়া গেছে, বাহাউদ্দিন নাছিম তাঁকে কার্যালয়ে না আসতে হুমকি-ধমকিও দেন। মুকুল বোস সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে চিহ্নিত।

এ ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে গত ২৭ মে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনা উপলক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি প্রস্তুতি সভা হয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের ওই সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম প্রস্তুতিসংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্য দিতে গেলে সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম তাঁকে তিরস্কারমূলক কথাবার্তা বলেন। সেই সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা বিষয়টি জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মৌনযুদ্ধ চললেও তৃণমূলে চলছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা। শুধু তাই নয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের পর নগরকেন্দ্রিক রাজনীতিতেও নতুন মেরকরণ শুরু হয়েছে। ক্ষমতার কাছে থাকা নেতারা ক্ষমতা ছাড়তে চাচ্ছেন না। আর নতুন করে অনেকে ক্ষমতার বলয় গড়ে তুলতে চাচ্ছেন।

মহিউদ্দিন-নাছিরে বিভক্ত চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের পর সেখানকার আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

চসিক মেয়র নির্বাচনের আগেও চট্টগ্রাম মহানগর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকদের আধিপত্য ছিল। কিন্তু আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চুপসে যান এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরা। আর এই নতুন করে জায়গা করে নিচ্ছেন আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মেয়রকে সম্ভাষণ জানাতে গিয়ে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে মহিউদ্দিন ও ছালামের সমর্থকদের।

গত ৩ জুন চট্টগ্রামের জামাল খান এলাকায় নাগরিক সংবর্ধনায় এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী-সমর্থিত যুবলীগের দুই কর্মীকে ছুরিকাঘাত করে মেয়র নাছিরের সমর্থকরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী কিছু বলতে রাজি হননি। আর আ জ ম নাছির তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থকদের কারণে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যতম দুই নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও  আবদুচ ছালামের সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অজানা আতঙ্ক কাজ করছে।

উত্তেজনা ঢাকার রাজনীতিতেও

চট্টগ্রামের মতো ঢাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ঘোলাটে। সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা সিটিতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি সেলিমসহ অনেকেই নিজেদের প্রভাব ও ক্ষমতা নিয়ে শঙ্কায় আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা হাজি মো. সেলিম বলেন, ‘আমাকে নিয়ে বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র চলছে। আমি আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করে রাজনীতি করি। দলের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজে নিজেকে জড়াইনি।’

জেলা শহরগুলোর কোন্দ্বল

গত ২ জুন সকালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরে স্থানীয় যুবলীগকর্মী আরশেদ মাতবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর নিজ দলের অন্য একটি পক্ষ এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আরশেদের সঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে শাজাহান দরানী নামে এক মুদি দোকানিকেও।

এর একদিন আগে সোমবার রাতে আরেক যুবলীগ নেতা আজিজুল হককে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো দুজন। এটিও অভ্যন্তরীণ কোন্দ্বলের কারণে ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

একই দিন পাবনার ঈশ্বরদীতে এক ছাত্রলীগ নেতার বাম হাত কেটে নিয়ে উল্লাস করেছেন একই দলের আরেকটি পক্ষের নেতাকর্মীরা।

২৯ মে রাজশাহীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জীবন বিশ্বাস (২২) নামে এক ছাত্রলীগকর্মী নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো দুজন।

খুনোখুনি

প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের মধ্যকার সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এতে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কার্যকর দলীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

একইভাবে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ছয় বছরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছেন দুই শতাধিক নেতা-কর্মী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলার চার্জশিটও দাখিল করেনি পুলিশ। যেগুলোর চার্জশিট হয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়াও চলছে ধীরগতিতে।

ঢাকা

রাজধানীতে ২০১৩ ও ১৪ সালে আলোচিত দুটি ঘটনা মিল্কী হত্যা ও জাহাঙ্গীর কবির হত্যা। দুটি ঘটনারই খুনিরা এখনো বিচারের আওতায় আসেনি।

১. মিল্কী হত্যা

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে গুলশানের একটি বিপণিবিতানের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তারও করে র‌্যাব। মূল আসামি জাহিদ সিদ্দিক তারেক র‌্যাবের সঙ্গে ‘কথিত’ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে নারাজি আবেদন করা হয়। বর্তমানে ওই মামলার কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

২. জাহাঙ্গীর হত্যা

২০১৪ সালের ৮ আগস্ট দলীয় কোন্দলে খুন হন রাজধানীর ৪০ নম্বর ওয়ার্ড নেতা জাহাঙ্গীর কবীর। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত দুই নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, স্বপন, অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিচার চলছে।

ফেনী

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরে প্রকাশ্যে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক একরামকে গুলি করে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আলোচিত এ হত্যাকা-ে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে কোনো কথা না বললেও আল্লাহর কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন।

নরসিংদী

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন খুন হন। ওই খুনের ঘটনায় তৎকালীন সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ভাই সালাউদ্দিন বাচ্চুকে প্রধান আসামি করেন লোকমানের ভাই কামরুজ্জামান। পরে বাচ্চুসহ ১১ জনের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। সর্বশেষ উচ্চ আদালতে মামলাটি স্থগিত রয়েছে।

এ ছাড়া জেলার শিবপুরের কাড়ারচর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দুলাল ভা-ারী, পুটিয়া ইউপির মেম্বার আরিফুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহীনও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন। কিন্তু এসব খুনের ঘটনায় কোনো বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

সিলেট

২০১৪ সালের ১১ জুলাই সিলেট জেলায় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উদয় সিংহ পলাশ নিহত হন। পলাশ হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের ছয়জনকে আসামি করে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়। প্রত্যেকেই সরকারি দলের প্রভাবে জামিনে রয়েছেন। একই বছরের ২০ নভেম্বর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই গ্র“পের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন সুমন চন্দ্র দাস। এ ঘটনায় মামলা হলেও এজাহারভুক্ত কোনো আসামিই গ্রেপ্তার হয়নি।

গাজীপুর

এক বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুরে আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যান উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন। আলোচিত ওই মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে স্থগিত রয়েছে।

কুমিল্লা

চলতি বছরের ৫ এপ্রিল কুমিল্লায় প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শহর ছাত্রলীগের সভাপতি এম সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় একটি মামলা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

চলতি বছরের ১৪ মে কুমিল্লার তিতাসে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মাসুম সরকার নিহত হন। এ ঘটনায় ৪০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো আসামিই গ্রেপ্তার হননি।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৯ মে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ভাতিজা আহসান হাবিব সুমু এবং ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ নেতা পলাশও দলীয় কোন্দলে খুন হন। এসব ঘটনায় মামলা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। হামলাকারীরা জেলার সদর আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের অনুসারী বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে গোলাগুলি ও সংঘাত-সংঘর্ষে ১১ জন খুন হয়েছেন।

আ. লীগ নেতাদের ভাষ্য

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। তাই ছোটখাটো সমস্যা আছে, থাকবে। তাঁরা বলেন, পরিবারেও সমস্যা হয়। এখানে মত-পথের পার্থক্য আছে। এটা বড় করে দেখলে হবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। খুব শিগগিরই এসব ঘটনার সমাধান হবে।

সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বড় ও সুশৃঙ্খল সংগঠন। এখানে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটতেই পারে। এটাকে বড় করে দেখার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায়। দলকে বিতর্কে জড়ানোর জন্য ভিন্ন মহলও কিছু ঘটনার পেছনে যুক্ত থাকতে পারে।

তবে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এগুলো নিরসনে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনা শিগগিরই মিটে যাবে। দল ক্ষমতায় থাকার ফলে কিছু কিছু জায়গায় অভ্যন্তরীণ গ-গোলগুলো সৃষ্টি হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কোথাও কোথাও ষড়যন্ত্রকারীরা এগুলো করছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’