সামিটের নদী দখলদারি! কীর্তনখোলায় নদীর ওপর সাইনবোর্ড!
বরিশাল প্রতিনিধি : এবার কীর্তনখোলা নদীর দখলদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে! তবে সামিট বলছে নদী দখলদারি নয়। এটা তাদের জমির অংশ। কীর্তনখোলায় সামিট র্কীতি নিয়ে যখন আলোচনা তখন ওই নদীতে সাইনবোর্ড বসিয়ে জমির মালিকানা দাবি করেছে সামিট বরিশাল পাওয়ার লিমিটেড।
এদিকে কীর্তনখোলা নদীর দখলদারি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়ছে।নদীর মধ্যে জমির মালিকানা দাবির সাইনবোর্ড সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে। নদীর ওপর তোলা সাইনবোর্ডে বলা হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন রুপাতলী মৌজার জেএল ৫৬ দাগ নং ১৯০০ এর জমি সামিটের। নদীর ওপর ওই সাইনবোর্ডে কত শতাংশ জমি রয়েছে তা জানায় সামিট।
সাইবোর্ডের সত্যতা স্বীকার করে সামিট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, যে অংশ তারা ক্রয় করেছে তা কীর্তনখোলা নদী নয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, সামিট বরিশাল পাওয়ার লিমিটেডের ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পশ্চিম দিকে চরে সামিট পাওয়ারের নিজস্ব সম্পত্তির সাইবোর্ড এখনো রয়েছে। ওই সাইনবোর্ডের আরও একটু সামনে নদীর মধ্যে একটি বাঁশের সাথে সাইনবোর্ড ছিল। যেটি বর্তমানে নেই।
সেখানে নদীর ঘাটে নিয়মিত গোসল করেন স্থানীয় বাসিন্দা রহমত। তিনি বলেন, তিন-চার বছর ধরে এখানে সামিটের মালিকানার একটা সাইনবোর্ড ছিল। আজকে গোসলে এসে দেখছি না। কারা খুলে নিয়েছে জানি না তবে নদীর মধ্যের ওই জমি সামিটের বলে আমরা জানতাম।
স্থানীয় বাসিন্দা রাশিদা বেগম বলেন, জোর যার মুল্লুক তার। সামিট সাইনবোর্ড দিয়েছে, ওখানকার জমি তারা কেনেনি। সাইনবোর্ড দিয়ে রেখেছে নদীর তীরে। ১০/১২ দিন আগে নদীর তীরে এসেছিলাম তখন দেখেছি। আজকেতো এসে সাইনবোর্ড দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো সামিটের কেউ খুলে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে সামিট যখন সাইনবোর্ড দেয়, তখন ওখানে নদী ছিল না। চর ছিল। সেখান থেকে মাটি কেটে সামিট নিয়ে গেছে।রাহিমা বেগম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, নদীর চরে তারা কয়েক বছর আগে জমির মালিকানার সাইনবোর্ড দিয়েছিল। আমরা শুনেছি সিটি কর্পোরেশনের সড়কের মোড়ের বাইরের অংশ সামিট পাওয়ারের আওতায় গেছে।
সামিট বরিশাল পাওয়ার লিমিটেডের একটি সূত্র বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি ছড়িয়ে পরার পরপরই সেটি নজরে আসে সামিট কর্তৃপক্ষের। নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার (৭ মে) সকালে সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়।
বিষয়টি জানতে সামিট বরিশাল পাওয়ার লিমিটেডের ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ইনচার্জ মেহেদী হাসানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা যান্ত্রিক বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত। এসব বিষয়ে কথা বলার এখতিয়ার নেই। তবে তিনি স্বীকার করেন ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি হেড অফিসে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগের জন্য বলেন তিনি।
মেহেদী হাসানের দেওয়া নম্বরে কয়েক দফা যোগাযোগ করার পর সামিট বরিশাল পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যানের পিএস তৌহিদুল ইসলামের মাধ্যমে কথা হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি ম্যানেজিং ডিরেক্টর—ওইটাই আমার পরিচয়। নাম জানার দরকার নাই। ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামিট পাওয়ার।’
এই কর্মকর্তা বলেন, কীর্তনখোলার তীরে আমাদের জমি ক্রয় করা আছে। কিন্তু জমি কোনো কাজে লাগছে না। তাই স্থানীয় লোকজন ওই জমিতে চাষাবাদ করেন। ওখানে আমাদের কোনো প্রকল্প নেই। যেহেতু জমিটি আমাদের ক্রয় করা, তাই মালিকানার জন্য সাইনবোর্ড আছে। নদীর পানি বাড়লে মনে হয় নদীর মধ্যে। আসলে ওটা নদীর অংশ না। যেহেতু কোনো বাউন্ডারি করা হয়নি সেজন্য সাইনবোর্ড দেওয়া।
সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলার প্রশ্নে তিনি বলেন, স্থানীয় কেউ হয়তো সাইনবোর্ড সরিয়ে রেখেছে। সে সর্ম্পকে আমরা জানি না। এক বিঘারও কম ২৫ শতাংশের মত জমি ২০১৫ সালে আমি নিজে থেকে কিনেছি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার (৬ মে) সামিট বরিশাল পাওয়াল লিমিটেড সংলগ্ন সড়ক সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। ওই সময়ে নদীর মধ্যে সাইনবোর্ড দেখে কেউ হয়তো ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপরই ছবিটি নিয়ে বিভিন্নজন মন্তব্য করছেন।