সাবেক ওসি গোলাম কুদ্দুস বাহিনী ছিনিয়ে নিলো রমনা পুলিশের আসামী
বিশেষ প্রতিনিধি : পুলিশের সাবেক ওসি গোলাম কুদ্দুসের বাহিনী এবার ছিনতাই করলো রমনা পুলিশের আসামী। রীতিমত ফিল্মি কায়দায় রমনা পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে পুলিশের গাড়ি থেকে কুদ্দুস বাহিনীর সদস্যরা আসামী ছিনিয়ে নেয়। এনিয়ে তোলপাড় চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কয়েক বছর আগে এই স্থান থেকেই পুলিশের বিশেষ শাখার দুই পরিদর্শককে হত্যা করেছিল দুবৃত্ত্বরা এবং এখানকার শহিদী জামে মসজিদে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছিল চার মাদ্রাসা ছাত্র।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুর তখন ১২টা-। মালিবাগ ডিআইটি রোডে কয়েকশ মানুষ ঘিরে ফেলেছে পুলিশের একটি পিকআপ। ভ্যানটি আর এগুতে পারছে না। পিকআপের পেছনে বসা তিনজন পুলিশ জাপটে ধরে রেখেছেন এক আসামিকে। এরই মধ্যে ৫/৬ ব্যক্তি চিৎকার করতে করতে উঠে পড়লেন পিকআপে। তারা পুলিশের হাতে ধরা সেই আসামিকে টেনে বের করার চেষ্টা করছে। চলছে টানা হেঁচড়া। পিকআপের সামনে বসা পুলিশের এসআই আর কনস্টেবল ড্রাইভার দরজা খুলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লেন।
লোকজনের তুমুল হৈচৈ আর মারমুখি অবস্থানে পিকআপের ভিতরের পুলিশের দলটি আসামিকে ধরে রাখতে পারল না। তারা পিকআপ থেকে নামিয়েই আসামি নিয়ে লাপাত্তা। উত্তেজিত লোকজন এবার পিকআপে হামলার চেষ্টা করে, ধাওয়া দেয়। গাড়ি ফেলে পুলিশ সদস্যরা সামনের দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে। কিছু সময় পর ড্রাইভার পিকআপে উঠেই দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
খোদ রাজধানীতে দিনদুপুরে এভাবেই পুলিশের পিকআপ থেকে এক আসামিকে ছিনতাই করা হয়।মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে ঘটে এসব অপকর্ম। মালিবাগ ডিআইটি রোডে এই আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পুলিশ জানায়, ড্রাগন গার্মেন্টস অ্যান্ড স্পিনিং লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজারকে (জিএম) গ্রেফতারের পর লোকজন তাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাকে গ্রেফতারের জন্য রমনা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল।
এ ব্যাপারে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গার্মেন্টের মালিক হলেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে রমনা মডেল থানার একটি টিম আদালতের নির্দেশে পলাতক আসামি রুবেলকে গ্রেফতার করতে যায়। পরে ওই আসামিকে গ্রেফতার করে রমনা থানা পুলিশের পিকআপ ভ্যানে উঠিয়ে চলতে শুরু করে। এ সময় পেছন থেকে লোকজন ধর ধর চিৎকার দিয়ে পুলিশ ভ্যানকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল মারতে শুরু করে। পরে ঘিরে ফেলে রুবেলকে ছিনিয়ে নেয়।
উত্তেজিত কিছু মানুষ ওই আসামিকে পুলিশের ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়। এর এক পর্যায়ে মানুষগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু। পরে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে পুলিশের পিকআপ ভ্যান থামিয়ে আসামি রুবেলকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।
এ সময় তারা রমনা থানা পুলিশের ওই পিকআপ ভ্যানটি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় রমনা থানার এসআই নেয়াজ ও মেহেদিসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। তারা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জাতিরকন্ঠকে জানান,দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ড্রাগন গার্মেন্টসের সামনে রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়। এতে মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরা রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার জানান, পাওনা আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় এই গার্মেন্টের চারজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করে শ্রমিকরা। আসামিরা হলেন—ড্রাগন গার্মেন্টসের মালিক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা কামাল সোবহান, জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) কামরুল সোবহান রুবেল এবং নির্বাহী পরিচালক শহিদ। এই আসামিরা আদালতের নির্দেশে হাজির না হয়ে দীর্ঘদিন পলাতক থাকেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
ডিসি আরও বলেন, পুলিশ আদালতের নির্দেশে পলাতক আসামিদের ধরতে গেলে অসাধু ব্যক্তিরা পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেয় ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে।