সাবিক-মিরাজ ভেলকিতে নাকাল ‘ওরা’
বিশেষ প্রতিনিধি : একেই বলে ওরা টাইগার! তানাহলে মিরাজ সাবিকের ভেলকিতে কেন নাজেহাল হবে অস্ট্রেলিয়া! অথচ মিরপুর টেস্টের শুরুটা কী ভয়াবহ ছিল ভাবাই যায় না। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেই অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। সাকিব-তামিমের ব্যাটে সেই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ওঠে টাইগাররা।
চা বিরতির পর ফের ধস নামে বাংলাদেশের ইনিংসে। অজি বোলারদের তোপের মুখে পড়ে মাত্র ২৬০ রানে গুটিয়ে গেলেও স্বস্তি নিয়েই দিন শেষ করেছে টাইগাররা। টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৭ উইকেট হাতে রেখে মুশফিকদের চেয়ে এখনো ২৪২ রানে পিছিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ১০ রানে প্রথম ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর শেষের ৪ উইকেটের পতন ঘটে ২০ রানের ব্যবধানে। মাঝপথে বাংলাদেশের ইনিংসের ভিত গড়ে দেন সাকিব ও তামিম। এই দুজনের দৃঢ়তায় গুটিয়ে যাওয়ার আগে ২৬০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছে অস্ট্রেলিয়া।
ডেভিড ওয়ার্নার আউট হন ৮ রান করে। উসমান খাজা ১ রান করলেও রানের খাতাই খুলতে পারেননি নাথান লায়ন। দিন শেষে স্টিভেন স্মিথ ৩ ও ম্যাট রেশন ৬ রানে অপরাজিত রয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এই দুজনের স্পিনে দিনের শেষ বেলায় ভ্যাবাচেকা খায় অস্ট্রেলিয়া। আগামীকালও যে বাংলাদেশের স্পিনাররা দাপট দেখাবেন সেটিরই যেন আভাস মিলল রোববার।
বাংলাদেশের করা ২৬০ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। মেহেদী হাসান মিরাজের করা ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বল আঘান হানল ডেভিড ওয়ার্নারের প্যাডে। জোরালো আবেদন। সেই ডাকে সাড়া দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার আলিম দার। তবে তারচেয়েও দ্রুত সময়ে রিভিউ নেন ওয়ার্নার। থার্ড আম্পায়ার যাচাই করে দেখেন বল প্যাডে লাগার আগে ব্যাটে লাগে। আউট নাকচ।
পরের বলে আবারও ওয়ার্নারের প্যাডে বল আঘান হানল। এবারও জোরালো আবেদন। সেই আবেদনে সাড়াও দেন আম্পায়ার। তবে এবার আর রিভিউ নেননি ওয়ার্নার। হাঁটা দেন সাজঘরের দিকে।শুরুতেই ওয়ার্নারকে হারানোর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আরো দুই উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৬ রান।
সাকিবের করা সপ্তম ওভারের প্রথম বলে শর্ট কাভারে ঠেলে দিয়ে রান নিয়ে গিয়ে রানআউটের ফাঁদে পড়েন উসমান খাজা। উইকেটের পেছন থেকে দৌড়ে গিয়ে থ্রো করেন মুশফিক। স্টাম্পের কাছে থাকা সৌম্য সরকার বল ধরেই স্টাম্প ভেঙে দেন। উৎসবে মেতে ওঠে গোটা মিরপুর স্টেডিয়াম; সেইসঙ্গে টিভির পর্দা কিংবা রেডিওতে কান পেতে থাকা বাংলাদেশি সমর্থকরা।
শুরুতেই দুই উইকেট তুলে নিয়ে উজ্জীবিত বাংলাদেশ। অন্যদিকে চাপের মুখে অস্ট্রেলিয়া। সেই চাপ আরো বাড়িয়ে দেন সাকিব। তার করা একই ওভারের শেষ বলে নাইটওয়াচম্যান নাথান লায়ন লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে গর্জন তোলেন টাইগার সমর্থকরা।
এর আগে রোববার মিরপুরের শের-ই-বাংলা টসে জয়লাভ করে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মুশফিকুর রহীম। দলীয় ১০ রানের মধ্যে সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান ও ইমরুল কায়েসকে হারিয়ে বাংলাদেশের বিপর্যয়ের শুরু। তামিম-সাকিব এবং মিরাজ-নাসিরের প্রতিরোধের পর শেষের দিকে ২০ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা।
বাংলাদেশের হয়ে ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা সাকিব ৮৪ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস উপহার দেন। সমান ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা তামিম করেন ৭১ রান। নাসির ২৩ এবং মুশফিক ও মিরাজ সমান ১৮ রানের ইনিংস খেলেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স ও নাথান লায়ন। এছাড়া অ্যাস্টন অ্যাগার দুটি ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল নেন একটি উইকেট।
দলীয় ১০ রানের মধ্যেই সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান ও ইমরুল কায়েসকে হারিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এসময় একপ্রান্ত আগলে রাখা তামিমের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব। শুরুতে একটু নড়বড়ে মনে হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেটে থিতু হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তামিমকে সঙ্গে নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতির আগ পর্যন্ত বাকি সময়টা নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দেন তিনি। বিরতি থেকে ফিরে প্রথমে অর্ধশতক তুলে নেন সাকিব। পরে তাকে অনুসরণ করেন তামিম।
চতুর্থ উইকেটে দেড় শতাধিক রান সংগ্রহ করা এই জুটি যখন প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল তখনই তাতে বাধ সাধেন অজি পার্টটাইম বোলার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তার অফস্পিনে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে তামিম বিদায় নিলে ভাঙে ১৫৫ রানের জুটি। সাজঘরে ফেরার আগে ৫টি চার ও ৩টি ছয়ের সাহায্যে ৭১ রান করেন তামিম।
তামিমের বিদায়ের পর ব্যাট করতে নামা টাইগার দলপতি মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আবারও ইনিংস মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যান দারুণ খেলতে থাকা সাকিব। তবে বেশিদূর এগোতে পারেননি। সেঞ্চুরির স্বপ্ন জাগানো সাকিব অজি স্পিনার নাথান লিয়নের বলে স্লিপে স্টিভেন স্মিথকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন।
বাংলাদেশের ইনিংসকে টেনে তোলার আগেই দলীয় ১৯৮ রানের মাথায় অ্যাস্টন অ্যাগারের বেল মুশফিক লেগ বিফারের ফাঁদে পড়লে হোঁচট খায় স্বাগতিকরা। মিরাজ ও নাসির মিলে ৪২ রানের দারুণ জুটি গড়লে চাপ অনেকটাই কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ।
তবে এরপরই ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের। দলীয় ২৪০ রানের মাথায় লায়নের বলে হ্যান্ডসকম্বের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মিরাজ। এরপর দলীয় ২৪৬ রানের মাথায় পরপর ফিরে যান নাসির ও তাইজুল ইসলাস। নাসিরকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন অ্যাগার। লায়নের বলে একই পরিণতি বরণ করেন তাইজুল। ১৭ বলে ১৩ রান করা তাইজুলকে ক্যাচ আউটের শিকার বানিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের যবনিকা টানেন অ্যাগার।