সাবাস প্রধানমন্ত্রী-বাঘের পিঠে চড়ে বাঘ শিকার করলেন!
শফিক রহমান : হেফাজত কি জিনিস তাদের কর্মকান্ড কি এটা সরকার নিজেও জানে। কিন্তু তারপরও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী করেছে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। হাসিনাই প্রথম বাঘের পিঠে চড়ে বাঘ শিকার করতে সক্ষম হয়েছেন।এর উদাহরণও তিনি ইতিমধ্যে দিয়ে ফেলেছেন।
মনে রাখা ভাল-ইতিমধ্যে বগুড়ায় হেফাজতের প্রধান জঙ্গিবাদ বিরোধী বিশাল সমাবেশ করে সরকারের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। তাছাড়া কওমী সনদের স্বীকৃতি দেয়াটাও সরকারের একটা দায়িত্ব ছিল। কারণ সরকারতো সব দলের সব মতের মানুষের ন্যে কাজ করবে।
অন্যদিকে সরকারের এই পদক্ষেপে বিএনপি সংশ্লিষ্ঠ রাজনীতিকদের জামায়াতপন্থী রাজনীতি মাঠে মারা গেছে। ভোট ব্যাংক বেড়েছে আওয়ামী লীগের। বিশেষ করে কওমীপন্থি রাজনীতি ও মাদ্রাসা ছাত্রদের ভোট এবার সরকারের ঘরে যাবে এটা বলাই বাহুল্য।
তাছাড়া স্বাধীনতার ৪৬ বছরে এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমী মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রাণের দাবি পূরণ করলেন। এখন থেকে কওমী ছাত্ররা দাওরায়ে হাদীস পাশ করলে এম এ পাশের মর্যাদা লাভ করবেন। শেখ হাসিনার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে-এজন্য কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা নিশ্চয়ই এর মূল্যায়ন করবেন। ভোটের রাজনীতিতেও এর সুফল যাবে শেখ হাসিনার ঘরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে জামায়াতবিরোধী ধর্মভিত্তিক ছোট-ছোট দল ও কওমিপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক-উন্নয়ন শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতিও দিয়েছে সরকার।
সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণ ইস্যুতে হেফাজতসহ ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোর দাবির প্রতি সমর্থনও দিয়েছে। বিষয়টিকে সরকারের নির্বাচনি কৌশল হিসেবে দেখছেন রাজনীতিবিদরা।
জানা গেছে ধর্মভিত্তিক ছোট দল-সংঠনগুলোর প্রায় দেড় কোটি ভোট রয়েছে বাংলাদেশে। এই ভোটারদের টানতেই সরকার নমনীয় ভাব দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার মনে করছে, জামায়াত বিরোধী এসব ধর্মভিত্তিক দল-সংগঠনকে খুশি রাখতে পারলে ২০১৯ সালের নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়া জন্য সহজ হবে।
কওমির মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর উপকার হয়েছে। কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে ইসলামি শিক্ষার প্রতি আওয়ামী লীগের ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রমাণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ভোটও আশা করছে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো মনে করে, হেফাজতসহ কওমিপন্থী বৃহৎ এ গোষ্ঠী নির্বাচনের আগে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিএনপির দিকে ঝুঁকে গেলে তাতে নানা সংকট দেখা দিতে পারে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৯ সালের নির্বাচন কোনও মতেই তারা বর্জন করবে না। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে কোনও ধরনের সমাঝোতা না হলেও বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তাদের মতে, বিএনপি নির্বাচনে এলে তা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। বিষয়টি তারা মনে-প্রাণে বিশ্বাসও করেন। কাজেই বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করতে গেলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ভোটের অঙ্ক নিয়ে ভাবতে হবে। আর এই ভাবনার জন্যই কওমিপন্থীদের সঙ্গে রেখেছে সরকার।
হেফাজত নিয়ে সরকারের যে অবস্থান, তা একেবারেই কৌশলী। সরকারের গৃহীত এ কৌশলের সঙ্গে দ্বিমত নেই দলের। তারা বলছেন, হেফাজতসহ কওমিপন্থীদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাখলে, তারা শেষ পর্যন্ত পক্ষে না থাকুক, বিপক্ষে গিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে পারবে না। নির্বাচন পর্যন্ত সরকারের জন্য এ কৌশল গুরুত্বপূর্ণ। যা সরকারের জন্য এ মুহূর্তে প্রয়োজন।
দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে হেফাজতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কৌশলগত বলে দাবি করেন। জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বা ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে কথা বলা হয়েছে, এর অর্থ এই নয় যে, হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মূল্যায়নের অনেক সময় পড়ে রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, কওমি সনদের স্বীকৃতি দেশের ভেতরে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সরকারও কওমি শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি দিয়ে ওই জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনতে চায়। এতে অসুবিধা কোথায়?
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কওমিকে স্বীকৃতি দেওয়ার মানে হেফাজতের সঙ্গে সখ্য নয়, একটি গণদাবি বিবেচনায় নিয়ে সরকার কেবল স্বীকৃতি দিয়েছে। এর বাইরে আর কিছুই নয়।
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, কওমি ও হেফাজত নিয়ে এত আলোচনার কোনও অর্থ নেই। কওমি শিক্ষার্থীরা তো এদেশেরই জনগণ। তাদের মূলধারায় নিয়ে এলে জঙ্গি প্রতিরোধেও বিষয়টি সহায়ক পদক্ষেপ হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, হেফাজত বা কওমিদের স্বীকৃতি নিয়ে এখনই এত সমালোচনা কেন? তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মূলধারায় নিয়ে আসতে পারলে অসুবিধা কোথায়? সরকার তো শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নয়, ১৬ কোটি মানুষেরও। তাদেরও দেখার দায়িত্ব সরকারের।