সাধারন সম্পাদক পদে আলোচনায় তোফায়েল-নাসিম
এস রহমান.ঢাকা: দপ্তরবিহীন মন্ত্রী আপাতত কোনো নতুন দায়িত্ব পাচ্ছেন না ।সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকার পাশাপাশি আগামী কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন। সেখানেও তিনি যদি প্রধানমন্ত্রীর চোখে দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারেন তাহলে দলের ভেতরেও তার পদের রদবদল হতে পারে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দলে আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিমের নামও ।বিএনপিকে মোকাবেলা করতে সক্ষম এমন একজন হবেন আওয়ামী লীগের এবার সাধারন সম্পাদক।
ইতোমধ্যে দলের দুই জন নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে চান। একজন আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। সৈয়দ আশরাফকে দায়িত্ব দেওয়ার সময়েই তার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। এনিয়ে ওই নেতা ভীষণ আহত হন। তবে শেখ হাসিনা তাকে চলতি মন্ত্রী পরিষদে ঠাঁই দিয়েছেন। তিনি এখন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এছাড়াও আওয়ামী লীগের একজন আলোচিত নেতা রয়েছেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনসহ বিএনপির বিরুদ্ধে সব সময় কথা বলে আসছেন। তারও দলের সাধারণ সম্পদের দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই নেতা বলেন, আমি এখনও জানি না এই ধরনের কোনো দায়িত্ব পাবো কিনা।
আপনি নাকি আগামী দিনে দলের সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন আর সরিয়ে দেওয়া হবে সৈয়দ আশরাফকে। এই ব্যাপারে তিনি বলেন, এগুলো নেত্রী ঠিক করবেন। কাকে সরাবেন না সরাবেন তার ব্যাপার। আর নেতারাও তার সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব রকম সহযোগিতা করবেন। তিনি বলেন, আমাদের দলের ভেতরে কোন্দল ও কিছু সমস্যা রয়েছে সেগুলোর সমাধান দরকার। নেত্রী চাইছেন আগামী কাউন্সিলের আগেই এই সব সমসার সমাধান করতে। সেই হিসাবে কাজও চলছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি আপাতত নতুন করে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন না। তিনি মন্ত্রী পরিষদে থাকলেও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে থাকবেন।
এদিকে তার স্থলাভিসিক্ত হয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি এখন থেকে স্থানীয় সরকার , পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। তার মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা তাদের রদবদলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন। তা ছাপানোর প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সৈয়দ আশরাফকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেন। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা ছিল ঈদের পর পরই তিনি মন্ত্রী সভায় রদবদল করবেন। সেখানেই সৈয়দ আশরাফকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করে দিবেন। তবে এর আগেই বৃহস্পতিবার এটা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র আরো জানায়, আশরাফ মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত অফিস না করে বাসায় অফিস পরিচালনা করতেন যা প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ ছিল না। আওয়ামী লীগসহ দলের ও দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরাও তাকে ফোন করে পাননি। তিনি কারোই ফোন ধরতেন না।
শেখ হাসিনা একবার তাকে উদ্দেশ্য করেও বলেছেন আপনিতো ফোন ধরেন না। তিনি শেখ হাসিনার ফোন যেমন ধরেন না তেমন তিনি অন্যদেরও ফোন করেননি। এনিয়ে দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগের অন্ত নেই। তারপরও প্রধানমন্ত্রী তাকে ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী পরিষদে রাখেন। এরপর ২০১৪ সালে জানুয়ারিতে যখন মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয় তখনও তাকে একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রাখা হয়। তবে সৈয়দ আশরাফের বিষয়টি নমনীয়ভাবেই দেখেন।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী তার ব্যাপারে কঠোর হওয়ার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত পারেননি। তবে এবার তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু তাকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হলেও তাকে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে আপাতত নাও সরানো হতে পারে। তাকে দপ্তরবিহীন করার পর তিনি দলের সাংগঠনিক কাঠামো আরো সুদৃঢ় করার জন্য কাজ না করলে তাকে সেখান থেকেও সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
সেই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পদকের পদেও রদবদল হবে। সেখানে শেখ হাসিনার পছন্দের দুই জন নেতাদের একজন ঠাঁই পেতে পারেন। দুই জনের মধ্যে একজন এখন মন্ত্রী পরিষদের বাইরে আছেন। আর এখন মন্ত্রী পরিষদে নেই। আগেও ছিলেন না।
মোশাররাফ হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, সৈয়দ আশরাফকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও মন্ত্রী থাকছেন। তার কোনো দপ্তর থাকছে না। আশরাফ বাদ পড়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এসেছেন শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুলের শ্বশুর খন্দকার মোশাররফ।
সূত্র জানায়, সৈয়দ আশরাফ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্য থেকেও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করায় ও কিছু অনিয়ম করার কারণে এছাড়াও দলের নানা কোন্দল মিটাতে না পারার কারণে এবং বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণেও বিষয়টি ভালভাবে নেননি। এখন শেখ হাসিনা চাইছেন তিনি আপাতত দলের সাংগঠনিক কাঠামোটাকে সুদৃঢ় করবেন এবং কোন্দল মেটানোর জন্য ব্যস্ত থাকবেন।
তাকে নতুন করে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে কিনা এই ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ঈদের পর মন্ত্রী সভায় রদবদলসহ আরো বিভিন্ন পরিবর্তন আসছে। প্রশাসনেও বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। এই জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে মঙ্গলবার একনেক সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে তার মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন মন্ত্রী পরিষদ সবিচ জানান, তার এই রকমের কোনো খবর জানা নেই। আর সৈয়দ আশরাফ এই ধরনের গুজবে কান না দিতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন।
এদিকে সূত্র জানায়, মন্ত্রী পরিষদে আরো কয়েকজন ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। এরমধ্যে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলামের নামও রয়েছে। বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নামও রয়েছে। আরো কয়েজনের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী কঠোর সিদ্ধান্ত নিবেন।
তবে কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতার জন্য সুখবর রয়েছে। তারা মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হতে যাচ্ছেন। যাদেরকে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী পরিষদে আনার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর বাছাইয়ের বাইরেও কয়েকজন মন্ত্রী হওয়ার জন্য জোরালো চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন দিক থেকে অনুরোধ পেলেও তিনি অনুরোধের কারণে কাউকে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য করতে চাইছেন না।
তিনি ক্লিন ইমেজের মন্ত্রী পরিষদ পুনর্গঠন করতে চাইছেন। সেই হিসাবে সাবেক দুই জন মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য জোরালো তদবীর চালাচ্ছেন। কিন্তু তারা দুইজনই মন্ত্রী পরিষদে ঠাঁই পাচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র। তবে যেসব মন্ত্রীরা বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছেন তাদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ রেহানা ও তার পুত্র ববির কাছেও অনুরোধ করার চেষ্টা করছেন।
তাদের সেই অনুরোধ প্রধানমন্ত্রী কাছে পর্যন্ত পৌঁছবে কিনা এই ব্যাপারে নিশ্চিত করতে পারেনি প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র। তিনি বলেন, অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী ঢেকি গিলবেন না। তিনি ২০১৯ সাল পর্যন্ত সফলভাবে সরকার পরিচালনা করতে দক্ষ ও সৎ নেতাদের মন্ত্রী পরিষদে ঠাঁই দিতে চাইছেন।
মন্ত্রী পরিষদকে আরো গতিশীল করার পাশাপাশি তিনি দলের ভেতরকার কোন্দল মেটাতে চান। সেই সঙ্গে তিনি দলের সাংগঠনিক কাঠামোও আরো সুদৃঢ় করতে চাইছেন। আগামী দিনে বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোর জন্য শক্তিশালী ও সুদৃঢ় আওয়ামী লীগ দরকার।