• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

সাকিবের বিশ্রাম!সবার আগে দেশ?


প্রকাশিত: ১:৫৩ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৭ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৮ বার

এস রহমান  :  সাকিবের বিশ্রাম নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে? বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বলে কথা? তানাহলে এমন প্রশ্ন হয়ত উঠত না। কিন্তু Pm_sakib.www.jatirkhantha.com.bdপ্রশ্ন উঠেছে-সবার আগে দেশ বড় কিনা? দেশ যদি সবার চেয়ে বড় হয় তাহলে সাকিবকে কিন্তু একটু ভাবা উচিত! কারণ, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দল যদি সাউথ আফ্রিকায় ভাল ফল না করে তবে তাকেও কিন্তু পোড়াবে? ইতিমধ্যে মুশফিক কিন্তু বলেই ফেলেছেন, আমি কিন্তু এত বড় খেলোয়াড় এখনো হইনি? ওদিকে তামিম যদিও এখন পর্যন্ত কিছু বলেই তবে তিনিও সাকিবের মত বলতে পারেন?

sakib-www.jatirkhantha.com.bdদেশের ভালমন্দ না দেখে এভাবে টাইগাররা বিশ্রাম নিতে চাইলে পরিস্থিতি নতুন কোন মোড় নিতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। সাকিবের মত খেলোয়াড়রা বাংলাদেশ টিম ছিল বলেই তো নাম-ডাক কুড়িয়েছেন। কাজেই বাংলাদেশ দল যাতে সব সিরিজ ভাল করে সেদিকেই সবার নজর ও লক্ষ্য রাখা উচিত বললেন, একাধিক সাবেক খেলোয়াড় ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, খেলোয়াড়দের উচিত হবে মনের সঙ্গে দলের ভাবমূর্তি জড়িয়ে দেখা? মুফফিকরা কোন সিরিজ খারাপ খেলা মানে কিন্তু দেশের ১৬ কোটি মানুষের মন খারাপ হয়ে যাওয়া। এটাই সবাইকে ভাবতে হবে?

sakib-www.jatirkhantha.com.bd বেশি বেশি টেস্ট খেলতে না পারার আক্ষেপের কথা এদেশের ক্রীড়াঙ্গন সাকিব আল হাসানকে বারবার পুড়তে দেখেছে। যতবার তিনি মুখ থেকে উচ্চারণ করেছেন, ক্যারিয়ারে খুব কম জিনিস নিয়ে তাকে এত সোচ্চার হতে দেখা গেছে। সেই আক্ষেপ যখন মিটে যাওয়া শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই ‘ক্লান্ত সাকিব’ টেস্ট থেকে বিশ্রাম নিয়েছেন! এই সিদ্ধান্ত সাকিব তথা বাংলাদেশের জন্য কী ফল বয়ে আনবে?

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ছেলেবেলার গুরু মোহাম্মদ সালাউদ্দীন মনে করছেন এই বিশ্রামের পর নতুন সাকিবের দেখা মিলবে, দেখুন আর যাই হোক, জোর করে অন্তত ক্রিকেট খেলা যায় না। সে নিজে যখন বিশ্রামের কথা বলছে, তখন সেটা জরুরি। আমার মনে হয় এই বিশ্রামের ফলে সাকিব আরও ঝরঝরে হবে।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ কিংবা তার আগে থেকে সাকিব রয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ফর্মে। দীর্ঘ ৯ বছর পর সাউথ আফ্রিকায় খেলতে যাবে বাংলাদেশ। উপমহাদেশের বাইরে কেউ ভালো করলে তাকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করা হয়। সাকিবের ক্ষেত্রে মূল্যায়নের প্রশ্ন না উঠলেও একটি সুযোগ হারানোর ব্যাপার সামনে আসছে। সাউথ আফ্রিকার মতো দেশে ভালো করতে পারলে তার বিশ্বসেরা তকমাটা অন্য পর্যায়ে চলে যেত। তাছাড়া বাংলাদেশ যখন কালেভদ্রে টেস্ট খেলে, তখন সাকিব দুটি টেস্ট হাতছাড়া করছেন। তার ইচ্ছা আছে শ্রীলঙ্কা সিরিজেও না থাকার!

‘বাংলাদেশ বেশি বেশি টেস্ট খেলতে পারে না, একথা সত্য। সাকিব এই টেস্টগুলো হাতছাড়া করায় ক্যারিয়ারে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। সে যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা অনেক ভেবেচিন্তেই নেয়। ভালো খেলার ইচ্ছা অন্যদের থেকে তার বেশি। তাই আমার মনে হয় এই বিশ্রামটা সাকিবের জন্য কাজে দিবে।’ মন্তব্য সালাউদ্দিনের।

অলরাউন্ডার হওয়ায় সাকিবকে অন্যদের থেকে একটু বেশি ধকল সহ্য করতে হয়। তাছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ ম্যাচে চাপ যা যাওয়ার তা ওই সাকিবের ওপর দিয়েই যায়। তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় ইনজুরি যেটি, সেটি হয়েছিল স্ট্রেস থেকেই। শিন বোন ক্ষয় হয়েছিল অতিরিক্ত চাপে। সতর্কতায় সেটি থেকে পার পাওয়া গেছে।

২০১২ সালে শিনবোন ইনজুরিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেননি। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় খেলতে পারলেন না। তখন ছিল তিনটি সমস্যা। কাফ মাসলে ইনজুরি। বাকি দুটিই ছিল স্ট্রেস থেকে। কাফ মাসলে অপারেশন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। ২০১৫ সালে আবার শিন বোনে ব্যথা। সেটির কারণে সেবার খেলতে পারেননি জাতীয় লিগে।একটি বিশ্রামের ভাবনা সাকিব বেশ আগে থেকেই করছিলেন। কিন্তু জাতীয় দল গুরুত্বপূর্ণ সময়ের ভেতর দিয়ে যাওয়ায় সাকিব বিশ্রামের কথা কল্পনাও করতে পারেননি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্রাম যখন নিচ্ছেন, তখন  ওয়ানডে বা টি-টুয়েন্টি থেকে কেন নয়?

এই প্রশ্নেরও উত্তর আছে। দুটি টেস্ট ম্যাচ মানে কেবল পাঁচ-পাঁচ দশদিন নয়। প্রস্তুতি ম্যাচ, তার আগের প্রস্তুতি মিলিয়ে মাসখানেকের ধাক্কা। এবারই যেমন দুটি টেস্টের আগে প্রস্তুতি ছিল দুই মাসের। ওয়ানডে বা টি-টুয়েন্টি সিরিজে ধকল এতটা থাকে না। টেস্ট ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিশ্রাম নেয়ার উদাহরণ ক্রিকেটবিশ্বে নতুন কিছু নয়। শ্রীলঙ্কার সীমিত ওভারের অধিনায়ক হওয়ার পর উপুল থারাঙ্গা ৬ মাসের বিরতি নেন টেস্ট থেকে। এবি ডি ভিলিয়ার্সও বিশ্রামে আছেন।

অনেকে বলেন, ক্রিকেট যতটা না শারীরিক খেলা, তার চেয়ে বেশি মানসিক।  ব্যাট-বলের যুদ্ধে শরীর ঠিক রাখার সঙ্গে সঙ্গে সায় দিতে হয় মনের সঙ্গেও।  খেলোয়াড়দের মানসকিভাবে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন সময় বিসিবিকে মনোবিদও নিয়োগ দিতে দেখা গেছে। নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে বিশ্রামের কথা জানানোর দিন সাকিব যা যা বলেছেন, তা থেকে ওই ‘মন’ ব্যাপারটাই বেশি সামনে এসেছে। বারবার বোঝাতে চেয়েছেন শরীরের সঙ্গে মন সায় দিচ্ছে না বলেই এমন বিশ্রাম।

মনোবিদ জামিল আজহার বলছেন মন একবার বিশ্রাম চেয়ে ফেললে তাকে বোঝানো দায়। মন বড় অদ্ভুত। শরীরে কোনও সমস্যা না থাকলেও কোন কাজ থেকে একবার মন উঠে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনা কঠিন। খেলাধুলার ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও গুরুত্বপূর্ণ।  সাকিবের মন যদি সায় না দেয়, তাহলে বিশ্রামই শেষ কথা। মন্তব্য জামিলের।

সাকিবকে বহু বছর খুব কাছ থেকে দেখে আসছেন জাতীয় দলের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। তার চোখে সাকিবের এই বিশ্রামটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, তার বিশ্রামে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই বিশ্রামটুকু তাকে মানসিকভাবে আরও চাঙ্গা করবে। আশা করি পরের সিরিজে আমরা ফ্রেশ সাকিবকে ফিরে পাবো।

পরের সিরিজ বলতে ফারুক শ্রীলঙ্কা সিরিজকে বুঝিয়েছেন। কিন্তু ওই সিরিজে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। কেননা সাকিব নিজেই জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফেরা নিয়ে ভাববেন। সাকিবের আরেক গুরু নাজমুল আবেদীন ফাহিম এই বিশ্রাম নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শুধু বললেন, কোনও বিষয়ে গণমাধ্যমে মন্তব্য করা নিয়ে বিসিবি থেকে নিষেধ আছে। তাই আমি কিছু বলতে পারছি না।