সহজের টিকিট কালোবাজারি
১৪ ক্রিমিনাল ধরা পড়েছে ১২০০ টিকিটসহ-
স্টাফ রিপোর্টার : অবশেষে সহজ’এর ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট কে সনাক্ত করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এই চক্রে জড়িত স্টেশন মাস্টারসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও চিহ্নিত করেছে র্যাব। সহজ ডট কমের সহায়তায় এ কাজ করত চক্রটি। রাজধানী থেকে কালোবাজারির ১২০০ এর বেশি টিকিটসহ ১৪ জনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য দিয়েছে র্যাব।শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য দেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে টিকেট কালোবাজারি সিন্ডিকেট প্রধান উত্তম ও সেলিমকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাদের বাসায় তল্লাশি করে জব্দ করা হয় ১২শ ৪৪টি টিকিট। গ্রেফতার হওয়া প্রত্যেকেই নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেনের এক-একটি রুট। ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবকে টার্গেট করে রেল ও অনলাইন টিকিট কেনার জন্য সহজ ডট কমের কিছু অসাধু লোকজনের সহায়তায় অবৈধভাবে অগ্রিম টিকেট মজুদ করত অভিযুক্তরা। চক্রটি ৩৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত বলে দাবি র্যাবের।
সার্ভার ডাউন করত ব্ল্যাকাররা-
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেফতাররা রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সহজডটকমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম ও আইটি সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করতো।
শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতো। গ্রেপ্তাররা স্টেশনে থাকা তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেট সংগ্রহ করতো। এসব টিকিটের মূল্য কাউন্টারের বুকিং কর্মচারীদের সঙ্গে তারা ভাগ করে নিতো। ফলে রেলওয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এভাবে গ্রেপ্তাররা অবৈধভাবে বিভিন্ন পন্থায় বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতো।
৪ গুণ দামে টিকিট বিক্রি
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আরও বলেন, ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে গ্রেফতাররা প্রতিটি টিকেট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করে। প্রতিটি টিকিট তারা দেড় গুণ থেকে দুই গুণে বিক্রি করে এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ পায় গ্রেপ্তাররা নিতো এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেয়া হতো। যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় শুধু দুটি সিন্ডিকেটের হাতেই প্রতিদিন চলে যাচ্ছে প্রায় ৫০০ টিকিট।
দীর্ঘদিন ধরে টিকিট কালোবাজারির হোতা উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেট
কমান্ডার মঈন জানান, সেলিম দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। সে কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় টিকিট কালোবাজারির দায়ে ৭টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছেন তিনি। সে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় আবার টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রমে লিপ্ত হয়। উত্তম প্রায় ১৫ বছর ধরে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। সে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের টিকিট কালোবাজারি চক্র উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার সহযোগী গ্রেফতার আলী ও ফারুকসহ রাজধানীর আশকোনা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করত। উত্তমের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির দায়ে ৪টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় সে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে। সে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় টিকিট কালোবাজারির কাজে লিপ্ত হয়। গ্রেপ্তার বাকিরা দেশের বিভিন্ন রুট সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন, যার ফলে তারা সেসব রুটের যাত্রীদের ম্যানেজ করে টিকিট বিক্রি করতেন।