সমন্বয়ক সমন্বয়কে হট্টগোল
সমন্বয়ক সমন্বয়ক খেলা বন্ধ করেন:কুবি সমন্বয়ক-
কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের কনফারেন্স রুমে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত রবি ও সোমবার চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে হাসনাত আবদুল্লাহর মতবিনিময় হট্টগোল বাধে। সোমবার নরসিংদীতেও সারজিস আলমের মতবিনিময় সভায়ও হট্টগোল হয়। এতে সভা না করেই থাকে নরসিংদী থেকে ফিরতে হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতবিনিময় সভার শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের কুবির সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। বক্তব্য শেষে উপস্থিত সবার জন্য মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়। তখন আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী বি এম সুমন তার মত প্রকাশ করেন।
একপর্যায়ে তিনি ‘সমন্বয়ক সমন্বয়ক খেলা বন্ধ করতে হবে। সমন্বয়ক সমন্বয়ক খেলা ছাত্রলীগেরই পুরাতন রূপ’- এসব কথা বলার পর তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে বলা হয়। এতে বসে থাকা আন্দোলনকারী ও সমন্বয়করা দাঁড়িয়ে যান। পরে আরেক আন্দোলনকারী ফাহিম আবরার মত প্রকাশ করতে গেলে বাগবিতণ্ডা ও হট্টগোল বেধে যায়। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন উপস্থিত কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা।
মতবিনিময় সভায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বি এম সুমন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি তথাকথিত আইন-কানুন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। নামে বেনামে যারা সমন্বয়ক পরিচয় দেয়, আমি তাদের ধিক্কার জানাই। তারা সাধারণ শিক্ষার্থী, আন্দোলনকারী পরিচয় দিতে পারতো। সমন্বয়ক সমন্বয়ক খেলা বন্ধ করতে হবে। সমন্বয়ক সমন্বয়ক খেলা ছাত্রলীগেরই পুরাতন রূপ।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে উপাচার্য নাই, তাই ক্যাম্পাসে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়- কেন্দ্রের যারা আছেন বিষয়টি দেখবেন। প্রথম থেকেই যারা নেতৃত্বে ছিল, তাদের যদি অবমূল্যায়ন করা হয় আমরা নিজ থেকেই দূরে সরে যাবো। তারপর কোনও দায়িত্ব এলে তা আপনারা কীভাবে মোকাবিলা করবেন? তা আপনাদেরই ভাবনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই আন্দোলনের বীজ ঢাবির শাহবাগে গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এর অঙ্কুরোদগম হয় কুবির ছাত্রদের ওপর যখন পুলিশ প্রথম আক্রমণ করে। আর তা চারা গাছে পরিণত হয়েছে আবু সাইদের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।’
আন্দোলনকারী ফাহিম আবরার বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে বিভিন্নভাবে জড়িত ছিলাম। আন্দোলনের জন্য আমি নিজে কার্টুন বানিয়েছি। লংমার্চে যাওয়ার জন্য একটা গ্রুপ খোলা হয়েছিল। সেখানে আমরা মাত্র তিন জন ভোরবেলা লংমার্চের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। গোলাগুলির সময় আমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউতে আটকা পড়েছিলাম। আর তারা বলে, আমরা নাকি এক দফার সাথে ছিলাম না, তারাই নাকি সবকিছু করেছে। তারা বলছে যে, যারা কোনও সময় ছাত্রলীগের মিছিলে গিয়েছে তারা হলে থাকতে পারবে না।’
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুবির ভূমিকা অপরিসীম। আন্দোলন যখন স্থগিত হয়ে যায়, তখন আপনারা এগিয়ে এসেছেন। আমাদের দায়িত্ব এখানেই শেষ না, দায়িত্ব অনেক বড়। আমাদের আন্দোলন একটি সিস্টেমের বিরুদ্ধে। দেশ পুনর্গঠনে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে। শহীদ ভাইয়েরা তাদের স্বপ্ন, প্রত্যাশা আমাদের কাছে আমানত রেখে গেছেন। আমরা সেভাবে কাজ করবো। আমাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এই বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে কুবির অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, ‘আন্দোলনে কুমিল্লার ছাত্ররা মার খেয়েও পিছিয়ে যায়নি। আমাদের দেখে বাংলাদেশ জাগ্রত হয়েছে। কারো প্রতি অবিচার করার জন্য, কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা আন্দোলন করিনি। কথা বলাই শুধু বাক স্বাধীনতা না, শোনাও স্বাধীনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুমিল্লা এগিয়ে ছিল। এতো কষ্ট করে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের এই জায়গায় প্রশ্নবিদ্ধ করবে আমি তা কারো কাছ থেকে আশা করিনি।’
উল্লেখ্য, রবি ও সোমবার চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে হাসনাত আবদুল্লাহর মতবিনিময় হট্টগোল বাধে। সোমবার নরসিংদীতেও সারজিস আলমের মতবিনিময় সভায়ও হট্টগোল হয়। এতে সভা না করেই থাকে নরসিংদী থেকে ফিরতে হয়েছে।