• শুক্রবার , ১৮ অক্টোবর ২০২৪

সংবিধানের বলি হচ্ছেন মন্ত্রী মায়া- একই অস্ত্রে ঘায়েল হবে বিএনপি


প্রকাশিত: ৫:২৬ এএম, ১ জুলাই ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭১ বার

বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা: সংবিধানের বলি মন্ত্রী ও এমপি মায়াকে ত্যাগ করে সরকার এক ঢিলে বিএনপিকেও ঘায়েল করবেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিmaya-www.jatirkhantha.com.bdয়র নেতা মত প্রকাশ করেছেন। নেতাদের ভাষ্য হচ্ছে-আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে ।আর এই আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে একাধিক বিএনপি নেতাও ঘায়েল হবেন খুব শিগগির।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ’ই কাল হচ্ছে মায়ার জন্যে।ফলে মন্ত্রী ও এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী’র ‘মায়া’ ত্যাগ করতেই হচ্ছে সরকারকে। একাধিক সিনিয়র আইনজ্ঞ অনলাইন দৈনিক ও সংবাদ সংস্থা জাতিরকন্ঠকে বলেছেন, আইন ও সংবিধানের বিচারে মায়াকে বাঁচানোর কোন সুযোগ পাচ্ছেন না সরকার। কারণ,তাঁকে বাঁচানোর কোন মোক্ষম অস্ত্র সরকারের হাতে নেই।ওদিকে মন্ত্রী ও এমপি মায়াকে ত্যাগ করে সরকার এক ঢিলে বিএনপিকেও ঘায়েল করবেন।

সূত্র জানায়, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া শেষমেষ আইন মায়ার মন্ত্রিত্বের প্রশ্নের সঙ্গে গোটা মন্ত্রিসভার নৈতিকতার প্রশ্ন জড়িত। আইনি প্রশ্নটা কীভাবে জড়িত, সেটা বিচারপতি খায়রুলের রায়ে বিস্তারিত দেয়া আছে।

২০০১ সালে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২ দফার ঘ উপ-দফা ব্যাখ্যা করেন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। এই বিধানে বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হবেন না, যদি ‘‘তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুবছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে”।’

২০০১ সালে হাইকোর্টে আওয়ামী লীগের অ্যাটর্নি জেনারেল কে এস নবী যুক্তি দিয়েছিলেন: ‘ওই বিধানে ‘‘দোষী সাব্যস্ত’’ অর্থ ‘‘চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত’’ পড়তে হবে। কারণ আপিলের অধিকার থাকলে তা একেবারে রিভিউ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকবে।’ বিচারপতি খায়রুল তা প্রত্যাখ্যান করেন।

বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ব্যাখ্যা করেন, সংবিধান প্রতিবন্ধকতামূলক বিধান করেছে। দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেই হলো, সেটা আপিলে খালাস না হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকবে। আপিল করলেন তো কী হয়েছে? এমনকি আপিলে নির্দিষ্টভাবে যদি দণ্ড স্থগিত করা হয়, তাহলেও সংবিধানের ওই তলোয়ারের কোপ থেকে তার নিস্তার নেই।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা সম্প্রতি ঠিক একই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা করে খায়রুলের রায় জরুরি ভিত্তিতে অনুসরণ করা, সংসদের দুটি আসন শূন্য করে উপনির্বাচন দেওয়া।
ভারতে হিমাচল প্রদেশের দণ্ডিত রাকেশ সিং ১৯৯০ সালে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে রিটে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়, সুপ্রিম কোর্টই বলেন, ‘রাকেশকে আমরা জামিন ও তাঁর দণ্ড স্থগিত করেছিলাম বলে তিনি প্রার্থী হতে পারেন না।’ বিচারপতি খায়রুল বলেছেন, এর অন্যথা করে বাংলাদেশ সংসদ কোনো আইন তৈরি করতে পারে না।

বিচারপতি খায়রুল হক নানা কারণে আলোচিত। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার সুবাদে তিনি বিএনপির অনেকের কাছে চক্ষুঃশূল। আবার ক্ষমতাসীন দলের অনেকের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। কিন্তু চূড়ান্ত অর্থে তাঁর বিচারিক অভিজ্ঞানকে রাজনীতিকেরা এখন পর্যন্ত তাঁদের নিজস্ব রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের বাইরে নিয়ে যেতে পারেননি। এটা বেশি করে সত্য ক্ষমতাসীন দলের জন্য। তাঁর সব বিচারিক অভিমতের সঙ্গে সবাই একমত নাও হতে পারে, কিন্তু তাঁর অনেকগুলো মাইলফলক সিদ্ধান্ত রয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ক্ষমতাসীন এবং তাদের মিত্রদের যে ভালো লেগেছে, তার পুনরুল্লেখ বাহুল্য। এই বিচারপতি কতটা জ্ঞানী, তা যদি আপনি এই দুটি বিশেষ রায়ের আলোকে প্রশ্ন করেন, তাহলে ক্ষমতাসীনদের তরফে উৎফুল্ল প্রতিক্রিয়া। আবার  সেই একই ব্যক্তি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এ পর্যন্ত যত রকম সুপারিশ করেছেন, তার কতটা বাস্তবায়ন করেছেন, তাহলে বিষাদময় প্রতিক্রিয়া দেখবেন।

কারণ, তাঁর দেওয়া সুপারিশের এখন পর্যন্ত দুআনাও বাস্তবায়নযোগ্য মনে করে না সরকার। এখন আরেকটি জ্বলন্ত প্রমাণ হলো, জনতা টাওয়ার মামলায় ৬৬ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা মেনে নিলেই আর মায়ার মন্ত্রিত্ব থাকে না।

সামনের রাজনীতিতে বিএনপির ওপর শ্মশান হবে।  শীর্ষ নেতারা তো নির্বাচনেই দাঁড়াতে পারবেন না। নিম্ন আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তি যদি আপিল না করে প্রার্থী হতে না পারেন, তাহলে তাতে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সব থেকে বেশি শঙ্কিত হতে পারে। এই বাস্তব যুক্তির জোর অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কিন্তু সংবিধানের একটি বিধানের বিকৃত ব্যাখ্যার ওপরে দাঁড়িয়ে ‘গণতন্ত্রচর্চার’ যুক্তি মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি দলকে দু-একজন মায়ার মায়া কাটাতে হবে।মায়ার বিষয়টি কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়। এটা একটা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নৈতিকতার প্রশ্ন।

বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক দৃঢ়তার সঙ্গে মনে করেন, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া মাত্রই কোনো ব্যক্তি এমপি পদে থাকতে আপনাআপনি অযোগ্য বলে গণ্য হবেন। আপিলের খোঁড়া যুক্তি দিয়ে মন্ত্রী ও এমপি পদে বহাল থাকা চলবে না। কারণ তাঁর কথায়, ‘সংবিধানপ্রণেতারা এই বিধান করেছিলেন, এমপিকে সাধারণের থেকে তফাত করতে। রাষ্ট্র পরিচালকরা আপিলে খালাস পেতে পারেন, আবার নাও পারেন, কিন্তু দণ্ডিত হওয়ার কারণে তাঁর সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তাই তিনি অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।