শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের লীলার খেসারত-
উত্তরা প্রতিনিধি : রাজধানীর উত্তরায় পারিবারিক কলহের জের ধরে ইফতেখার হোসেন সোহেল (৩১) নামের এক গ্লাস ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার ভোরে তুরাগ থানাধীন উত্তরা ধলিপাড়ার ৬/১ নম্বর রোডের ৫৬ নম্বর বাসা থেকে সোহেলের লাশ বাংলাদেশ মেডিকেলে নেয়া হয়।
সেখান থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।হত্যাকাণ্ডের জন্যে ব্যবসায়ীর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ইতি ও ভায়রাভাই লুৎফর রহমানকে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই দুজনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই দুজনসহ চারজনকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। আটক অন্য দুজন হলেন- ইতির বোন মর্তুজা বেগম বীনা এবং মা মনোয়ারা বেগম।এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহানা আক্তার বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী কমিশনার আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী ও পাশের ফ্ল্যাটর বাসিন্দা সালমা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এ সময় তুরাগ থানার পরিদর্শক সফিকুর রহমান এবং এসআই মাহবুব আলীসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সোহেল-ইতি দম্পতির মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে কলহ চলছিল জানিয়ে সালমা আক্তার বলেন, ‘আমরা পাশের ফ্ল্যাটে থাকলেও আমাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি। সোহেল মারা যাওয়ার পর ঘটনা শুনেছি।’
পুলিশের সহকারী কমিশনার আতিকুল ইসলাম জানান, সোহেলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ইতি তাদের জানিয়েছেন- রাতে আড়াই মাস বয়সী একমাত্র কন্যশিশুকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে ঘুমিয়েছিলেন। ভোর ৪টার দিকে তিনি ঘুম থেকে জেগে দেখেন বিছানায় সোহেল নেই। পরে বারান্দায় গিয়ে দেখেন জানালার গ্রিলের সঙ্গে সোহেল ঝুলছেন। এ সময় তার গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা অতিকুল জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে- এটি আত্মহত্যা নয়। হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ইতির বোনজামাই লুৎফর রহমান ২৩ ডিসেম্বর এই বাসায় এসেছেন। পরে ইতির বোনও আসেন। কন্যাশিশু জন্মের পর থেকেই সোহেলের শাশুড়ি তিন রুমের এ বাসায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার রাতে ওই বাসায় ব্যাপক ঝগড়া-ঝাটি হয়েছিল।
এসআই মাহবুব আলী জানান, প্রাথমকিভাবে মনে হচ্ছে- এটি পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। বারান্দার যেখানে সোহেল অত্মহত্যা করেছেন বলে বলা হয়েছে, সেখানে আত্মহত্যা সম্ভব নয়। হত্যার পরই হয়তো তার লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এলোমেলো কথা বলছেন বলেও জানান এসআই মাহবুব আলী। সোহেলের বন্ধু রায়হান তালুকদার জুয়েল জানান, গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ২০১৫ সালে বিয়ে করেন সোহেল। বিয়ের পর ইতিকে ঢাকা নিয়ে আসা হলেও তিনি গ্রামে চলে যাওয়ার জন্যে সোহেলকে চাপ দিতে থাকেন। সোহেলের শাশুড়িও ইতির পক্ষ নেয়।
তিনি জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে ইতি গত বছরের মার্চে কাউকে কিছু না জানিয়ে আশকোনায় তার ফুফুর বাড়িতে চলে যান। এ নিয়ে সোহলে থানায় জিডি করলেও সোহেলকে ইতির অবস্থান জানানো হয়নি। অথচ বিষয়টি সোহেলের শাশুড়ি জানতেন।
সোহেলের বন্ধু জানান, তিনি বাড়িওয়ালা পরিচয় দিয়ে কৌশলে সোহেলর শাশুড়ির কাছ থেকে ইতির অবস্থান জেনে নেন। সোহেল বিষয়টি জানার পর ইতি গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এর তিন মাস পর গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে আবার ইতিকে ঢাকার বাসায় নিয়ে আসেন সোহেল। এরপরও তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ বন্ধ হয়নি।
তিনি জানান, সর্বশেষ শুক্রবার বোনজামাই লুৎফরকে নিয়ে ইতি সংসদ ভবন এলাকায় ঘুরতে যেতে চেয়েছিলেন। মাত্র আড়াই মাস বযসী শিশুকে নিয়ে শীতের মধ্যে ঘুরতে যাওয়া ঠিক হবে না জানিয়ে সোহেল তার স্ত্রীকে বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে ইতি ঘরের টেলিভিশন, ল্যাপটপ, ফ্রিজ এবং মোবাইল ভেঙে ফেলেন। সোহেলকে গালিগালাজ করেন লুৎফর। রাত ৮টার দিকে লুৎফরের সঙ্গে সোহেলের হাতাহাতি হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, লুৎফরের সঙ্গে ইতির অবৈধ সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানার পর লুৎফরের স্ত্রী মর্তুজা বীনা ওই বাসায় চলে আসেন। কয়েকদিন আগে সোহেলকে না জানিয়ে ইতিকে নিয়ে দক্ষিণখানের একটি বাসায় ২-৩ দিনের জন্য বেড়াতে যান লুৎফর।
সূত্রটি আরো জানায়, লুৎফর-ইতির অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি টের পেয়ে সোহেল কয়েকদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে বাসায় অবস্থান করছিলেন।