শুন্য থেকে শীর্ষে-বিশ্বের সেরা বোলার হচ্ছেন মুস্তাফিজ
স্পোর্টস রিপোর্টার : শুন্য থেকে শীর্ষে-বিশ্বের সেরা বোলার হচ্ছেন মুস্তাফিজ ! মুস্তাফিজুর রহমানকে ‘স্বচ্ছন্দে’ খেলার গর্ব ব্যাটসম্যানকুলের একজনই করতে পারেন এ যুগে। অবশ্য মাশরাফি বিন মর্তুজার সেই গর্বের সবটাতেই মিশে কৌতুক, ‘বিপিএলে মুস্তাফিজকে যে ছক্কা মেরেছিলাম, ওটা নিয়ে এখনো ওকে খ্যাপাই!’ সে অবশ্য করতেই পারেন বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস অধিনায়ক। মুস্তাফিজের ওই স্লোয়ারটা যে উড়িয়ে গ্যালারির দোতলায় ক্যাপ্টেনস বক্সের সামনে ফেলেছিলেন তিনি!
মুস্তাফিজে মশগুল আড্ডায় যিনি এ কৌতুক করে অট্টহাসেন, সেই মাশরাফিও দুরবিনে সারা বিশ্ব আঁতিপাঁতি খোঁজেন, ‘মুস্তাফিজকে সহজে কোনো ব্যাটসম্যান খেলতে পারবে? উম-ম, খুঁজে পাচ্ছি না ভাই। হতে পারে বিরাট কোহলি।’ বিপিএলেই মুস্তাফিজের মুখোমুখি হয়েছিলেন মাহমুদ উল্লাহ,‘দুইটা বাউন্ডারি আছে আমার! তারমানে বলছি না যে ওকে খেলা সহজ। অসাধারণ একজন বোলার। আইপিএলে ওকে দেখে দারুণ গর্ব হচ্ছে। নতুন কিছু করছে। দোয়া করি মুস্তাফিজ যেন আরো উন্নতি করে। ব্যাটসম্যানদের আরো কঠিন পরীক্ষায় ফেলে।’
সে পরীক্ষায় সাফল্য-ব্যর্থতা ভবিষ্যতের হাতেই তোলা রইল। তবে মাশরাফির অনুমান, ‘বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের তবু সামান্য সম্ভাবনা আছে মুস্তাফিজের বিপক্ষে ভালো খেলার’, সে ধারণার পালেও হাওয়া দিতে রাজি নন তামিম ইকবাল।
‘বাঁহাতি-ডানহাতি আলাদা করে কিছু বলতে পারছি না। এখনো পর্যন্ত বিপিএলে ওর বিপক্ষে দু-তিনটা বল খেলেছি। তাই এ নিয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করা হাইপোথিটিক্যাল হবে। আমি শুধু বলব মুস্তাফিজের বিপক্ষে প্রথমবার খেলতে নামলে বিপদ আছে। ইম্পসিবল টু প্লে’, রায় তামিমের।
এত দিন একই নেটে অনুশীলন করছেন, তবু ম্যাচের ভয়ংকর বোলার মুস্তাফিজের সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’টা সেভাবে হয়নি বাংলাদেশের বাঁহাতি এ ওপেনারের, ‘বিপিএলে খেলা একমাত্র ম্যাচে ওর তৃতীয় বলেই আউট হয়েছিলাম। আম্পায়ার এলবিডাব্লিউ দিয়েছিলেন বলের ইম্প্যাক্ট অফস্টাম্পের বাইরে থাকা সত্ত্বেও। নেটে খেলেছি। তবে ও খুব সেয়ানা (হাসি), নেটে কাটার-মাটার দেয় না। যদি আমরা কাটার খেলা শিখে ফেলি!’
জাতীয় দলেই যখন এ ‘চর্চা’ রয়েছে মুস্তাফিজের সে ক্ষেত্রে হায়দরাবাদের পেসারদের ‘কাটার’ সম্পর্কিত টিপস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ নিয়ে দুর্ভাবনাও নেই মাশরাফি কিংবা তামিমের। বরং দূর থেকে টিভিতে আইপিএলের ম্যাচ দেখে বস্ফািরিত মাশরাফি, ‘ওর কাটার চেষ্টা করেও লাভ নেই। কাটার তো আমি কিংবা অন্য পেসাররাও করে।
কিন্তু মুস্তাফিজের হাতের গড়নটাই এমন যে বল ছাড়ার মুহূর্তেও আঁচ করা যায় না কী আসছে।’ গত ৯ বছর বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম বলের মুখোমুখি হওয়া তামিমের এ যুগের কোনো পেস বোলারকে খেলা বাকি নেই। সেই তিনিও বিস্মিত মুস্তাফিজের স্লোয়ার-কাটার দেখে, ‘স্লোয়ার দেওয়ার সময় বোলারের হাতের পজিশন কিংবা মুভমেন্টের পরিবর্তন চোখে পড়তে বাধ্য। কিন্তু মুস্তাফিজের বেলায় সব বলের অ্যাকশনই একই রকম। আমার মনে হয় এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে ওর পাওয়া উপহার।’
কিন্তু সময় যত গড়াবে, ততই তো কাটাছেঁড়া হবে মুস্তাফিজের বোলিংয়ের। বেশি পেছনে যাওয়ার দরকার নেই। ক্যারম বল নিয়ে আবির্ভূত অজন্তা মেন্ডিসের রহস্যভেদে বহির্বিশ্বের বেশি দিন লাগেনি। মুস্তাফিজের কাটার খেলার রেসিপিও একদিন ক্রিকেটের খোলাবাজারে পাওয়া যাবে?
তামিম প্রশ্নটা নিলেন ব্যাটসম্যানসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিতে, ‘দেখুন, আমি অনেক ভয়ংকর বোলারকে খেলেছি। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার মরনে মরকেল কিংবা ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে মরকেলের সাফল্য বেশি ওর অ্যাঙ্গেলের কারণে। তবে খেলতে খেলতে একটা সময় ওর জন্যও একটা প্ল্যান ঠিক করেছিলাম। কখনো সফল হয়েছি, কখনো ব্যর্থ হয়েছি। মুস্তাফিজকেও নিয়মিত খেলতে থাকা ব্যাটসম্যান একটা প্ল্যান বানিয়ে ফেলবে। আমি নিজে চাইব না মুস্তাফিজ আমার বিপক্ষ দলে খেলুক! তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তো সেরকম পরিস্থিতি আসতেই পারে। সেরকম হলে আমিও ওকে খেলার একটা ছক করে ফেলব। সেটা আক্রমণাত্মক হতে পারে কিংবা রক্ষণাত্মকও।’
কিন্তু মাত্র এক বছরে যে রংও বদলাচ্ছেন মুস্তাফিজ! এ পরিবর্তনটা গভীর আনন্দে পর্যবেক্ষণ করছেন মাশরাফি, ‘আইপিএলে দেখছি দারুণ সব ইয়র্কার মারছে মুস্তাফিজ। তার মানে, ও নিজেও নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে।’ বিষয়টি নজরে এসেছে তামিমেরও, ‘খেয়াল করে থাকবেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে মুস্তাফিজ শুধু স্লোয়ার দিত। এখন ইয়র্কার দিচ্ছে, বাউন্সারের ব্যবহারও শিখে যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই নতুন কিছু করার চেষ্টা দেখেই বোঝা যায় ছেলেটা খুবই বুদ্ধিমান। দেখেন, পেসারদের অস্ত্র ইনসুইং-আউট সুইং। ওয়াসিম আকরামও তা-ই করতেন। তবু অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে তিনি। মুস্তাফিজের পরিবর্তন দেখে তাই খুব ভালো কিছুর আশা করি।’
আশা তো পুরো দেশই করে। মাশরাফি নিজে যেমন কল্পনায় দেখতে পান, ‘ইনজুরিমুক্ত থেকে মুস্তাফিজ যদি বছর দশেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারে, তাহলে বিশ্বের সেরা বোলারদের একজন ও হবেই।’ সব সময় নিজেকে গ্রেটদের আয়নায় দেখা তামিমের প্রত্যাশা, ‘আরো একটা বছর যদি সমানতালে খেলতে পারে, তাহলে ব্যাটসম্যানদের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে মুস্তাফিজ। সে ধাপটা পেরোতে পারলে আমরা যাঁদের গ্রেট মনে করি, তাঁদের একজন হবে মুস্তাফিজ।’