শিল্পমন্ত্রীর ভাইয়ের দাপটে অস্থির! উপজেলা চেয়ারম্যান হতে মরিয়া-
লাবণ্য চৌধুরী : নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শিল্পমন্ত্রীর ভাইয়ের দাপটে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে সেখানে। ভুক্তভোগী অন্য প্রার্থীরা বলছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোটভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন।তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না।
দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনের মাঠে তার এই থেকে যাওয়া সুষ্ঠু বা প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তাদের আশা, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন তিনি।নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য। তিনি শিল্পমন্ত্রীর মেজভাই।
নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন ছাড়াও মনোহরদী উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আরও চারজন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ কুমার রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান রঙ্গু ও রাজধানী ঢাকায় আইন পেশায় যুক্ত মো. মাসুদুর রহমান।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোহরদী উপজেলায় টানা পাঁচবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুল ইসলাম খান। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার নাম বাদ দিয়ে শিল্পমন্ত্রীর ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদের নাম একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ।
কিন্তু কেন্দ্র থেকে তাকে না দিয়ে সাইফুল ইসলাম খানকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাইফুল ইসলাম খান। সাত হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। এবার আর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি তিনি।
চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বলছেন, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর দলীয় সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। কিন্তু শিল্পমন্ত্রীর ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ এখনো সরে না দাঁড়ানোয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ছেন সবাই। শিল্পমন্ত্রী নীরব থাকা সত্ত্বেও তার ভাই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন। মন্ত্রীর পরিবারেই যদি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদও চলে যায়, তাহলে আর অন্যদের রাজনীতি করে লাভ কী? শেষ পর্যন্ত নজরুল মজিদ মাহমুদ যদি ভোটের মাঠে থেকেই যান, তবে জোর করেই ভোট নিয়ে নেবেন তিনি, এমন ভীতি কাজ করছে ভোটারদের মধ্যে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান রঙ্গু বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মন্ত্রীর ভাই যদি উপজেলা নির্বাচন করেন, তবে খামোখা আমাদের নির্বাচন করে লাভ কী? তিনি ভোটারদের বলে বেড়াচ্ছেন, ভোট দিলেও আমি, না দিলেও আমিই উপজেলা চেয়ারম্যান। ভোট চাইতে গেলে ভোটাররা বলেন, ‘কেরে ঘুরেন, কষ্ট করেন? ভোট তো কেটেই নেবে। তা দিতে পারব এমন গ্যারান্টি দিতে পারবেন?’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ কুমার রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্য করার সাহস দলীয় কোনো নেতার আছে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩০ তারিখের মধ্যেই শিল্পমন্ত্রীর ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। এরই মধ্যে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে, ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার আশায় আছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফজলুল হক জানান, শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি। শিল্পমন্ত্রীর ছোটভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এখনো ভোটের মাঠে আছেন। আশা করছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে তিনি দ্রুতই সরে দাঁড়াবেন।
এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রীর ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন করব বলেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছি। মন্ত্রীর ভাই হিসেবে নয়, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনীতি করে আসছি। আমি আমার অবস্থান থেকেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছি। তাছাড়া নির্বাচন না করার ব্যাপারে দলীয় কোনো লিখিত নির্দেশনা পাইনি। সে কারণে আমার নির্বাচন করতে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
এ ছাড়াও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিয়েও ফোন রিসিভ হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন জানান, এ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কোনো চিঠি এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়েই পরবর্তী করণীয় নির্ধারিত হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ওই অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।