• শনিবার , ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শিক্ষায় ঘুষের রাজা আবুল কালাম আজাদ


প্রকাশিত: ৩:৪০ এএম, ২ অক্টোবর ২৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৩ বার


০০ নগদ ৫১ লাখসহ আড়াই কোটি টাকা ঘুষ
০০ তদবিরে বহাল ডিজি আবুল কালাম আজাদ

এস রহমান :  সেই ঘুষখোর শিক্ষাডিজি এখনো বহাল তবিয়তে। সব তদন্ত ধামাচাপা দিয়েছে বলেও বলে বেড়াচ্ছেন। তিনি অফিস করেন না, সব সময় মন্ত্রণালয়ে পড়ে থেকে সব ঘুষ হালাল করছেন। আড়াই কোটি ঘুষ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, এটা জমি বিক্রির টাকা। তো জমির বিক্রির টাকা এনজিওরা নিয়ে গেল কিভাবে? ভিডিওতে দেখা গেছে আপনার কল্যাণপুরের বাসার ড্রইংরুমে ব্যাগ থেকে টাকা বের করছে এনজিওর লোকরা? সব ১ হাজার টাকার বান্ডিল!‍ এ প্রশ্ন শুনে তিনি ভ্যাবাচেকা খাওয়ার মতো পরে কথা বলব বলে ফোন রেখে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘুষ নিয়ে এনজিও পার্টনার নিয়োগ দেন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদ। ভয়ংকর এই ঘুষখোরের নারী লাম্পট্যে এনজিও নারী কর্মীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। একাধিক নারী এনজিও কর্মী অভিযোগ করেছেন ডিজি লম্পট এবং লুচ্চামির শিরোমনিও। ডিজি কালামের চোখে পড়লে নাকি আর নিস্তার নেই। অথচ এই ডিজি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রকল্পের দায়িত্বে।

দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে জীবন-দক্ষতা ও মৌলিক সাক্ষরতা অর্জনে সহায়তা করতে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেই প্রকল্পে এনজিও পার্টনার নিয়োগ ও চুক্তি নবায়নের নামে আড়াই কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি তার কল্যাণপুরের বাসায় ৫১ লাখ টাকা নগদ লেনদেনের একটি ভিডিও ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। বাকি টাকা বিভিন্ন সময় এনজিওগুলোর কাছ থেকে নিয়েছেন তিনি। মহাপরিচালকের এমন বেপরোয়া দুর্নীতির হাত থেকে রেহাই পেতে গত রোববার (২৫ আগস্ট) প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছে কয়েকটি এনজিও। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেছেন, প্রত্যেকটি অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনুসন্ধান বলছে, গত ২৯ জুলাই ছাত্র বিক্ষোভের মধ্যে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বিটিআই লিগ্যাল হাইটস বিল্ডিংয়ে শিক্ষা ব্যুরোর ডিজির ফ্ল্যাটে যান ১৪টি এনজিওর কর্তাব্যক্তিরা। তাদের চুক্তি নবায়ন এবং নতুন করে পার্টনার না দেওয়ার জন্য ডিজিকে ৫১ লাখ টাকার ঘুষ দেন তারা। প্লাস্টিকের বাজারের ব্যাগে করে সেই টাকা ডিজির হাতে তুলে দেন। এসময় এনজিও কর্তাব্যক্তিদের বলতে শোনা যায়— স্যার টাকাটা গুনে নেন। ডিজি বলেন, আমি টাকা গুনে ঘুষ নিই না। এরপর তিনি সেই ব্যাগ নিয়ে ভেতরের রুমে চলে যান।

ভুক্তভোগী এক এনজিওপ্রধান দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান ডিজি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে পদায়ন পাওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ছয় মাস পরপর চুক্তি নবায়ন করতে হয়। আমাদের নবায়নের ফাইল এলেই আটকে দিতেন তিনি। নানা অজুহাতে ঢাকায় ডেকে ‍চুক্তি নবায়নের পাশাপাশি প্রত্যেক এনজিওকে নতুন করে ৩ থেকে ৮ জন পার্টনার এনজিও নেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। তার এই অনৈতিক চাপে দিশাহারা হয়ে আমরা ১৪ জন এনজিও কর্মকর্তা একসঙ্গে মিটিং করে চাহিদা অনুযায়ী ৫১ লাখ টাকা তার বাসায় দিয়ে আসি। লেনদেনের প্রমাণ রাখার জন্য গোপনে একটি ভিডিও করে রাখি।

এই ১৪টির বাইরে আরও একাধিক এনজিওর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, ডিজি দুইভাবে টাকা নিতেন। একটি চুক্তি নবায়ন আরেকটি পার্টনার নিয়োগের নামে। উনার ঘুষের আলাদা রেট ছিল। পার্টনার ৩ থেকে ৫ লাখ, চুক্তি নবায়ন দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া, পার্টনার নিতে না চাইলে প্রতি এনজিও থেকে ধরন অনুযায়ী নিতেন ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর নথিতে আছে, গত ২ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত অন্তত ৫১টি জেলার লিড এনজিওর কাছে পার্টনার নিতে চিঠি দেন বর্তমান ডিজি। প্রত্যেকটি চিঠিতে তার স্বাক্ষর রয়েছে। কোনো কোনো এনজিওকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে চিঠি দেন তিনি। এর মধ্যে পার্টনার না নিলে প্রকল্পের চুক্তি বাতিল এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

এরপরই মাঠপর্যায়ে এনজিওদের মধ্যে আতষ্ক সৃষ্টি হয়। তখন কর্মকর্তারা নানাভাবে যোগাযোগ করলে পার্টনার না নিলে ৩ থেকে ৫ লাখ, চুক্তি নবায়নে দুই লাখ টাকা বেঁধে দেন ডিজি। এরপর গত এক মাসে অন্তত ৪০টি এনজিও ডিজির বাসায় গিয়ে টাকা দিয়ে আসেন। এর মধ্যে ১৪টি এনজিও দিয়েছে ৫১ লাখ টাকা, যার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে।

এনজিও কর্ণধারদের দাবি, শুধু জুন-জুলাই মাসে চিঠি দিয়ে তিনি আমাদের কাছ থেকে কমপক্ষে আড়াই কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। একাধিক এনজিওপ্রধান বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর ডিজি বুঝতে পেরেছেন তিনি এখানে থাকতে পারবেন না। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে সাতদিনের মধ্যে পার্টনার নেওয়ার সময় বেঁধে দেন তিনি।
ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, জোর করে পার্টনার দেওয়ার কোনো বিধান নেই। তিনি যদি তা করে থাকেন সেটি বেআইনি। কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘুষ নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা ঘুষ দিয়েছেন তারা যদি অভিযোগ করেন দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।